ক্যানভাসের সামনে বেড়ে ওঠা এক জীবন। তুলির রঙেই জীবন চিত্র আঁকা। মুগ্ধ হয়ে যেতে হয় সেই আঁকিবুকির টানে। ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে কিভাবে যে মুহুর্ত চলে যাবে তা দর্শকরা বুঝতেই পারবেন না। আর যাঁর আঁকা নিয়ে কথা হচ্ছে তিনি একজন বিংশ শতাব্দীর সেরা চিত্রশিল্পী। পাবলো পিকাসো। তাঁর তুলি যেন ক্যানভাসে কথা বলে। জীবন্ত হয়ে ওঠে তাঁর সৃষ্টিগুলো। একজন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারে তাঁর সৃষ্টি।
১৩ বছর বয়সেই তাঁর মধ্যে এই প্রতিভার আভাস পান তাঁর পিতা। বলা চলে পিতার হাত ধরেই এই চিত্র জগতে তাঁর হাতেখড়ি। শোনা যায়, ১৩ বছর বয়সে তিনি তাঁর পিতার এক অসমাপ্ত কাজ এত নিখুঁতভাবে শেষ করেন, যা দেখে হতবাক হয়ে যান তাঁর পিতা। ১৯ বছরে তাঁর কাজের মধ্যে দিয়েই চিত্র সমালোচকদের নজরে পড়েন তিনি। তারপর ধীরে ধীরে দীর্ঘ অধ্যাবসায় ও প্রতিভার গুনে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পড়েছিলেন তিনি।
বলা চলে তাঁর ধ্যান জ্ঞান সবই ছিল চিত্র দ্বারা পরিবেষ্টিত। আর সেই পরিবেষ্টন এত দৃঢ় ছিল যে তা ভেদ করে অন্যকিছু প্রাধান্য পায়নি। রাতে যখন সারা শহর ঘুমের চাদরে মুড়ি দিত তখনই জেগে উঠত তাঁর তুলি। আর সারা রাত চলত ক্যানভাসের সঙ্গে কথোপকথন। তাঁর আঁকার স্টুডিওতে তাঁর অনুমতি ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারতো না। তিনি চাইতেন তাঁর অন্তত এতটুকু টাকাপয়সা থাকুক যাতে করে তাঁকে জাগতিক বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে না হয়। ৫০ হাজারেরও বেশি চিত্রকর্ম রয়েছে পিকাসোর। শুধু চিত্র নয় পাশাপাশি ভাস্কর্যও তৈরি হত তাঁর হাতে।
পিকাসোর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য, তিনি চিত্রকর্মের প্রত্যেক পর্যায়ে তার আগের পর্যায় থেকে সরে এসেছেন। সব সময় সচেতন অথবা অবচেতনভাবে এক একটা পর্যায়কে ভেঙে আর এক পর্যায়ে গেছেন। তাঁর চিত্রকর্মের সঙ্গেই তাঁর গভীর আত্মিক যোগ ছিল। আগাগোড়া এক শিল্পীর জীবন তিনি কাটিয়ে গেছেন। তাঁর প্রত্যেকটা ছবির মধ্যেই পাবলো পিকাসোকে খুঁজে পাওয়া যায়। শুধু তুলি নয়, কলমও কথা বলেছিল তাঁর হাতে। তাঁর কলমের আঁচড়ে বেরিয়েছিল কবিতার ছন্দ। এই বহুমুখী প্রতিভার কাছে আজও বিশ্ব মাথানত করে। শিল্পীর জীবনে তাঁর অধ্যাবসায়ের গল্প অনুপ্রেরণা জোগায়। চিত্রের মন্দিরে অন্যতম দেবতা তিনি। তাঁর কাজের মধ্যে দিয়ে আজও তিনি বেঁচে আছেন বিশ্ববাসীর অন্তরে।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত