একের পর এক বল দুর্বার গতিতে এসে আছড়ে পড়ছে ব্যাটসম্যানের হেলমেটে। কোনও বল ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিবেগে, কোনোটা আবার ১৪০ কিলোমিটার। কোনও বল আবার ১৫৫ কিলোমিটার গতিতে বেরিয়ে যাচ্ছে ব্যাট ঘেঁষে। শর্ট লেগ, লেগ স্লিপ রেখে শরীর লক্ষ্য করে বোলিং চলেছে। নিজের অভিষেক টেস্টে এমনই আগুনে গতিতে অজি ক্রিকেটারদের লক্ষ্য করে বল করেছেন জোফ্রা আর্চার যে, অনেকের মনেই ফিরে এসেছে বডিলাইন সিরিজের স্মৃতি। আর তাই ইংল্যান্ডের এই পেসারকে নিয়ে সাড়া পড়ে গিয়েছে গোটা ক্রিকেটবিশ্বে।
আর্চারকে দেখার পরে চুপ করে থাকছেন না মাইকেল হোল্ডিংয়ের মতো প্রাক্তন পেসারও। তিনি মনে করেন, আধুনিক ক্রিকেটে ফাস্ট বোলিংয়ের সংজ্ঞাটাই বদলে দেবেন আর্চার। এই ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি বলেছেন, ‘‘গতিই পুরুষদের থেকে বাচ্চাদের আলাদা করে দেয়। ওই রকম কোনও গতির বোলার যখন উল্টো দিক থেকে বল করতে আসে, তখন পরিষ্কার হয়ে যায় কারা ওর বিপক্ষে খেলার জন্য তৈরি আর কারা নয়। এই ছেলেটা কিন্তু আধুনিক ক্রিকেটে ফাস্ট বোলিং নিয়ে ধ্যান ধারণাটাই বদলে দেবে।’’
নিজের অভিষেক টেস্টে আর্চার এমন একটা ওভার করেন যার গড় গতি ছিল ৯২.৭৯। ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে এত দ্রুত গতিতে আর কোনও বোলার বল করেননি। হোল্ডিং বলেছেন, ‘‘ঘণ্টায় ৮৫ মাইল গতিতে বল আমরা মাঝেমধ্যেই দেখে থাকি। কিন্তু যখন দেখা যায় কেউ ৯৫ মাইল গতিতে বল করছে, তখনই বোঝা যায় সত্যিকারের গতি কাকে বলে। খুব কম ব্যাটসম্যানই আছে যারা এ ধরনের বোলারের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগের দিন রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোবে।’’
শুধু হোল্ডিংই নন, আরও এক প্রাক্তন ক্যারিবিয়ান পেসার উচ্ছ্বসিত আর্চারকে নিয়ে। তিনি ইয়ান বিশপ। তবে তিনি ইংল্যান্ড টিম ম্যানেজমেন্টকেও সতর্ক করে দিয়েছেন আর্চারের ব্যাপারে। বিশপ টুইট করেছেন, ‘‘খেলাটার স্বার্থেই আর্চারের পরিশ্রমের মাত্রার উপরে বিশেষ নজর রাখতে হবে ইংল্যান্ড এবং ক্যাপ্টেন জো রুটকে। ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁসকে মেরো না’ এই কথাটা তো আমরা সবাই জানি।’’ মাইকেল ভনের মতো প্রাক্তনও মনে করেন, আর্চারের ক্ষমতা আছে ইংল্যান্ডকে ম্যাচ জেতানোর। প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক গতকাল টুইট করেছেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়া হয়তো সিরিজে ১-০ এগিয়ে আছে। কিন্তু আমার মনে হয় আর্চার একাই সিরিজের ছন্দটা বদলে দিয়েছে।’’ কেভিন পিটারসেন থেকে মাইক আথারটনও মুগ্ধ আর্চারের এই ভয়ঙ্কর আগুনে বোলিংয়ে।
আর যাকে নিয়ে এত হইচই পরে গেছে ক্রিকেট মহলে, সেই জোফ্রা আর্চার নিজে কী বলছেন? জানা গেছে, তিনি একটা ভিডিও টুইট করেছেন। যেখানে দেখা যাচ্ছে, এক জন বয়স্ক লোক বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছেন। একইসঙ্গে আর্চার লিখেছেন, ‘‘টেস্টের পরের দিন আমার অবস্থা!’’ তাঁর এই টুইট দেখার পর অজি ব্যাটসম্যানরা আদৌ স্বস্তিতে থাকবেন কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।