ব্যস্ততার শহরে ভর সন্ধ্যেয় জোড়া খুন। গতকাল চায়না টাউনে শ্বশুর ও পুত্রবধূকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল এলাকায়। দু’জনকে মাথায় ও মুখে অ্যালুমিনিয়মের বালতি দিয়ে আঘাত করে খুন করেছিল আততায়ী। ঘটনাস্থল থেকে সেই রক্তমাখা বালতিও উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্তে নেমেই পুলিশ খুঁজছিল এই ঘটনার পিছনে লুকিয়ে থাকা দোষীকে।তবে মাত্র কয়েকঘণ্টার মধ্যে চায়না টাউনে জোড়া খুনের ঘটনার কিনারা করল ট্যাংরা থানার পুলিশ৷ শ্বশুর-বউমার মৃতদেহ উদ্ধারের পরই পুলিশ ওই বৃদ্ধের ছেলেকে আটক করে৷ প্রথমে খুনের কথা অস্বীকার করলেও, দীর্ঘক্ষণ পুলিশি জেরায় ভেঙে পড়ে সে৷ স্বীকার করে নেয় স্ত্রী-বাবাকে নিজের হাতে খুন করেছে৷ আর কিছুক্ষণের মধ্যেই অভিযুক্ত ছেলে লি ওয়াং সাংকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ৷
সূত্রের খবর, শুরাত সাড়ে ৮টা নাগাদ চায়না টাউনের বাসিন্দা লি ওয়ান সং বাড়ি ফিরে দেখেন দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। সং পুলিশকে প্রথমে জানান, অনেক ডাকাডাকিতেও দরজা না খোলায় মই লাগিয়ে পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢোকেন তিনি। বাড়িতে বাবা লি কা সং (৯০) এবং স্ত্রী লি হাউ মেইহা (৬০) –কে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন ওয়ান। এর পর, তিনি ট্যাংরা থানায় খবর দেন। ঘটনাস্থলে আসে ট্যাংরা থানার পুলিশ এবং কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড বিভাগ। আসেন গোয়েন্দা প্রধান মুরলীধর শর্মাও।
কিন্তু, পাঁচিল ও খুনে ব্যবহৃত বালতির গায়ে রক্ত ও আঙুলের ছাপ, মোবাইল টাওয়ার লোকেশন এবং এলাকার সিসিটিভি দেখে শেষপর্যন্ত খুনের কিনারা করে পুলিস। অভিযুক্তকে শনাক্ত করে। ধৃতের বিরুদ্ধে আইপিসি ৩০২ (খুন), ৩০৭ (খুনের চেষ্টা) ও ৩২৬ (অস্ত্র দিয়ে মারাত্মক আঘাত) ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। আজই ধৃতকে শিয়ালদহ কোর্টে তোলা হবে। অন্যদিকে দেহ দুটির ময়নাতদন্তও আজই করা হবে।
দু’জনকে যে খুন করা হয়েছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন তদন্তকারীরা। তবে, লুঠ না ব্যক্তিগত আক্রোশ, খুনের পিছনে কারণ কী, তা নিয়ে প্রথমে ধন্দে ছিলেন তাঁরা। পুলিশি জেরায় বারবার বক্তব্য পাল্টাতে থাকেন সং। সন্দেহ বাড়তে থাকায় শেষ পর্যন্ত লি ওয়ান সং নামে ওই চিনা বংশোদ্ভূতকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, সন্ধে সাতটা নাগাদ স্ত্রীকে খুন করেছিলেন লি ওয়ান সং। নব্বই বছর বয়স্ক বাবাকেও রেহাই দেননি তিনি। বালতির আঘাতেও তাঁকেও খুন করা হয়। পুলিশের দাবি, এর পর বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন লি। ঘণ্টা দেড়েক বাদে ফের ফিরে আসেন। নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে পুলিশেও খবর দেন তিনি। পুলিশের অভিযোগ, অন্য দিকে তদন্তের মোড় ঘোরানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না।
কিন্তু কেন খুনের মত এরকম অপরাধ করলেন লি? তদন্তে জানা গেছে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন লি। তাই নিয়ে রোজ বাড়িতে স্ত্রী হাউ মি হায়ের সঙ্গে অশান্তি লেগেই থাকত। কালও অশান্তি বাঁধে। বচসা চলাকালীনই স্ত্রী হাউ মি হা-কে আঘাত করেন লি। বালতি দিয়ে স্ত্রীর মাথায় আঘাত করেন। ঘটনাস্থলেই রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন হাউ মি। ছেলের এই কীর্তি দেখে ফেলেন বাবা লি কা সাং। আর তারপর বাবার উপরও চড়াও হন লি। তাঁকেও একইভাবে আঘাত করেন। পুলিস জানিয়েছে, জেরায় খুনের কথা কবুল করেছে ধৃত।