যোগী রাজ্য উত্তরপ্রদেশ। যে রাজ্য প্রায় সবসময়েই সংবাদ শিরোনামে থাকে। না সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যকলাপের জন্যে নয়। বরং মোদী সরকারের আমলে মানুষের দুর্দশার জ্বলন্ত চিত্র তুলে ধরে উত্তরপ্রদেশ। এবার ফের সামনে এল উত্তরপ্রদশের বেহাল চিত্র। আরও একবার প্রকাশ্যে এল যোগী সরকারের ব্যর্থতা। উত্তরপ্রদেশে দারিদ্রের কাছে গ্রামবাসীরা এতটাই অসহায়, যে পেটের তাগিদে সন্তানদের বন্ধক রাখতে বাধ্য হচ্ছেন বাবা-মা!
ঘটনাটি উত্তরপ্রদেশের শিবপুরী জেলার মুধেনি গ্রামের। দু’বেলা দু মুঠো ভাত যোগাতে যে গ্রামে নিজের সন্তানকে বন্ধক রাখতে বাধ্য হন তাঁদের বাবা-মা। সেখানকার এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, চার বা ছ’মাসের চুক্তিতে ওই গ্রামের নাবালক ছেলেদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় রাজস্থানে। সেখানে গবাদি পশু চরানো, পশুদের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করানো হয় তাদের দিয়ে। বিনিময়ে টাকা দেওয়া হয় ছেলেটির পরিবারকে। মুধেনি গ্রামের বাসিন্দা কৈলাস যেমন জানালেন, প্রতি বছর ছ’মাসের জন্য সন্তানকে পাঠিয়ে দেন। বিনিময়ে প্রতি মাসে টাকা পান।
বন্ধকের চুক্তি শেষ হলে যখন গ্রামে ফেরে ওই ছেলেমেয়েরা, তখন তাঁদের সারা গায়ে থাকে অত্যাচারের চিহ্ন। স্পষ্ট প্রকাশিত হয় অনাহারের চিত্র। হাড়ভাঙা পরিশ্রমের সঙ্গে জোটে মারধরও। এতেও অবশ্য বন্ধ হয়নি ভিন্ রাজ্যে শিশুদের বন্ধক দেওয়ার এই প্রথা। নিছক কাজে পাঠানোর সঙ্গে এর তফাত আছে। যে ক’মাসের চুক্তি হচ্ছে, সে ক’মাস ওই সন্তানের বিষয়ে কোনও খোঁজখবরও নিতে পারেন না বাবা-মা। শত অসুবিধাতেও ফিরিয়ে আনতে পারেন না সন্তানকে। মেলে না কোনও ছুটিও।
ঘটনাটি সামনে আসতেই রীতিমত আলোড়ন ফেলেছে চারপাশে। যদিও ঘটনার দায় এড়িয়ে গিয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। বরং সরকারি তরফে জানানো হয়েছে, গ্রামে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে কারোর অবস্থাই না খেয়ে থাকার মত নয়। লোভে পড়েই মা-বাবারা নিজেদের সন্তানকে বন্ধক রাখেন। কিন্তু এহেন মন্তব্য নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে শুরু হয়েছে বিতর্ক। প্রশ্ন উঠছে লোভে পড়ে নিজেদের সন্তানকে এভাবে বন্ধক রাখতে কি কেউ পারে? তবে নিজদের দায় যতই এড়ানোর চেষ্টা করুক যোগী সরকার, এই ঘটনা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে প্রমান করেছে মোদী জমানায় মানুষের হাল কিভাবে উত্তরোত্তর খারাপ হচ্ছে।