গঙ্গার তলা দিয়ে যাবে মেট্রো। দেশের ‘যমজ’ শহর কলকাতা-হাওড়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করার লক্ষ্যে এমনই পদক্ষেপ নিয়েছিল কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন বা কেএমআরসিএল কর্তৃপক্ষ। ভারতে এমন প্রকল্প এই প্রথম। তাই দেশজুড়ে, এমনকি বিদেশ থেকেও মিলেছিল প্রশংসা। তাতে সংস্থার আত্মবিশ্বাসও বেড়েছিল। বিনাবাধায় এগিয়েছিল সুড়ঙ্গের কাজ। কিন্তু বউবাজারের দুর্ঘটনার পরে এখন রেল কর্তারা ভাবছেন, সম্ভবত ওই আত্মবিশ্বাসই এখন কাল হয়েছে। গঙ্গা পার করে যত এগোবে সুড়ঙ্গ, দূরত্বের সঙ্গে সঙ্গে মাটির চরিত্রও যে বদল হবে, সেটা মাথায় রাখলেও, এক্ষেত্রে তার জন্য জোরদার আগাম সর্তকতা নেওয়া হয়নি। মেট্রো কর্তৃপক্ষের ধারণা, বিপত্তি ঘটেছে সেখান থেকেই।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ খোঁড়ার জেরে মঙ্গলবারও বউবাজারে বাড়ি ভাঙ্গা অব্যাহত। এদিন সকালেও দুর্গাপিতুরি লেনে ফাটল ধরা একটি বাড়ি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। এই ঘটনার পরে কার্যত গোটা মহল্লাটাই কেমন যেন বিধ্বস্ত এলাকায় পরিণত হয়েছে। এর পরেও যে আর কোনও বাড়ি ভেঙে পড়বে না এমন কোনও জোরালো আশ্বাস দিতে পারেননি ইস্ট-ওয়েস্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে ওই এলাকার মানুষের ভবিষ্যৎ এখন পুরোটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
কেন হল এমন পরিস্থিতি? এর উত্তরে ইতিমধ্যে দুটি মতবাদ উঠে এসেছে। কেউ কেউ বলছেন, এ প্রকল্প তৈরির আগে যে সমীক্ষা রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল, গলদ ছিল সেখানেই। রেলের এক পক্ষের বক্তব্য, ওই সমীক্ষা তাড়াহুড়ো করে পেশ করায় এখন পদে পদে বিপত্তি বাধছে। যেমন বিপত্তি হয়েছে কলকাতা মেট্রোর পাঁচটি প্রকল্পে। পদে পদে বিপত্তির জেরে ওই পাঁচটি প্রকল্প এখনও বিশ বাঁও জলে। এমনকি প্রযুক্তির হাল এমনই যে দমদম-নোয়াপাড়া-দক্ষিণেশ্বর প্রকল্পটিও শেষ করা যাচ্ছে না। ফলে সরকারের কোষাগারের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করেও কোনও সুবিধা দেওয়া যাচ্ছে না সাধারণ মানুষকে।
আবার অন্য পক্ষ বলছেন, এসপ্ল্যানেড থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত যে এজেন্সি সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ করছে তাঁদের পর্যবেক্ষণের গাফিলতিতেই এমন ঘটনা ঘটেছে। তাঁরা আগে থেকে সুরক্ষার ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। সুরক্ষার ব্যবস্থা ঠিকঠাক হলে বাড়ি ভাঙা আর ক্ষয়ক্ষতি আটকানো যেত। ইঞ্জিনিয়াররা বলছেন, যে মেশিনটির (টিবিএম) সাহায্যে সুড়ঙ্গ খোঁড়া হচ্ছে, সেটিকে ভিতরে বন্ধ করে বেশিদিন বসিয়ে রাখা যাবে না। তাতে আরও গোলমাল পাকিয়ে যেতে পারে। আবার মেশিনটিকে পিছনেও আর নিয়ে আসা সম্ভব নয়। সেটিকে তার পথ ধরে এখন এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ারদের চিন্তার বিষয় রয়েছে আর একটি। সব সময় একসঙ্গে দুটি সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়। আপ ও ডাউন। এখানেও সেটা হচ্ছিল। অল্প সময়ের মধ্যেই জল ঢুকে পড়া সুড়ঙ্গের পাশ দিয়ে আরেকটি টিবিএমও একই জায়গায় চলে আসার কথা। ফলে তখন কী হবে? এই মুহুর্তে এসব প্রশ্নের কোনো উত্তরই নেই কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশনের (কেএমআরসিএল) কর্তাদের কাছে। আপাতত তাঁরা এখন দিল্লি থেকে বিশেষজ্ঞ আসার অপেক্ষায়। তবে এই ঘটনায় ইস্ট-ওয়েস্ট প্রকল্পের ট্রেন চালানোর বিষয়টিও যে আপাতত বড় অনিশ্চয়তার মুখে, সেটাই ভাবাচ্ছে রেল কর্তাদেরই একটি বড় অংশকে।