কলকাতা লিগে অবশেষে জয়ের সন্ধান পেল মোহনবাগান। গতকাল কল্যাণী স্টেডিয়ামে উড়ল সবুজ-মেরুন আবির। বিএসএসের বিরুদ্ধে পাসিং ফুটবলে জয়ের সুবাস এল মোহনবাগানে।
গতকাল কল্যাণী স্টেডিয়াম থেকেই শুরু হয়ে গেল রবিবারের ডার্বির প্রস্তুতি। এমনকি সাংবাদিক সম্মেলনে এসে কোচ ভিকুনাও বলে দিলেন, ‘‘তিন পয়েন্ট আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ বার আমার মাথায় আগামী তিন দিন থাকবে শুধুই ডার্বি।’’ মুখে যাই বলুন, মনে হল রঘু নন্দীর দলকে হারানোর পরের মিনিট থেকেই মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচের চিন্তায় ঢুকে পড়ছে বড় ম্যাচ।
তবে গতকালের জয় ছিল যথেষ্ট কষ্টার্জিত। সবুজ-মেরুনের স্প্যানিশ ব্রিগেডের কেউ নয়, ম্যাচের নায়ক পাহাড়ি মিডফিল্ডার নংডাম্বা নাওরেম। মোহন বাগানের এই লেফট উইং হাফ একটি গোল করলেন ও অপরটি করালেন। লিগে প্রথম জয়ের স্বাদ পেলেও ডার্বির আগে আক্রমণ ও রক্ষণ নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় থাকার কথা মোহন বাগান কোচ কিবু ভিকুনার।
৩০ মিনিটে গোল করে তিন মিনিট পরেই সেই গোল হজম। মোহন বাগানে রক্ষণের হলটা কী! গোল দিয়ে তা ধরে রাখতে পারার রোগ ক্রনিক হলে মুশকিল। স্প্যানিশ ডিফেন্ডার থাকলেও কিবু ভিকুনার দলের রক্ষণে কেউ নির্ভরতা দিতে পারছেন না। কার্ড সমস্যায় স্টপার কিমকিমা না খেলায় বুধবার কল্যাণী স্টেডিয়ামে বিএসএসের বিরুদ্ধে ম্যাচে মোহন বাগান কোচ ফ্রান মোরান্তের পাশে গুরজিন্দর কুমারকে খেলান। সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে লেফট ব্যাকে চুলোভার এদিন অভিষেক হল। তাতেও গোটা ম্যাচে সবুজ-রক্ষণ বারবার কাঁপিয়ে দিল রঘু নন্দীর প্রশিক্ষণাধীন বিএসএস স্পোর্টিং ক্লাব। আসলে মোহন বাগান অ্যাটাকে কোনও চাপ ছিল না। তার ফলে বিএসএস অ্যাটাকাররা বেশি জাঁকিয়ে বসেন। সবুজ-মেরুন স্ট্রাইকার সুহেরকে এদিন মাঠে খুঁজে পাওয়া যায়নি!
ম্যাচের চতুর্থ মিনিটে মোহন বাগান হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলে। বাঁদিক থেকে ইমরান খানের ফ্রি-কিক বক্সে হাতে লাগান বিএসএসের স্টপার বিকাশ সাইনি। রেফারি প্রাঞ্জল ব্যানার্জি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। ফ্রান্স গঞ্জালেজ মুনোজের স্পট কিক পোস্টে ধাক্কা খায়। তাই মোহন বাগানের কাঙ্খিত গোল আসে ৩০ মিনিটে। নাওরেমের ডানপ্রান্তিক ক্রস থেকে হেডে গোল করে মোহন বাগানকে এগিয়ে দেন সালভা চামোরো (১-০)। তিন মিনিট পরেই বক্সে জটলার মধ্যে গুরজিন্দরের পায়ে লেগে ছিটকে আসা বলে উইলিয়াম ওপোকুর শট বিএসএস’কে সমতা ফেরায় (১-১)। বিরতির ১-১ অবশ্য পরের অর্ধের শুরুতেই ২-১ হল। ব্রিটোর তোলা বলে হেড করে গোল করে গেলেন নওরেম। দু’বছর আগে ইন্ডিয়ান অ্যারোজের জার্সি পরে শিলং লাজংয়ের বিরুদ্ধে আট জনকে কাটিয়ে গোল করে দেশ-জুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন মণিপুরের এই মিডিয়ো। এ দিনও দুটো গোলের পিছনে ছিল ছোটখাটো চেহারার ছেলের অবদান। তিনিই ম্যাচের সেরা।
কোনও সন্দেহ নেই সবুজ-মেরুনের মাঝমাঠে মূল স্তম্ভ বেইতিয়া। ডার্বির জন্যে তাঁর অনুপস্থিতিতে তা বারবার বুঝিয়ে দিলেন বিএসএসের ফুটবলাররা। নদীর স্রোতের মতো মোহন বাগান বক্সে প্রতিপক্ষর আক্রমণ আছড়ে পড়ল। ২ মিনিটে চামারোর থ্রু ধরে সুহেরের শট বিএসএসের গোলরক্ষক সন্দীপ কুমার পালের গায়ে লাগে। ১১ মিনিটে বিএসএস প্রথম গোলের সুযোগ পায়। গুরজিন্দরের থেকে বল কেড়ে নিয়ে একা দেবজিৎকে সামনে পেয়েও ওপোকু তড়িঘড়ি করে বাইরে শট মারেন। ১৫ মিনিটে মোহন বাগান গোলরক্ষকের ভুল ক্লিয়ারেন্স ধরে ওপোকুর গোল করতে না পারাটাই আশ্চর্যের! সাত মিনিট পরেই কর্নার থেকে ওপোকুর হেড দেবজিৎ চাপড়ে বার করলে উজ্জ্বল হাওলাদার মিস করেন। এদিন কল্যাণীতে ম্যাচ শুরুর একটু আগে ঝিরঝিরে বৃষ্টি হলেও তারপর ঝকঝকে আবহাওয়া গোটা ম্যাচ জুড়ে। জেলার মাঠের গ্যালারিতে মোহন বাগান সমর্থকদের যথেষ্ট ভিড় ছিল। সবুজ মখমলের মতো এই মাঠে পজেশনাল ফুটবল খেলার পক্ষে আদর্শ। সেখানে মোহন বাগানের প্রান্তিক আক্রমণে দুর্বলতা বেশ স্পষ্ট। উইং ব্যাকরা ওভারল্যাপে যাচ্ছেন না। ময়দানের পোড়খাওয়া বিএসএসের কোচ রঘু নন্দী রক্ষণ জমাট রেখে প্রতি-আক্রমণে খেলার দিকে জোর দেন।