ইস্ট-মোহন ডার্বি বাঙালির কাছে রূপকথার থেকে কম কিছু নয়। এই একটা দিন গোটা বাংলা ভাগ হয়ে যায় দু-ভাগে। একদল ইস্টবেঙ্গল, আরেকদল মোহনবাগান। ডার্বি নিয়ে লিখতে বসলে উপন্যাস নয়, একটা মহাকাব্য রচিত হয়ে যাবে। এই ম্যাচ যেমন একটা খেলোয়াড়ের জীবন গড়ে দেয়, তেমনই তছনছ করে দেয় আরেক খেলোয়াড়ের জীবন। কেউ হয় হিরো, আবার কেউ হয়ে যায় জিরো। বড়দের মুখে এমন কত ডার্বির কথা শুনতে শুনতে চোখের সামনে জলজ্যান্ত হয়ে ভেসে উঠেছে। কিন্তু স্মারক হিসাবে সেই ডার্বির টিকিট কি বাড়িতে আছে? শতকরা ৯০ ভাগ সমর্থকের থেকে উত্তর আসবে, ‘নেই!’ থাকবেই বা কী করে? সমর্থকদের রেখে দেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও আইএফএ বা এআইএফএফের বদান্যতায় সেটা সম্ভব হয়নি।
গতবছর অবধিও আইএফএ’র লক্ষ্মী ভাণ্ডার ফুলে ফেঁপে ওঠার এই ম্যাচ ঘিরে কত অযত্নই না করেছে সংস্থা। মাঠ যখন ভরে যাচ্ছে তখন অন্য কিছু ভেবে লাভ কী! কিন্তু ভারতীয় ফুটবলের সেরা ব্র্যান্ড ডার্বিকে সমাজের নানা স্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার ভাবনা ছিল না। ডার্বিকে বাংলার ব্র্যান্ড হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা কোনও মহল থেকে হয়নি। এর আগে বিশেষ চেষ্টা বলতে ম্যাচের আগেরদিন দুই প্রধানের কোচ আর ক্যাপ্টেনকে ঘিরে আইএফএ-তে একটা নিরামিশ সাংবাদিক সম্মেলন।
তবে এইবছর আমূল পরিবর্তন ঘটেছে বাংলার সর্বোচ্চ ফুটবল নিয়ামক সংস্থায়। বদল ঘটেছে ওয়ার্কিং বডিতে। উৎপল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছেড়ে যাওয়া সচিবের চেয়ারে বসেছেন ময়দানের পরিচিত মুখ জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। আর আইএফএর চেয়ারে বসার এক মাসের মধ্যেই ১ সেপ্টেম্বর লিগের ডার্বিকে বানিজ্যকরণ করার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছেন তিনি। সঙ্গে ডার্বির আগেই ফুটবল আর গ্ল্যামারের সহাবস্থান। ফুটবল জগতের বাইরের মানুষ মানসিকভাবে যেন জড়িয়ে পড়েন ১ সেপ্টেম্বরের ডার্বিতে। যার শুরু ৩০ আগস্ট থেকে। শুরুতেই ভাবনার বদল ডার্বির টিকিটকে কেন্দ্র করে। আইপিএল বা আইএসএলে যেমন ম্যাচ টিকিট থাকে, লিগের প্রথম ডার্বিতে তেমনই টিকিট আনছে আইএফএ। যা স্মারক হিসাবে যে কেউ নিজের কাছে রেখে দিতে পারেন। তার জন্য এই প্রথম ডার্বির টিকিট ব্র্যান্ডিং হচ্ছে।
সচিবের দায়িত্ব নিয়ে ময়দানের ক্যান্টিনগুলির দেনা মিটিয়েছেন জয়দীপ। সঙ্গে ডেকরেটার্সের পাওনাও। এবার ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা ডার্বি থেকে। আর বাংলার ফুটবলকে বাণিজ্যকরণ করতে ডার্বির চেয়ে বড় অস্ত্র এখন নেই জয়দীপের হাতে। তাই এভাবেই তিনি ধীর অথচ দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে চাইছেন, যাতে আইএফএ’র বিশাল দেনা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
বাঙালির যে ডার্বি নিয়ে এত উত্তেজনা, যেই ম্যাচের টিকিট নিয়ে এত মারামারি, সেই টিকিটের জন্য যে স্পনসর পাওয়া যেতে পারে, এতদিন সেই কথা কেউ ভাবেননি। নতুন আইএফএ সচিব যখন ডার্বির টিকিট ব্র্যান্ডিং করার জন্য পরিকল্পনা নিলেন, স্পনসরশিপ পেতে অসুবিধা হল না। তাই এবারই প্রথম ডার্বির টিকিট ব্র্যান্ডিং হচ্ছে। তাতে বদলে যাচ্ছে ডার্বির টিকিটের চেহারা। ম্যাচ ১ সেপ্টেম্বর। যা দুই প্রধানকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারি তরফে অনুমতিও মিলেছে। আইএফএ’র পরিকল্পনা একদিন আগে নয়। ডার্বির উত্তেজনা ফেরাতে দু’দিন আগে থেকেই মাঠের বাইরে খেলা শুরু হয়ে যাবে।
দুই প্রধানকে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন ৩০ আগস্ট। সাংবাদিক সম্মেলন হবে শহরেরই এক পাঁচতারা হোটেলে। যেখানে কোচ, ফুটবলারদের পাশে থাকবেন টলিউডের গ্ল্যামার জগতের লোকজন। ডার্বির সাংবাদিক সম্মেলনে থাকবেন বলে কথা দিয়েছেন টলিউডের নায়ক এবং ঘাটালের তৃণমূল সাংসদ দেব। সঙ্গে থাকবেন আরও তারকা, যাদের নাম এখনই প্রকাশ করতে চাইছে না আইএফএ। সেদিনের অনুষ্ঠানটি ঘিরে গ্ল্যামারের ছটা বিচ্ছুরণের ভাবনাও হয়েছে সংস্থার তরফে। যেখানে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ থাকবেন।