অ্যাশেজে আতঙ্ক। শনিবার জোফ্রার একটি ঘাতক বাউন্সার আছড়ে পড়ে স্টিভ স্মিথের ঘাড়ে। আঘাত পাওয়ার পরেই মাঠে শুয়ে পড়েন স্মিথ। প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ককে তখনই ড্রেসিংরুমে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ৪৫ মিনিট বিশ্রাম নেওয়ার পরে ক্রিজে এসে আরও ১২ রান যোগ করে ৯২ রানে আউট হন স্মিথ। কিন্তু সাবলীল ব্যাটিং করতে অসুবিধা হচ্ছিল তাঁর। শনিবার সারা রাত পর্যবেক্ষণের মধ্যে থাকতে হয় স্মিথকে। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের মেডিক্যাল টিম বিবৃতিতে বলে, ‘‘আমাদের প্রতিনিধিরা সারা রাত ওর উপরে নজর রেখেছে। স্মিথের ঘুম খারাপ হয়নি। কিন্তু সকালের দিকে খুব একটা স্বাভাবিক ছিল না। হঠাৎই সংজ্ঞা হারায় স্মিথ। ওর ঝিমুনি ভাব এখনও রয়েছে।’’
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, “স্মিথের যা হয়েছে, চিকিৎসায় যদি সেরে যায়, ঠিক আছে। না হলে, প্যারালিসিস, অ্যামনেশিয়া, এমনকী প্রাণ সংশয় হতে পারে। যদি ব্যাপারটা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে না যায়, অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, বর্ণ-গন্ধ-স্পর্শের প্রতি সংবেদনশীলতা হারায় আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে। এমআরআই এবং সিটি স্ক্যানের প্লেট দেখলে বোঝা যাবে আঘাত কতটা গুরুতর। তবে, সেই আঘাত পরবর্তী ৭২ বা ৯৬ ঘণ্টায় কতটা গুরুতর হয়ে উঠতে পারে, তার আভাস পাওয়া মুশকিল। এই ধরণের ঘটনা স্মিথের কেরিয়ারে ছাপও ফেলতে পারে”।
অস্ট্রেলিয়ার মেডিক্যাল দল এখনই আশ্বাস দিতে পারছে না ২২ অগস্ট থেকে শুরু হতে যাওয়া তৃতীয় টেস্টে স্মিথকে পাওয়া যাবে কি না। রবিবারই স্মিথের স্ক্যান হওয়ার কথা। তার ফলের উপরেই অনেকটা নির্ভর করছে স্মিথের অ্যাশেজ-ভবিষ্যৎ। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘দ্বিতীয় ও চতুর্থ টেস্টের মধ্যে বেশি সময় নেই। তার মধ্যে যদি লক্ষ্য করা যায়, স্মিথ পুরোপুরি সুস্থ তা হলে তৃতীয় টেস্ট খেলতে ওর সমস্যা হবে না। কিন্তু আরও ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখার পরেই তা বলা সম্ভব। সেই সঙ্গে আজ স্ক্যানের রিপোর্টের উপরে সেই সিদ্ধান্ত অনেকটা নির্ভর করছে।’’ আইসিসি এবং ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নিয়ম অনুযায়ী মাথা অথবা ঘাড়ে গুরুতর আঘাত পেলে প্রায় পাঁচ দিন পর্যবেক্ষণে থাকতে হয় সেই ক্রিকেটারকে।
স্মিথ নিজে যদিও জানিয়েছেন, হেডিংলে টেস্টে নামতে তাঁর অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। রবিবার সকালে স্মিথ বলেন, ‘‘পরের পাঁচ দিন পর্যবেক্ষণে থাকার কথা। যদি ওরা মনে করে আমি ফিট, তা হলে তৃতীয় টেস্ট খেলতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। প্রত্যেক দিন দু’বার করে আমাকে পরীক্ষা করা হবে। আশা করি, সুস্থ হতে দিন দুয়েকের বেশি সময় লাগার কথা না। তবে এই আচ্ছন্ন ভাব যত দিন কাটিয়ে উঠতে না পারছি, তত দিন মাঠে নামার ঝুঁকি নেব না।’’
জোফ্রার এরকম অবস্থা হওয়ার ফলে রবিবার তাই ম্যাচ রেফারি রঞ্জন মদুগলে বাধ্য হন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ‘কংকাশান সাব’ ব্যবহার করার অনুমতি দিতে। দ্বিতীয় টেস্টে স্মিথ আর নামতে পারলেন না। পরিবর্ত হিসেবে তাই বেছে নেওয়া হয় মার্নাস লাবুশানেকে। ১ অগস্ট থেকে এই নতুন নিয়ম শুরু করেছে আইসিসি। টেস্ট চলাকালীন কোনও ক্রিকেটার সংজ্ঞা হারালে তাঁকে বিশ্রাম দিয়ে পরিবর্ত ক্রিকেটার নেওয়া যাবে। প্রথম একাদশের ক্রিকেটার হিসেবেই ব্যবহার করা হবে পরিবর্ত এই ক্রিকেটারকে। এ দিন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে চার নম্বরে স্মিথের পরিবর্তে ব্যাট করলেন লাবুশানে। ক্রিকেটের ইতিহাসে তিনিই প্রথম ‘কংকাশান সাব’। কিন্তু তিনিও আর্চারের বাউন্সার থেকে রেহাই পাননি। অ্যাশেজের প্রথম রান করার আগেই তাঁকে বাউন্সারে স্বাগত জানান আর্চার। হেলমেটে আছড়ে পড়ে সেই বাউন্সার। যদিও তাতে বড় কোনও সমস্যা হয়নি