নিজের দেশে তাঁকে ভালবেসে ‘ম্যান মাউন্টেন’ নামে ডাকা হয়। ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি লম্বা, ওজন ১৪০ কিলো। এর আগে ওজন ছিল ১৫০ কিলো। কোচের পরামর্শে পরে ১০ কিলো ওজন কমিয়েছেন তিনি। এমন উচ্চতা ও ভারী ওজনের শরীর নিয়ে জোরে বোলিং করতেন। শুভানুধ্যায়ীদের পরামর্শে অফ স্পিন বোলিং করতে শুরু করেছিলেন। আপাতত ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে আছেন অফ স্পিনার হিসেবেই। কিন্তু প্রথম ১১–য় জায়গা পাচ্ছিলেন না। রস্টন চেজের কাছে হেরে যাচ্ছিলেন। চেজ লম্বা, তাঁর মত নাদুসনুদুস পাহাড় নয়। অবশেষে জায়গা পেয়েছেন চলতি টেস্টে।
বব মার্লের শহরে পিট সিগারের গান নিয়মিত শোনা রাখিম ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩১৯তম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটের গ্রহে ঢুকে পড়লেন। চেজ দলে আছেন। তবু, দ্বিতীয় অফ স্পিনার হিসেবে রাখিম এলেন। কিছুই যখন হচ্ছে না, তখন একবার সুযোগ দিয়েই দেখা যাক না, এই যুক্তিতে ‘ম্যান মাউন্টেন’ ঢুকে পড়লেন প্রথম এগারোয়। আপনারা নিশ্চয়ই চলতি সিরিজে রাখিমকে দেখেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রিজার্ভ বেঞ্চে থাকা ক্রিকেটারদের সঙ্গে বসে থাকছিলেন। জলপানের বিরতিতে গলায় তোয়ালে ঝুলিয়ে হাতির মতো মৃদুমন্দ চালে মাঠের মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছিলেন। মজা লাগত বেশ। তিনি আসলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ নির্বাচকদের সমস্যায় ফেলে দিয়েছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলায়। আগের সফরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের হয়ে খেলার সময় তাঁর অফ স্পিন বোলিংয়ে পরাস্ত হয়ে ফিরে গিয়েছিলেন বিরাট কোহলি, অজিঙ্ক রাহানে ও চেতেশ্বর পুজারা।
লম্বা হওয়ায় অনেক ওপর থেকে বল ছাড়তে পারেন। উইকেট থেকে বাড়তি বাউন্স আদায় করে নিতে পারেন তাঁর অতিরিক্ত উচ্চতার জন্য। তবে ওজন কমানোর চেষ্টায় আছেন। কত আর কমাতে পারবেন? এ ক্ষেত্রে ইংরেজির সেই প্রবাদ মনে পড়ে যাচ্ছে— ‘স্কাই ইজ দ্য লিমিট’। অনেক, অনেক ওজন কমাতে হবে রাখিমকে, যদি তিনি নিয়মিত ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে চান। এই মুহূর্তে অবশ্য তাঁকে দেখামাত্রই হাস্যরোল শুরু হয়ে যাচ্ছে ক্রিকেট মাঠে। তবে, যে ধরনের নিষ্ঠা রাখিম দেখাতে শুরু করেছেন সম্প্রতি, তাতে বেশ ইতিবাচক ছাপ পাওয়া যাচ্ছে। জোরে বোলিংয়ের দেশে উঁচুমানের স্পিনার অন্তত পাওয়া যাচ্ছে, এটা ভেবে ল্যান্স গিবসের মতো অফ স্পিনাররা স্বস্তিবোধ করছেন। মিয়ামি থেকে ল্যান্স গিবস হাসতে হাসতে বললেন, ‘শুনেছি, এই ছেলেটি নিজের খেলার ব্যাপারে সিরিয়াস। যদি আন্তরিকভাবে ও চেষ্টা করতে থাকে, কে বলতে পারে, কয়েক বছরের মধ্যে ও আরও ভাল স্পিন বোলিং করতে পারবে না? এটা ভেতরের আগুনের ব্যাপার।’
পিট সিগারের ‘উই শ্যাল ওভারকাম’–এর মতো গানের শব্দগুলো নিজের মস্তিষ্কে নিয়ে ফেলেছিলেন রাখিম। প্রতিদিনই প্রত্যয় বাড়ছিল তাঁর। জাতীয় দলের হয়ে মেরুন টুপি মাথায় খেলতে নামতেই হবে, এটাই ছিল রাখিমের ধ্যান, জ্ঞান, স্বপ্ন। নিজে এক ‘পাহাড়’, এখন জাতীয় দলে ঢোকার জন্য নানা সমস্যার পাহাড় টপকে ফেললেন।’ সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজের টিম মিটিংয়ে ব্রায়ান লারার একটি বিশেষ বক্তব্য শোনা যায়। কঠোর পরিশ্রম করলে স্বপ্ন নাকি ধরা দেয়— ব্রায়ান লারার মুখে এ কথা শুনে রাখিম যেন আরও বেশি উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেছিলেন। আর তারপর অবশেষে অভিষেক। পেলেন নিজের কঠোর পরিশ্রমের পুরস্কার।