শিশুমৃত্যুর মিছিল অব্যাহত বিহারে। সারা রাজ্যে মৃতের মোট সংখ্যা ১৫৬। রাজ্যের ১৬টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোম (এইএস) বা চমকি বুখার। মুজফ্ফরপুর জেলাতেই ১২২টি শিশু মারা গিয়েছে। এ ছাড়াও ভাগলপুর, বৈশালী, পূর্ব চম্পারণ, সীতামঢ়ী, সমস্তীপুর ও পটনায় মৃত্যুর খবর মিলেছে। অসুস্থ হয়েছে কম করে ৬০০ শিশু।
নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’ গোছের অবস্থা। স্বামীর সঙ্গেই মজুরের কাজ করেন শীলা দেবী। তবু বলছেন, ‘‘তাতেও অনেক সুখ ছিল। এখন যে আর কিছুই রইল না!’’ পাঁচ-পাঁচটি মেয়ের পর শীলা দেবীর কোলে এসেছিল ছেলে। চার বছর আগে। আনন্দের বন্যা বয়ে গিয়েছিল গোটা তল্লাটে। ১০ দিন আগে শীলা দেবীর সেই ‘সবেধন নীলমণি’ ছেলে মারা গিয়েছে এনসেফেলাইটিসে। বিহার সরকারের হিসাবে যে অ্যাকিউট এনসেফেলাইটিস সিনড্রোমে (এইএস) মৃত্যু হয়েছে বহু শিশুর। তার মধ্যে শ্রীকৃষ্ণ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই মৃত্যু হয়েছে ১০৯ জনের। চিকিৎসায় গাফিলতির দায়ে সাসপেন্ড করা হয়েছে হাসপাতালের এক জন রেসিডেন্ট ডাক্তারকে।
গত ১২ জুনের ঘটনা। পাঁচ মেয়ে আর ছেলেকে নিয়ে পাশের গ্রামে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন শীলা দেবী। মুজফ্ফরপুরের দরিয়াপুর গ্রামে নিজের বাড়িতে ফেরার সময় ৬ ছেলেমেয়ের জন্য সামোসা কিনেছিলেন। সকলে মিলে সেই সামোসা খেল। তার পর সাড়ে সাতটা নাগাদ ছেলেমেয়েরা রাতের খাবার খেয়ে নিল। চার বছরের ছেলেকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন শীলা দেবী।
পরের দিন তখন সবে ভোর হয়েছে। ঘড়িতে ৬টা কি সাড়ে ৬টা। শীলা দেবী দেখলেন, হঠাৎ ওঁর ছেলের শরীর খুব শক্ত হয়ে যাচ্ছে। খিঁচুনি হচ্ছে। স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ছুটলেন মুজফ্ফরপুরের কেজরীবাল হাসপাতালে। ঘণ্টাখানেকর মধ্যেই হাসপাতালের ডাক্তাররা প্রিন্সকে ডেক্সট্রোজ খাওয়ালেন। দেওয়া হল নানা রকমের ওষুধ। শুরু হল চিকিৎসা। কিন্তু বাঁচানো গেল না।
আর ১০০টি পরিবারের মতো দরিয়াপুর গ্রামেই থাকেন রেখা দেবী। এই সে দিন তাঁর সাত বছরের মেয়ে নিধিকে হারিয়েছেন রেখা। পাঁচ ছেলেমেয়ে তাঁর। নিধি ছিল সবার বড়।
গত ১৩ জুন সকালে ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরী করেছিল নিধি। উঠেছিল ৯টায়। রেখার বাড়ির চার পাশে শুধু আম আর লিচু গাছ। রেখা বলছিলেন, ‘‘ঘুম থেকে উঠেই মেয়ে বলল, খুব মাথা ব্যথা করছে। তবু সকালের খাবার খেল। তার পর আবার ঘুমিয়ে পড়ল। কিন্তু ঘুম ভেঙেও গেলও ওর, অস্বস্তিতে। ওকে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে আমি ছুটলাম শ্রীকৃষ্ণ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সাড়ে দশটার মধ্যেই পৌঁছে গেলাম। সাড়ে এগারোটায় মেয়েকে ভর্তি করিয়ে নিলেন ডাক্তাররা। দেওয়া হল দু’বোতল স্যালাইন ওয়াটার।’’
নিধির বাবা সুবোধ প্রধান বললেন, ‘‘তার পর আর চার ঘণ্টা বেঁচেছিল আমার মেয়ে। বিকেল সওয়া তিনটে নাগাদ ও মারা গেল হাসপাতালেই।’’ গোটা দরিয়াপুর জুড়েই চিত্রটা একই৷