গ্রেফতারির আশঙ্কা ছিলই। অবশেষে দিনভর নাটকের পর সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বুধবার রাতেই গ্রেফতার করা হয় প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে। এই মুহূর্তে সিবিআই হেফাজতে থাকা চিদম্বরম যখন আইনি সুরাহার পথ খুঁজছেন, তখন তাঁর বিরুদ্ধে আরও মারাত্মক কিছু তথ্য সামনে আনতে চাইছে সিবিআই। শুক্রবার সিবিআইয়ের তরফে ৫টি দেশকে বিচারবিভাগীয় অনুরোধপত্র পাঠানো হয়েছে। আইএনএক্স মিডিয়ার টাকা লেনদেনের যাবতীয় হিসেব এবং প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম ও তাঁর ছেলে কার্তি বিদেশে কোথায় ভুয়ো সংস্থা খুলেছেন, তা জানতেই ব্রিটেন, সুইৎজারল্যান্ড, বারমুডা, মরিশাস ও সিঙ্গাপুরে সাহায্য চেয়ে ‘লেটার্স রোগেটরি’ পাঠানো হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রের খবর। পিতা-পুত্রের ওই সব দেশে কোনও ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট থাকলে, তারও তথ্য চাওয়া হয়েছে।
চিদম্বরমকে আগামী সোমবার পর্যন্ত হেফাজতে রেখে সিবিআই জানতে চাইছে, আইএনএক্স মিডিয়া গোষ্ঠীর মতো আরও কোনও সংস্থাকে বিদেশি লগ্নির ছাড়পত্র পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে চিদম্বরম ও কার্তি ঘুষ নিয়েছিলেন কি না। তাদের সন্দেহ, অন্তত চারটি ক্ষেত্রে তাঁরা ঘুষ নিয়েছেন। বিদেশের ভুয়ো সংস্থায় ঘুষের টাকা জমা পড়েছিল। গতকাল এই সব বিষয়ে সিবিআই সদর দফতরের এগারো তলায় আর্থিক অপরাধ দমন শাখায় চিদম্বরমকে জেরা করেছেন অফিসারেরা। অন্যদিকে, দিল্লি হাইকোর্টে আগাম জামিনের আর্জি খারিজের পরে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন চিদম্বরম। আদালত জানিয়েছে, সোমবার ফের শুনানি হবে। তবে তাঁকে ততদিন অর্থাৎ ২৬ আগস্ট পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারবে না এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি)।
গতকাল এক নির্দেশে এই রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আর ভানুমতী এবং এ এস বোপান্নার বেঞ্চ। যদিও তাতে চিদম্বরমের সুবিধা হচ্ছে না। কারণ ওই দিন পর্যন্ত তিনি সিবিআই হেফাজতেই থাকছেন। গতকাল শীর্ষ আদালতের বিচারপতিরা মেনে নিয়েছেন যে, আইএনএক্স মামলার তদন্তে সাহায্য করছেন চিদম্বরম। তবে ইডির মামলায় তাঁর কিছুটা রেহাই মিললেও সিবিআইয়ের মামলা প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেননি বিচারপতিরা। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, সিবিআই ও ইডি, উভয় মামলা নিয়েই আবেদনের শুনানি হবে ২৬ আগস্ট। গতকাল শুনানির সময় চিদম্বরমের আইনজীবী কপিল সিবাল ও অভিষেক মনু সিংভির সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা।
সুপ্রিম কোর্টে তুষার মেহতা বলেন, চিদম্বরম তাঁর ‘মানসিক দক্ষতা, আইনি ও রাজনৈতিক জ্ঞান’ কাজে লাগিয়ে তদন্তকারীদের প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছেন। তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করা না-হলে সত্য জানা যাবে না। দিল্লী হাইকোর্টের বিচারপতি সুনীল গউরের রায় প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, “হলফনামা ছাড়া ইডির দেওয়া নোট রায়ে ‘কাট-পেস্ট’ করা হলে আর জামিন কী করে মিলবে?” অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির কথায়, ‘ওই বিচারপতি সংসদকে সুপারিশ করেছেন, বড় মাপের আর্থিক অপরাধীদের জন্য আগাম জামিন তুলে দেওয়া হোক। অর্থাৎ, আর্থিক সঙ্গতির সঙ্গে সাংবিধানিক অধিকারও বদলাবে?’
আবার আদালতকে দেওয়া আবেদনে চিদম্বরমের বক্তব্য, গ্রেফতারির সময় নিয়ম অনুযায়ী গ্রেফতারির কারণ-সহ মেমো দেখাতে পারেনি সিবিআই। এমনকী গ্রেফতারির গ্রহণযোগ্য কারণ দেখানো হয়নি। বরং তাঁকে বলা হয়েছে, দিল্লী হাইকোর্টের নির্দেশে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু, তিনি আগেই সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। অন্যদিকে, প্রাক্তন আইএনএক্স কর্ত্রী ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের দাবি, তাঁদের ব্যবসায়িক বেনিয়ম মিটিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে চিদম্বরম কার্তিকে ঘুষ দিতে বলেছিলেন। সিবিআই সূত্রের খবর, সোমবারের মধ্যে সময় পেলে চিদম্বরমকে মুম্বই নিয়ে গিয়ে ইন্দ্রাণীর মুখোমুখি বসানো হবে। কার্তি ও ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে চিদম্বরমের সঙ্গে ঘুষের টাকার সরাসরি যোগসূত্র তুলে ধরাই সিবিআইয়ের প্রধান লক্ষ্য। তাই ৫ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে পেয়ে ইতিমধ্যেই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রীকে বিস্তর জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে তারা।