সুষমা স্বরাজের আকস্মিক প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা দেশ। আর চিরবিদায়ের সময় যত এগোচ্ছে ততই যেন শোকের চেহারাটা একটু একটু করে বাড়ছে। বুধবার, বেলা ১২টা নাগাদ বাসভবন থেকে সুষমার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বিজেপির সদর দফতরে। সেখানে বেশ কিছু ক্ষণ শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য রাখা ছিল দেহ। তারপর, বিকেলে তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় লোদি ঘাটে।
এদিন সুষমাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সকালেই তাঁর বাসভবনে উপস্থিত হন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, লালকৃষ্ণ আডবাণী, মনমোহন সিংহ, সনিয়া গাঁধী এবং রাহুল গাঁধী-সহ বহু শীর্ষস্থানীয় নেতা-নেত্রীরা। মঙ্গলবার রাতে সুষমার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে নরেন্দ্র মোদী টুইট করেন, “ভারতীয় রাজনীতির একটা গৌরবময় অধ্যায় শেষ হয়ে গেল।” অমিত শাহ বলেন, “ওঁর মৃত্যু গোটা দেশের রাজনীতির পক্ষে অপূরণীয় ক্ষতি। গত পাঁচ বছরে বিদেশমন্ত্রী হিসেবে গোটা বিশ্বে দেশের খ্যাতি বাড়িয়েছেন সুষমা।” অন্য দিকে, বিজেপি প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী বলেন, “সুষমাজির সঙ্গে দীর্ঘ দিন কাজ করেছি। ৮০-র দশকে যখন দলের সভাপতি ছিলাম, সে সময়েই তাঁকে আমার দলে এনেছিলাম। ধীরে ধীরে দলের অন্যতম জনপ্রিয় নেত্রী হয়ে উঠেছিলেন।”
প্রয়াত নেত্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এ দিন তাঁর বাসভবনে যান বিজেপি নেতা মুক্তার আব্বাস নকভি, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী, তামিলনাড়ুর উপমুখ্যমন্ত্রী পনিরসেলভম, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল, উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসৌদিয়া, বিএসপি নেতা রামগোপাল যাদব, তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। অরবিন্দ কেজরীবাল বলেন, “ভারত এক মহান নেতাকে হারাল। সুষমাজি খুব ভাল মানুষ ছিলেন। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।” অন্য দিকে, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সুষমা স্বরাজের মৃত্যুতে আমি মর্মাহত।তাঁকে ১৯৯০ সাল থেকে জানি। আমাদের মধ্যে মতাদর্শগত পার্থক্য থাকলেও, সংসদে আমরা একসঙ্গে অনেক ভাল সময় কাটিয়েছি। উনি একজন অত্যন্ত ভাল মানুষ এবং রাজনীতিক ছিলেন।”
সুষমার মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের নেতারাও। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং, ভারতে নিযুক্ত ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত রন মালকা, চিফ একজিকিউটিভ অব দ্য ইসলামিক রিপাবলিক অব আফগানিস্তান আবদুল্লা আবদুল্লা।
শোক প্রকাশ করেছেন বলিউড অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন, অক্ষয় কুমার, রবিনা ট্যান্ডন এবং আশা ভোঁসলে-সহ আরও অনেকেই। অক্ষয় কুমার বলেন, “এক জন প্রাণবন্ত নেতা ছিলেন সুষমা স্বরাজজি। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি।” শোক প্রকাশ করেছেন বিরাট কোহালি, সচিন তেন্ডুলকরও। সচিন বলেন, “নারীশক্তির এক জন আইকন ছিলেন সুষমা স্বরাজ।”
মৃত্যুর খবর পেয়েই মঙ্গলবার রাতে এইমস-এ যান রাজনাথ সিংহ, নির্মলা সীতারামন, রবিশঙ্কর প্রসাদ, স্মৃতি ইরানি, হর্ষবর্ধন, প্রকাশ জাভড়েকরের মতো বিজেপির শীর্ষ নেতারা। রাতেই সুষমার মরদেহ যন্তরমন্তর রোডের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সুষমার বাড়িতে যান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। এছাড়াও সেখানে গিয়েছিলেন বহুজন সমাজ পার্টির সুপ্রিমো মায়াবতী, কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উম্মেন চান্ডি এবং যোগগুরু রামদেব। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে জানা গেছে, রাস্ট্রীয় মর্যাদাতেই সম্পন্ন হবে সুষমা স্বরাজের শেষকৃত্য।