প্রথম টেস্টে জোফ্রা আর্চারের বাউন্সারে মাথায় আঘাত পাওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে পারেননি স্মিথ। এমনকী, তৃতীয় টেস্টে তাঁকে খেলানোর ঝুঁকি নেয়নি অস্ট্রেলিয়া। ম্যাঞ্চেস্টারে ফিরে কিন্তু স্মিথ বোঝালেন, যতই কনকাসন হোক, তিনি ছন্দেই আছেন। টেস্টে নবাগত আর্চারের বাউন্সারও তাঁকে বিব্রত করতে পারেনি। তবে, এই টেস্টে ব্যাটিং করতে নামার সময় হেলমেট ও ঘাড়ের সংযোগস্থলে একটি বিশেষ গার্ড লাগিয়ে খেলতে নেমেছেন তিনি। চোট পেয়ে দলের বাইরে চলে যাওয়ার আগে যেখানে শেষ করেছিলেন স্টিভ স্মিথ, ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ঠিক যেন সেখান থেকেই শুরু করলেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চতুর্থ টেস্টের প্রথম দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়ার রান তিন উইকেটে ১৭০। স্মিথ অপরাজিত ৬০ রানে।
টসে জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক টিম পেইন। টসের পর তিনি জানালেন, তাঁর কাছে এটা সোজাসাপটা সিদ্ধান্ত। বিপক্ষ অধিনায়ক জো রুটও জানিয়ে গেলেন, টসে জিতলে তিনিও ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তই নিতেন। তবে পেইনকে সবথেকে বেশি উত্তেজিত দেখা গেল ‘বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান’ স্মিথকে দলে ফেরত পেয়ে। স্মিথই শুধু নয়, দলে ফেরত এসেছেন বোলার মিচেল স্টার্কও, যিনি এবারের অ্যাশেজে এখনও পর্যন্ত একটিও ম্যাচ খেলেননি।
খেলা তখন সবে ৩৮ মিনিট গড়িয়েছে। আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, ব্যাট হাতে নামতে দেখা যায় স্মিথকে। উল্টোদিকে দাঁড়িয়েছিলেন সেই জোফ্রা আর্চার, যাঁর বাউন্সারে আঘাত পেয়ে তৃতীয় টেস্ট খেলতে পারেননি স্মিথ। এই ম্যাচেও মাত্র তিনটে বল পরেই বিষাক্ত একটি বাউন্সার দিয়েছিলেন আর্চার। তবে স্মিথের এবার আর সেটা সামলাতে অসুবিধা হয়নি। উল্টে নিজের পঞ্চম বলে আর্চারকেই একস্ট্রা কভার দিয়ে বাউন্ডারি মেরে খাতা খোলেন স্মিথ। এরপর ক্রমশ ছন্দ পেতে শুরু করেন স্মিথ। বেন স্টোকসকে পুল করে সপাটে চার মারেন। উল্টোদিকে থাকা মার্নাস লাবুশানেও ততক্ষণে ছন্দে। ইংল্যান্ডের নবাগত বোলার ক্রেগ ওভারটনকে তিনিও স্কোয়ার ড্রাইভ করে বাউন্ডারির বাইরে পাঠান। দুই ব্যাটসম্যান মিলে অস্ট্রেলিয়াকে অনেকটাই টেনে তোলেন। যত সময়এগোচ্ছিল, তত শক্তিশালী দেখাচ্ছিল এই জুটিকে। লাবুশানে নিজের অর্ধ শতরানও পূর্ণ করে ফেলেন। ঘটনাচক্রে, এটি অ্যাশেজ সিরিজে তাঁর চতুর্থ অর্ধশতরান।
স্মিথের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে এখন উচ্চারিত হচ্ছে আরও একটি নাম- লাবুশানে। লর্ডসে, দ্বিতীয় টেস্টে স্মিথের বদলি হিসেবে পা দিয়েছিলেন টিমে। তার পর থেকে চারটে ইনিংস খেলেছেন। চারটে ইনিংসেই তাঁর নামের পাশে হাফ সেঞ্চুরি। ম্যাঞ্চেস্টারেও ৬৮ রান করেছেন। প্রশংসা কুড়োচ্ছেন লাবুশানেও। ২৫ বছরের ক্রিকেটারকে টিমের ব্যাকআপ ব্যাটসম্যান হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু সুযোগ পাওয়ার পর আর ফিরে তাকাননি। স্মিথের পর সবচেয়ে উজ্জ্বল নাম তিনিই। ১২৮ বল খেলে ৬৮ রান করে আউট হওয়ার আগে লাবুশানে আরও একবার প্রমাণ করেছেন নিজেকে। মেরেছেন ১০টা চার।
স্মিথের এই সিরিজে দুটি সেঞ্চুরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু চলতি অ্যাশেজ যেন ক্রমশ দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠছে ডেভিড ওয়ার্নারের কাছে। ব্রডের বিরুদ্ধে ক্রমাগত ব্যর্থ হচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার এই বাঁ হাতি ওপেনার। এ দিনও ব্রডের ইনসুইংয়ে (ওয়ার্নারের আউটসুইং) ব্যাট ছুঁইয়ে ফিরে গেলেন ওয়ার্নার। দু’বলের বেশি স্থায়ী হয়নি তাঁর ইনিংস। চলতি অ্যাশেজের সাত ইনিংসে এক বার মাত্র দু’অঙ্কের রান করতে পেরেছেন তিনি। পাঁচ বার ওয়ার্নারের উইকেট নিয়েছেন ব্রড।