৭ দফায় বঙ্গে শেষ হয়ে যাবে তৃণমূল। এই ছিল বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের হুঁশিয়ারি। কিন্তু মুকুলের সেই হুঁশিয়ারির পর সময় গড়িয়েছে কিন্তু দফা আর এগোয়নি। বরং তৃণমূল ভাঙিয়ে মুকুল রায় যে কাউন্সিলরদের বিজেপিতে এনেছিলেন, তাঁদের অনেকেই দলকে চরম অস্বস্তিতে ফেলে পুরনো দলে ফিরে যেতে শুরু করেছেন। এই পরিস্থিতিতে বেজায় বিড়ম্বনায় পড়েছে গেরুয়া শিবির। শুরু হয়ে গিয়েছে দলের মধ্যে অন্তর্কলহও। শুধু তাই নয়। ইতিমধ্যেই আড়াআড়ি ভাবে বিভক্ত রাজ্য বিজেপি।
দুজনেই মিতভাষী। সংবাদমাধ্যমে খুব দেখা যায় না তাঁদের। দলের সংগঠন রক্ষায় পর্দার আড়ালের দুই অতন্দ্র প্রহরী প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুব্রত চট্টোপাধ্যায় এবার একে অপরের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত। দলকে না জানিয়ে অন্য দল থেকে আসা নেতাদের দিল্লিতে গিয়ে বিজেপিতে যোগদানের চলতি বিতর্কে পরস্পর বিরোধী মন্তব্য করেছেন রাজ্য বিজেপির সংগঠনের অন্যতম দুই কাণ্ডারী। সুব্রত যেখানে বলছেন, রাজ্য নেতৃত্বের অনুমোদন ছাড়া দিল্লীতে কোনও যোগদান হবে না। সেখানে প্রতাপের বক্তব্য, দিল্লীতে যোগদানে দলের তরফে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই!
প্রসঙ্গত, রাজ্যের একগুচ্ছ নামি-অনামি নেতা রাজ্যের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং মুকুল রায়ের নেতৃত্বে দিল্লীতে দিন দয়াল উপাধ্যায় মার্গে বিজেপির সদর দফতরে গিয়ে দলের পতাকা তুলে নিয়েছেন। কিন্তু অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট জেলা বা মণ্ডলের নেতৃত্ব কিছুই জানে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও যোগদান সম্পর্কে কিছুই জানেন না। যেমন, বীরভূমের তৃণমূল কংগ্রেস নেতা মনিরুল ইসলাম দিল্লীতে বিজেপিতে যোগদান করবেন, সে খবর জানতেনই না দিলীপ।
এরপরই মুকুল এবং তাঁর হাত ধরে দলে যোগ দেওয়া নেতাদের নিয়ে ক্ষোভের আগুন গোটা পদ্মবনে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে সুব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্যস্তর এবং জেলাস্তরের নেতাদের কি কোনো সম্মান নেই? তাদেরকে না জানিয়েই দিল্লীতে যোগদান হয়ে যাচ্ছে। এটা চলতে পারে না। ‘এনাফ ইজ এনাফ’। আমরা পরিষ্কার বলে দিয়েছি, রাজ্যকে না জানিয়ে, স্থানীয় সংগঠনকে না জানিয়ে দিল্লীতে কোনও যোগদান হবে না।” তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘আমরা অনেক সহ্য করে নিয়েছি। যে পারছে সেই বলছে, দিল্লীতে গিয়ে পতাকা নেব। এর থেকে ওর থেকে পতাকা নেব। এসব আর মানা যায় না।’
অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে ভিন্নমত প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি মনে করেন, ‘সুব্রত চট্টোপাধ্যায় যা বলেছেন তা তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। এটা দলের বক্তব্য নয়।’ প্রতাপ বলেন, ‘রাজ্য দলের এই রকম কোনও সিদ্ধান্তের কথা অন্তত আমি জানি না। আমার সামনে হয়নি।’ দিল্লীতে যোগদান করানোর বিষয়ে তাঁর সাফ কথা, ‘দিল্লিতে যোগদানে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। যোগদানে সব সময় দলকে জানানোরও প্রয়োজন নেই।’ কিন্তু প্রতাপ যাই বলুন না কেন, রাজ্য বিজেপির অন্দরে জোর খবর, কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং মুকুল রায় জুটির সঙ্গে দলের একাংশের মতবিরোধ চরমে উঠেছে। যার ফলে এবার বাতিল করা হয়েছে মুকুলের ‘রাজধানী এক্সপ্রেস’ও।
প্রসঙ্গত, রবিবার মুকুলের নেতৃত্বে আলিপুরের কিছু নেতা বিজেপিতে আসার জন্য তৈরি হয়েছিল। কিন্তু মুখ পোড়ার ভয়ে সেই যোগদান কর্মসূচী বাতিল করে দেওয়া হয়। জানা গেছে, রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের আপত্তিতে সেই যোগদান শেষ পর্যন্ত হতে পারেনি। অভিযোগ, দলের স্থানীয় নেতৃত্বকে না জানিয়েই মুকুল ওই যোগদান প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে যাচ্ছিলেন। জানতেন না দিলীপও। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য বিজেপি নেতারা বলছেন, মুকুলের এ হেন ক্রিয়াকলাপে দলে অরাজকতা তৈরি হচ্ছে। রাজ্য নেতৃত্ব এমনকী রাজ্য সভাপতির অজ্ঞাতেই দিল্লীতে নিয়ে গিয়ে একাধিক বিধায়ক, কাউন্সিলরকে দলবদল করিয়েছেন মুকুল।