কিছু মানুষ পৃথিবীতে আসেন আবার চলে যান। কিন্তু তাঁদের জীবনদশায় এমন এক গল্প তৈরি করে দিয়ে যান তাঁরা, যেটা তাঁদেরকে ঈশ্বরের আসনে নিয়ে চলে যান। তাঁদের প্রতিভা মানুষকে ভাবায়, আনন্দ দেয়, কাঁদায়। আবার স্বপ্নের সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। মানুষ তাঁদের এই সাফল্যকে মনে রেখে দেন চির তরে। কিন্তু এই ঈশ্বররা কি একদিনে সেই স্থানে পৌঁছে যান? চাঁদের আলোই আমরা দেখতে পাই। সেই আলোয় আলোকিত হই, তবে তাঁর আড়ালের অন্ধকার আমাদের অগোচরেই থেকে যায়।
প্রতিদিনের এক কঠোর জীবনযাপন, অধ্যাবসায়ের মধ্যে দিয়েই সাধারণ মানুষ অসাধারণ হয়ে ওঠেন। সেইরকমই এক ব্যক্তিত্ব হলেন উলফগ্যাং এমাদিউস মোজার্ট, জগতের সবচেয়ে বিখ্যাত মিউজিশিয়ান এবং কম্পোজার। জগতজুড়ে জীবনে একবার না একবার সবাই মোজার্টের নাম শুনেছেন। তাঁর সৃষ্টির সঙ্গে পরিচিত। সেই ব্যক্তির দৈনন্দিক জীবনের টানাপোড়েন অজানা অনেকেরই।
তিনি নিজেকে কিভাবে প্রতিদিন তৈরি করেছেন তার এক আভাস পাওয়া যায় তাঁরই লেখা এক চিঠিতে। ১৭৮২ সালে বোনকে লেখা এক চিঠি সামনে আসায় জানা যায় তাঁর দৈনন্দিক জীবনের ধারণা। সেখান থেকেই জানা যায়, সকাল ৭ টার মধ্যেই তৈরি হয়ে ৯ টা পর্যন্ত কম্পোজের কাজে লিপ্ত থাকতেন তিন। তারপর দুপুর ১ টা পর্যন্ত তাঁর ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নিতেন তিনি। তারপর নিজের বিশ্রামের জন্য কিছুটা সময় বার করে নিতেন তিনি। যদি কনসার্ট না থাকত তা হলে রাত ৯ টা পর্যন্ত চলত তাঁর কম্পোজের কাজ। যদি কনসার্ট না থাকত থাকত তা হলে কনসার্টের পর কম্পোজের কাজ চলত রাত একটা পর্যন্ত। তাঁর কথা থেকে জানা যায় যে কম্পোজ না করলে তাঁর ঘুম আসত না।
এই থেকেই স্পষ্ট তাঁর জীবনে গানের বাইরে আর কিছুই ছিল না। তাঁর অধ্যাবসায় ছিল চোখ ধাঁধানো। এই কঠোর পরিশ্রমই তাঁকে স্মরণীয় করে রেখেছে মানুষের মনে। কিন্তু জীবনকালে তাঁকে বহুবার বহু বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। মোজার্ট জীবনের প্রথম সিম্ফনী রচনা করেন মাত্র আট বছর বয়সে। মোজার্ট যখন সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে জার্মানী এসে প্রথম রোমান এম্পেররে যোগ দেন, তখন তাঁর সঙ্গীত প্রতিভায় সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ হয়েছিলেন সেখানকার তৎকালীন প্রধান অপেরা কম্পোজার এন্তোনিও সালিয়েরী। তবে মোজার্টের প্রতিভায় সালিয়েরী যতোটা না মুগ্ধ হয়েছিলেন, তার চেয়ে বেশি হয়েছিলেন ঈর্ষান্বিত। সেই ঈর্ষা বারবার তাঁকে এগিয়ে চলার পথে বাঁধার সৃষ্টি করেছে। সেই বাঁধাও তিনি কাটিয়ে উঠেছিলেন তাঁর অসাধারণ প্রতিভা দিয়ে। তবে তাঁর শেষ জীবন ছিল বহু কষ্টের। দৈন্যতা তাঁকে গ্রাস করেছিল। আজ তাঁর লক্ষাধিক অনুগামী থাকলেও তাঁর শেষ যাত্রা ছিল নিঃসঙ্গপূর্ন। ৩৫ বছর বয়সে যখন তাঁর জীবন থেমে যায় তখন তাঁর সঙ্গী ছিল মাত্র ছয়-সাতজন।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত