তিনি ‘আগুনপাখি’। সর্বদাই সততার পক্ষে। গানকে হাতিয়ার করেই দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছেন তিনি। তবে এর পাশাপাশি নচিকেতা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত কাছের লোকও। প্রতি বছরই তাঁর গান মাতিয়ে দেয় ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চ। কিন্তু সম্প্রতি নচিকেতার ‘কাটমানি’ গান প্রকাশ হতেই সৃষ্টি হয় চরম জল্পনা। তার ওপর বাবুল সুপ্রিয়র মতো বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা গানটি নিজেদের টুইটারে শেয়ার করায় এবং তাঁকে গেরুয়া শিবিরে আহ্বান জানানোর পরই বাড়তে থাকে ধোঁয়াশা। তবে বিজেপি নেতারা তাঁর গানের ভুল ব্যখ্যা করছে বুঝতে পেরেই এবার মুখ খুললেন দিদির অন্যতম প্রিয় এই সঙ্গীতশিল্পী। তিনি যে এখনও মমতা অনুরাগীই, তা বোঝাতে নচিকেতা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘দিদি ডাকলে আমি নরকেও যেতে পারি।’
প্রসঙ্গত, দিনকয়েক আগেই তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় কাউন্সিলরদের উদ্দেশ্যে এই বার্তা দিয়েছেন যে, সরকারি প্রকল্পের সুবিধা মানুষকে দিতে গিয়ে কোনও রকমের কাটমানি নেওয়া চলবে৷ নিয়ে থাকলেও তা ফেরৎ দিতে হবে জনগণকে। মমতার এ হেন সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েই কাটমানি খাওয়ার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন ‘আগুনপাখি’। তাঁর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই লিখে ফেলেছিলেন ‘কাটমানি’ গানটি। যার ছত্রে ছত্রে রয়েছে, ‘খেয়েছেন যারা কাটমানি, দাদারা অথবা দিদিমণি, এসেছে সময়… ফেরত দিন, আসছে দিন’ — এর মতো বিস্ফোরক কিছু পংক্তি। যা শুনে শনিবার সকালেই এই গান নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে পোস্ট করে ধন্য ধন্য করে ওঠেন বিজেপির বাবুল সুপ্রিয়। তবে এরপরই মুখ খুলে নচিকেতা সাফ জানিয়ে দেন, এই গানে তিনি কোন রাজনৈতিক রং লাগতে চান না।
তিনি স্পষ্ট বলেন যে, ‘দলীয় নেতাদের বিভিন্ন কাজকর্মে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তিতে একটা প্রভাব তো পড়ছিলই। মমতা এই কাটমানি ফেরত দেওয়ার কথা বলে নতুন একটা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিলেন।’ তাঁর অকপট স্বীকারোক্তি, ‘তৃণমূলনেত্রী সঠিক রাস্তা নিয়েছেন। ওঁর কাঁধে বন্দুক রেখে সবটা চালাচ্ছিল এক দল লোক। তাঁদের আর দরকার নেই। মমতা একাই একশো। ওঁর এই সিদ্ধান্তে অনুপ্রাণিত হয়েই গানটা লিখলাম।’ এরপরই নিজের ফেসবুক পেজে ওই গানটি পুনরায় শেয়ার করে তিনি লেখেন, ‘আমার এই গান ভারতবর্ষের সকল ভণ্ড রাজনীতিকদের উদ্দেশ্যে।’ ফলে তাঁকে নিয়ে তৈরি হওয়া সমস্ত জল্পনার ইতি তিনি নিজেই ঘটালেন। শুধু তাই নয়। বাবুলকে যোগ্য জবাব দিতেও ছাড়েননি নচিকেতা। তাঁর কটাক্ষ, রামকৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মিষ্টান্নের দায়িত্ব তো আর রামকৃষ্ণের নয়। যে যা বোঝার বুঝবে।