১৪ আগস্ট থেকে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে খুব চর্চিত নাম হয়ে উঠেছেন দেবশ্রী রায়। বিজেপিতে শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের আনুষ্ঠানিক যোগদানের সামান্য আগেই নয়াদিল্লিতে বিজেপি সদর দফতরে সে দিন পৌঁছেছিলেন দেবশ্রী। তা নিয়ে ঝড় উঠে গিয়েছিল বিজেপি দফতরে। শোভনের সঙ্গে দেবশ্রীর সম্পর্ক এখন মোটেই ভাল নয়। তাই শোভনরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, দেবশ্রীকে বিজেপিতে নেওয়া হলে তাঁরা যোগদান করবেন না।
সেই থেকেই ঝুলে রয়েছেন দেবশ্রী রায়। এরপর তৃণমূল বিধায়ক হাজির হয়ে গিয়েছেন বিজেপি সদর দফতরে, দলবদল করতে চাইছেন, তার পরে বাধা পেয়ে ফিরে আসছেন— এই দৃশ্য সর্বসমক্ষে এসে যাওয়ার পরে সেই বিধায়কের অবস্থা তৃণমূলের অন্দরে কেমন হতে পারে, তা আঁচ করা শক্ত নয়। দেবশ্রীর এই কাণ্ড নিয়ে তৃণমূল খুব কঠোর কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি ঠিকই। কিন্তু দলের সঙ্গে রায়দিঘির বিধায়কের সম্পর্কের মাঝে যে বিস্তর অস্বস্তির পাঁচিল উঠে যাওয়াই স্বাভাবিক, তা নিয়ে এখন আর সংশয় থাকার কথা নয়।
২০১১ সালে সিপিএম হারিয়ে বাংলায় ক্ষমতায় এসেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনীতিতে একেবারে আনকোরা হয়েও সেইবছর অনেকেই আত্মপ্রকাশ করেছিলেন ‘জায়ান্ট কিলার’ হিসেবে। যাদের মধ্যে ছিলেন রায়দিঘির তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী রায়। গত দু’তিনটে সপ্তাহে যে পরিমাণ রাজনৈতিক তৎপরতা দেখিয়েছেন তিনি, তা দেখে অবাক হয়েছেন তাবড় রাজনীতিবিদরাও। রাজনীতির মাঠে তাঁর ব্যক্তিগত সক্রিয়তা দেখা গেল এই প্রথম বার। আর তৎক্ষণাৎই সব পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হল। দেবশ্রী রায় এখন ঘরেরও নন, বাইরেরও নন। তাই নিজের এই দশা কাটাতে মরিয়া হয়ে নিজের নাগালে থাকা সব দরজায় কড়া নাড়ছেন রায়দিঘির বিধায়ক।
বিগত ৮ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য দেবশ্রী রায়। গোটা দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এককালের দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিএম নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন যিনি, সেই কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়কে ২০১১ সালে হারিয়ে দিয়েছিলেন দেবশ্রী রায়। তদানীন্তন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রীকে যে দেবশ্রী হারিয়ে দেবেন, ভাবতে পারেননি সে বার অনেকেই। ২০১৬ সালে ফের টিকিট পান রায়দিঘি থেকে। সেবারও সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনি জেতেন।
রাজনীতির ময়দান না চেনা, নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্রের সঙ্গে সংযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন রাখা, বিধানসভায় প্রায় কোনও আলোচনায় অংশ না নেওয়া দেবশ্রী রায়ের এই সাফল্য তা হলে কোন পথে? তৃণমূলের অনেকেই এখনও স্বীকার করেন যে, দেবশ্রীর সাফল্য দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের তদানীন্তন সভাপতি তথা অধুনা বিজেপি নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কল্যাণে। শোভনের সঙ্গে অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল অভিনেত্রীর। তাই তাঁকে টিকিট পাইয়ে দেওয়া থেকে জিতিয়ে আনা, সবই সামলে নিয়েছিলেন শোভন। সেই শোভনের পথেই এখন সবচেয়ে বড় কাঁটা হয়ে উঠেছেন দেবশ্রী। তবে ঘটনাপ্রবাহ এইসময় এমন এক বাঁকে হাজির হয়েছে যে, রায়দিঘির বিধায়কের দুই কূলই এখন অনিশ্চিত।