জল্পনা চলছিল বেশ কয়েকদিন ধরেই। কাশ্মীরের ভবিষ্যত কি হবে সেই নিয়ে তোলপাড় হচ্ছিল সংসদও। শেষমেশ সমস্ত জল্পনাকে সত্যি করে সোমবার বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়া হল জম্মু-কাশ্মীরের। বিলোপ ঘটল ৩৭০ ধারার। মোদী সরকার যেভাবে সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করেছে তা নিয়ে দেশজোড়া সমালোচনার ঝড় তো বইছিলই, এবার এর প্রতিক্রিয়া দেখা গেল বিদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলিতেও। বিভিন্ন সংবাদপত্রে বড় হেডলাইনে ছাপা হয়েছে ওই খবর। দেশের মোদী সরকার যেভাবে রাতারাতি কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করেছে, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখকে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করছে, তাতে সমালোচনা করেছে অনেক সংবাদপত্রই। তাদের সম্পাদকীয় কলমে মোদী সরকারের এই পদক্ষেপের নানা দিক খতিয়ে দেখা হয়েছে।
আমেরিকার ওয়াশিংটন পোস্ট সংবাদপত্রে লাফায়েত্তি কলেজের অধ্যাপক হাফসা কাঞ্জওয়াল লিখেছেন, মোদী সরকার সংবিধান বিরোধী কাজ করেছে। খুব পরিকল্পিতভাবে একটি রাজ্যে হিন্দুদের সংখ্যাগরিষ্ঠ করে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। তাঁর লেখায় আছে, ভারতীয়রা এখন কাশ্মীরে জমি কিনতে পারবেন। স্থানীয় মানুষকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। ইজরায়েল যেভাবে প্যালেস্তিনীয়দের তাড়িয়ে দিয়েছে, সেই একই পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত। সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য কাশ্মীরে বিরাট সংখ্যক সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। তাদের সংখ্যা ৫০ লক্ষের বেশি। কাশ্মীরের বিরাট এলাকা জুড়ে তৈরি হয়েছে মিলিটারির ক্যান্টনমেন্ট, ক্যাম্প। বিজেপির বহুদিনের পরিকল্পনা হল, সেখানে অনেক হিন্দুর বসতি করানো। যাতে রাজ্যের সংখ্যাগুরু মুসলিম জনতার রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষাকে সহজে দমন করা যাবে।
ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় কাশ্মীর নিয়ে লিখেছেন সাংবাদিক জ্যাসন বার্ক। তাঁর ধারণা, কাশ্মীরের যুবকরা আগামী দিনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। ন’য়ের দশকে কাশ্মীরে অনেক খুনখারাপি হয়েছে। তরুণ প্রজন্ম বড়দের মুখে সেই ভয়াবহ দিনগুলির গল্প শুনেছে। যারা ন’য়ের দশকের হানাহানি দেখেছে, তারা সহজে কোনও সশস্ত্র গোষ্ঠীতে যোগ দেয়নি। কিন্তু এখনকার যুবকরা তাদের মতো নয়। এর পরিণতি কাশ্মীর ও ভারতের পক্ষে হয়তো ভালো হবে না। আবার আল জাজিরা টিভিতে রাজনীতি বিশেষজ্ঞ আথের জিয়া বলেছেন, ৩৭০ ধারার বিলোপ করে হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে আরও এক ধাপ এগোল মোদী সরকার। তা নিয়ে মোদী ১৫ অগাস্টের ভাষণে আস্ফালন করবেন। তাঁর দক্ষিণপন্থী সরকার দাবি করবে, তারা হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছে। মোদী সকলকে বোঝাতে চাইবেন, তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করতে ভীত নন।