বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে মোদী সরকারের বাজেটে যেমন তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ঠিক তেমনই চাহিদার মানোন্নয়নেও কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে পারেনি কেন্দ্র। আর এই দুই কারণেই একদিকে যেমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে ভারতের শিল্প সংস্থাগুলোকে, তেমনি এই অবস্থায় কার্যত তলানিতে পৌঁছেছে পরিকাঠামো বৃদ্ধিও। দেশের এ হেন অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে আগেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। বলেছিলেন, সরকার খুব দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি একেবারে ধসে যাবে। এবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ার থেকে কেন্দ্রীয় খাতে নজিরবিহীন ভাবে অর্থ সাহায্য দেওয়ার প্রস্তাবে সিলমোহর পড়তেই, ফের মুখ খুললেন রাজন।
শীর্ষ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন এই কর্তার মতে, এই বাড়তি ভাঁড়ার কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে গেলে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ক্রেডিট রেটিং বা মূল্যায়ন কমতে পারে। প্রসঙ্গত, কাউকে ঋণ দেওয়া কতটা ঝুঁকির, তারই মূল্যায়ন হল এই ক্রেডিট রেটিং। অর্থাত্, রেটিং যত ভালো, তাকে ধার দেওয়ার ঝুঁকি তত কম। তাই রেটিং বাড়লে, তুলনায় কম সুদে ধার পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। কমে সুদের বোঝাও। রাজনের বক্তব্য, আরবিআইয়ের রেটিং ‘এএএ’ থেকে কমলে, সেক্ষেত্রে তাদের ধার নেওয়ার খরচ বাড়বে। যা পুরো অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। যদিও রিজার্ভ ব্যাংকের দাবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দাবি, এই ঝুঁকি সামাল দেওয়ার ক্ষমতা তাদের রয়েছে। তবে শুধু রাজন নন, অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ অনেকেই মনে করেন, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কে পুঁজি জোগানো ছাড়া এই টাকায় হাত দেওয়া উচিত নয়।
উল্লেখ্য, হাজারও টানাপোড়েনের পর সোমবার আরবিআই ঘোষণা করে, ১.৭৬ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি তারা সরকারকে দিতে রাজি। জালান কমিটির সুপারিশ মেনেই যে এই সিদ্ধান্ত, তা-ও উল্লেখ করা হয় আরবিআইয়ের বিবৃতিতে। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ সালের জন্য ১,২৩,৪১৪ কোটি টাকা যাবে ব্যাঙ্কের উদ্বৃত্ত (সারপ্লাস) থেকে। এর মধ্যে ২৮,০০০ কোটি টাকা অগ্রিম ডিভিডেন্ড হিসেবে দিয়ে দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই। হিসেব রয়েছে বাজেটে। বাকি ৫২,৬৩৭ কোটির উত্স ঝুঁকি সামলাতে তুলে রাখা টাকা। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ার থেকে এত বড় তহবিল অতীতে কখনও রাজকোষে ঢোকেনি। দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে সম্প্রতি যে সব পদক্ষেপের কথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সেই খরচের উত্স কি আসলে এই ভাঁড়ারই? তা নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা।