ওসব গ্লোবাল ওয়ার্মিং ফোয়ার্মিং সব বাদ দিন। বিফের বেওসা কাকে বলে শুনুন। কারণ বেওসা চালায় বাজার আর বাজার ধম্মো ফম্মো তো বটেই, গোটা পৃথিবীটাকে নল্লি নিহারির মতো চুষে খেয়ে নিতে পারে। ওর সামনে একটা অরণ্য এমন আর কি।
ভয়াবহ এক আগুন লেগেছে আমাজন অরণ্যে। টানা তিন সপ্তাহ ধরে জ্বলছে। লেলিহান শিখা আর ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছে মহাকাশ থেকেও। আগুনের প্রকোপ এতটাই যে নিস্তার পায়নি ২৭০০ কিলোমিটার দূরের শহর সাও পাওলো ও।
আমরা যারা ছোটবেলা থেকে সাদা আর কালো এই দুভাগে জীবনটা ভাগ করে এসেছি, তাদের সাধারণ চোখে এটা একটা অগ্নিকান্ডের ঘটনা। আমাজনকে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস। পৃথিবীর ২০% অক্সিজেনই আসে এই অরণ্য অঞ্চল থেকে। সেখানে আগুন লেগেছে মানে আগামীতে আমাদের ভয়াবহ গ্লোবাল ওয়ার্মিং দেখতে হবে।
এবার সাদা আর কালোর মাঝে ও যারা সবকিছুতে ‘কেন, কিভাবে’ খোঁজে বা বিশ্বাস করে সবকিছুর পেছনে বাজার আর রাজনীতি আছে, তারা জানতে পারলাম যে এই আগুনটা লাগানো হয়েছে। রাষ্ট্র, রাষ্ট্রপতির প্রচ্ছন্ন মদতে বিফের বেওসা চালিয়ে যেতে। আজ্ঞে! বিফ, মানে গরু বা মোষের মাংস৷
ব্রাজিল পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বিফ রফতানি করে। টন কে টন বিফ গোটা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্যাকেটবন্দি হয়ে চলে যায়। লক্ষ কোটি ডলারের ব্যবসা। তার পরে ও জোগান দেওয়া যায় না। এতো চাহিদা এই সস্তায় পুষ্টিকর প্রোটিনের।
ব্রাজিলের প্রধানত বিফ ব্যবসায়ীরা গরু পালন করার জন্য জমি দীর্ঘদিন ধরে চেয়ে আসছে সরকারের থেকে। কিন্তু জমি তো আলাদিনের প্রদীপ ঘোঁষলে আসেনা। তাই তা তৈরি করতে হয়। এ ক্ষেত্রে আমাজন জ্বালিয়ে তা হলো। সেদেশের রাষ্ট্রপতি ও কাটমানি পেয়ে খুশি। আমরা ভাবলাম প্রকৃতি রুষ্ট হয়েছে।
মাথায় আসতেই পারে যে পাগল ও তো নিজের ভালো বোঝে তা এরা বুঝলো না? যদি বুঝতোই তবে আর বেওসাদার আর স্বপ্নদর্শীর মধ্যে ফারাক রাখা হতো কেন? তবে আর মাটির নিচের সমস্ত জল কোকাকোলা বানিজ্যিক কারণে শুষে নিতো কেন। তবে আর প্লাস্টিক মাফিয়ারা গোটা পৃথিবী জুড়ে রাজ করতো কেন। তবে আর খনিজ সম্পদ লুটে পুটে শেষ করতো কেন
কর্পোরেটগুলো। তবে একটা ও গাছ না লাগিয়ে মুনাফা বৃদ্ধি করতে চাইতো কেন এসি কোম্পানিগুলো। স্প্যানিশ ভাষায় একে বলে “কে সেরা সেরা”! যা হবে তা দেখা যাবে ক্ষণে।
গোরক্ষক আর শ্রীরামের পোলারা এতোটা শুনে নিশ্চিত ঢাল তলোয়ার নিয়ে ব্রাজিলের প্লেনের টিকিটের দাম দেখছেন। ওদেশটাকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার একটা ইচ্ছে নিশ্চয়ই হচ্ছে। যারা গরু কাটবে বলে, গরু পালন করে, তার জন্য জমি বানায় অরণ্য অঞ্চল জ্বালিয়ে পুড়িয়ে, তারা তো শত্তুর ৩৩ কোটি দেব দেবীর নাকি? ব্রাজিলের জনসংখ্যাই ২১ কোটি।
ব্রাজিল পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বিফ রফতানি করে। টন কে টন বিফ গোটা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্যাকেটবন্দি হয়ে চলে যায়। দ্বিতীয় বৃহত্তম বিফ রফতানি করে যে দেশ তার নাম ভারতবর্ষ। এখান থেকে ও কোটি কোটি টাকার বিফ মুসলিম দেশগুলোতে যায়। এসব রফতানি করে যারা তারা কিন্তু বেশীরভাগ হিন্দু। নাম শুনলে চোখ কপালে উঠবে।
আমরা যারা বিশ্বাস করি সবকিছুর পেছনে বাজার আর রাজনীতি আছে তারা জানি যে এই দেশে যে বিফকে নিয়ে রাজনীতি, ফুড হ্যাবিটস এ গরুর মাংস না রাখার নিষেধাজ্ঞা তার একটা অর্থনীতি ও আছে। রাজনীতিতে ম্যারিনেট করা বেওসা যাকে বলে।
গোটা পৃথিবীর গরীব মানুষের জন্য আজ ও গরুর মাংস সস্তায় এ ক্লাস প্রোটিন খাওয়ার একটা উপায়৷ এরচেয়ে ও বেশি উন্নত প্রোটিন বাঘের মাংস বা ঘোড়ার মাংসে কিন্তু সেটা খাওয়া যায় না। গরু খাওয়া যেতো। কিন্তু দেশের বেশীর ভাগ মানুষ যদি কোন পন্য বেশী কিনতে শুরু করে তার চাহিদা বাড়বে দেশের মধ্যে। দাম ও বাড়বে, উৎপাদন ও বাড়াতে হবে। রফতানি কমবে। কিন্তু রফতানিতে পয়সা বেশী যে। তাহলে হাতে রইলো দুটো রাস্তা। এক ব্রাজিলের মতো এলাকা তৈরি করো অরণ্য অঞ্চল জ্বালিয়ে যাতে আরো গরু পালন করা যায় ব্যবসায়িক ভাবে নয়তো এমন একটা পরিস্থিতি গোটা দেশে তৈরি করা হোক যাতে কেউ কেনা তো দূরের কথা, কাটা ও অপরাধ মনে করবে। দরকার পরলে পিটিয়ে মেরে দেবে মানুষকে। এতে সেই পন্যের দাম তলানিতে ঠেকবে। রফতানি হবে ৯০% আরো অনেক অনেক বেশী মুনাফায়।
কিছু বুঝলেন লালমোহন বাবু? আমার, আপনার, তোপশের, ক্যাপ্টেন স্পার্ক, হিজিবিজবিজ, গন্ডারিয়া, হনুমান, রামচন্দ্র, মছলিবাবার উপরে ও কারা ছড়ি নাড়াচ্ছে? কারা ধর্মকে নিয়ে ব্যাবসা করছে? কারা পৃথিবীকে একটু একটু করে খুন করছে বিপুল টাকার জন্য? পক্ষ নেবেন না দুর্ধর্ষ দুশমনকে নিকেশ করতে না স্রেফ #PrayForAmazon বলেই খালাস হবেন?
বলি প্রে বা প্রার্থনা করে আজ পর্যন্ত কোন মারণ রোগ নিরাময় হয়েছে?
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত