প্রায় ছয় দশক ধরে শিক্ষকতা ও গবেষণার সঙ্গে জড়িত তিনি। প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসের ওপর বিশেষ দখল তাঁর। পেয়েছেন ইতিহাসের নোবেল’ বলে পরিচিত ক্লুগ পুরস্কারও। ‘এমেরিটা অধ্যাপিকা’ হিসেবে থেকে যাওয়ার জন্য এ হেন প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব তথা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপারের কাছে দিল্লীর জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বায়োডেটা চেয়ে পাঠানোকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে দেশজুড়ে। পক্ষে-বিপক্ষে শুরু হয়েছে বিতর্ক। এবার সেই বিতর্কে ঢুকে পড়লেন মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায়। শুধু বিতর্কে ঢুকলেনই না, রোমিলা থাপারকে ‘মুসলিম হামলাকারীদের অপকর্মের সমর্থক গোষ্ঠীর নেত্রী’ বলেও চিহ্নিত করলেন তিনি।
সোমবার দুপুর সাড়ে ৩ টে নাগাদ মেঘালয়ের রাজ্যপাল একটি টুইট করেন। তাতে কেমব্রিজের স্মাটস রিসার্চ ফেলো এডওয়ার্ড অ্যান্ডারসনের একটি টুইটকে ট্যাগ করে তিনি লেখেন, জেএনইউর মত সংস্থা চালাতে গেলে বেশ কিছু নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হয়। সেখানে দেখা হয় না ব্যক্তিটি কে। তাই তাঁর সিভি চেয়ে পাঠানোর ইস্যুতে এত বিরক্তি কীসের, তা আমি বুঝতে পারছি না। এখানেই না থেমে তথাগত আরও লেখেন যে, ‘ঘটনাচক্রে মুসলিম আক্রমণকারীদের অপকর্মের সমর্থক গোষ্ঠীর নেত্রী হিসেবেও তাঁর পরিচিতি রয়েছে।’ আর এরপরই শুরু হয়ে যায় সমালোচনার ঝড়। উল্লেখ্য, কেমব্রিজের অধ্যাপক তথা রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির ফেলো এডওয়ার্ড অ্যান্ডারসন, রোমিলা থাপারের পক্ষ নিয়ে একটি টুইট করেছিলেন।
সেই টুইটটিতে তিনি লিখেছিলেন, রোমিলা থাপার বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানীয় এবং বিশিষ্ট ভারতীয় ঐতিহাসিক। বিশ্বের যে কোনও সেরা বিশ্ববিদ্যালয় সানন্দে তাঁকে ফ্যাকাল্টি হিসেবে নিয়োগ করতে রাজি। কিন্তু তিনি তাঁর গোটা কর্মজীবন উৎসর্গ করেছিলেন দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয় এবং জেএনইউর জন্য। তথাগত অ্যান্ডারসনের সেই টুইটটিকে ট্যাগ করে যে আদতে জেএনইউয়ের তরফে রোমিলা থাপারের কাছে বায়োডেটা চেয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানাতে চেয়েছিলেন, তা স্পষ্ট। তবে তিনি আচমকা কেন মুসলিম আক্রমণকারীদের প্রসঙ্গ নিয়ে এলেন, তা নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, একটি রাজ্যের রাজ্যপাল দেশের অন্যতম সেরা ঐতিহাসিককে নিয়ে এমন মন্তব্য করতে পারেন কি?
প্রসঙ্গত, রাজ্যপালের আসনে বসার পরেও বারবারই বিজেপি নেতাদের মতোই আচরণ করেছেন তথাগত। এর আগেও বহুবার তাঁর টুইট বা মন্তব্য ঘিরে তৈরি হয়েছে একাধিক বিতর্ক। মাসখানেক আগে পাঠ্যক্রমে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার স্বপক্ষে বলতে গিয়ে তথাগত এই মন্তব্য করে বসেন যে, ‘বাঙালি মেয়েরা মুম্বইতে বার-ডান্স করতে পারলে হিন্দি শিখতে আপত্তি কীসের?’ যা নিয়ে দেশ জুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছিল। এছাড়াও কখনও জয় শ্রীরাম স্লোগানের পক্ষ নিয়ে জয় বাংলা স্লোগানের বিরোধীতা করে, কখনও আবার ইস্টবেঙ্গল ক্লাব নিয়ে বিভেদের রাজনীতি- একটি রাজ্যের সাংবিধানিক অভিভাবকের পদে থেকেও বারবারই শিরোনামে উঠে এসেছেন তিনি। সেই ধারা বজায় রেখেই এবার মোদী তথা বিজেপির কর্মপদ্ধতির কঠোর সমালোচক রোমিলা থাপারকে নিশানা করে নয়া বিতর্কের সৃষ্টি করলেন তিনি।