শনিবাসরীয় ম্যাচে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে শেষ ওভারে হ্যাটট্রিক করে ভারতকে জিতিয়েছেন মহম্মদ শামি। প্রথম দিন সুযোগ পেয়েই হ্যাট্রিক। স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছে শুভেচ্ছাবার্তা। একইসঙ্গে এ বারের বিশ্বকাপেও এটাই প্রথম হ্যাটট্রিক। তাই খুশিতে আপ্লুত হয়েছেন শামি নিজেও। তবে এবারের বিশ্বকাপে এটা প্রথম হ্যাট্রিক হলেও বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটা ১০ নম্বর হ্যাট্রিক। এর আগে আরো ৯ বার হ্যাট্রিক হয়েছে বিশ্বকাপের ইতিহাসে। আগের সেই ৯ হ্যাট্রিকের তালিকায় রয়েছেন কারা? সেইদিকে একবার নজর দেওয়া যাক।
চেতন শর্মা, ভারত (১৯৮৭) : বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম হ্যাটট্রিকও কিন্তু ভারতের দখলেই। ১৯৮৭ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে নাগপুরে প্রথম হ্যাট্রিক করেছিলেন ভারতের পেস বোলার চেতন শর্মা। আউট করেছিলেন রাদারফোর্ড, স্মিথ ও চ্যাটফিল্ডকে।
সাকলিন মুস্তাক, পাকিস্তান (১৯৯৯) : বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় হ্যাটট্রিকের অধিকারী পাকিস্তান স্পিনার সাকলিন মুস্তাক। জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে পরপর তিন বলে হেনরি ওলোঙ্গা, অ্যাডাম হাকল ও পমি এম্বাঙ্গোয়াকে আউট করে নিজের হ্যাটট্রিক করেন এই স্পিনার।
চামিন্ডা ভ্যাস, শ্রীলঙ্কা (২০০৩) : বিশ্বকাপের তৃতীয় হ্যাটট্রিক এসেছিল এশিয়ারই আরেকটি দেশ থেকে। নিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার পেস বোলার চামিন্ডা ভ্যাস। তাও আবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচের প্রথম তিন বলে হান্নান সরকার, মহম্মদ আশরাফুল ও এনামুল হককে আউট করে হ্যাট্রিক করেন এই বাঁ হাতি পেস বোলার।
ব্রেট লি, অস্ট্রেলিয়া (২০০৩) : সেই একই সালে দক্ষিণ আফ্রিকাতে হওয়া বিশ্বকাপেই হ্যাট্রিক করেছিলেন অজি পেস বোলার ব্রেট লি। কেনিয়ার বিরুদ্ধে পরপর তিন বলে তিনি করেন ওটিয়েনো, বিজল পটেল ও ডেভিড ওবুয়াকে। অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে বিশ্বকাপে একমাত্র হ্যাট্রিক আছে ব্রেট লির।
লাসিথ মালিঙ্গা, শ্রীলঙ্কা (২০০৭) : বিশ্বের প্রথম বোলার, যিনি শুধুই হ্যাট্রিক নয়, পরপর চার বলে চারজন কে আউট করেছিলেন। সেই বছর ক্যরিবিয়ান দেশে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৪৪তম ওভারের শেষ দু বলে শন পোলক ও অ্যান্ড্রু হলকে আউট করেন মালিঙ্গা। ৪৬তম ওভারের প্রথম দু বলে আবার আউট করেন জ্যাক ক্যালিস ও এনতিনিকে। যদিও তারপরেও ম্যাচ হারতে হয় শ্রীলঙ্কাকে।
লাসিথ মালিঙ্গা, শ্রীলঙ্কা (২০১১) : ভারতের দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জয়ের বছরেই ফের হ্যাট্রিক নেন মালিঙ্গা। এ বার কেনিয়ার বিরুদ্ধে। এ বারেও ৪২তম ওভারে শেষ বল ও ৪৪তম ওভারের প্রথম দু বলে আউট করে বিশ্বকাপে দুটো হ্যাট্রিকের মালিক হন মালিঙ্গা।
কিমার রোচ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ (২০১১) : সেই একই বিশ্বকাপে দুটি হ্যাট্রিক হয়েছিল। একমাত্র ক্যারিবিয়ান বোলার হিসাবে বিশ্বকাপে হ্যাট্রিক করেছেন কিমার রোচ। ভারতের মাটিতে হওয়া সেই বিশ্বকাপে রাজধানীতে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে হ্যাট্রিক করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই পেস বোলার।
জেপি দুমিনি, দক্ষিণ আফ্রিকা ( ২০১৫ ) : ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে পরপর তিন বলে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ, কুলশেখরা ও কৌশলকে আউট করেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই ডান হাতি স্পিনার।
স্টিভেন ফিন, ইংল্যান্ড ( ২০১৫ ) : ইংল্যান্ডের একমাত্র বোলার, যাঁর বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক রয়েছে। তাও আবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। অস্ট্রেলিয়া ইনিংসের শেষ ওভারে ব্র্যাড হ্যাডিন, ম্যাক্সওয়েল ও মিচেল জনসনকে আউট করেন ফিন। কিন্তু তারপরেও ম্যাচ হেরে যায় ইংল্যান্ড।
মহম্মদ শামি, ভারত (২০১৯) : চলতি বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিক এবং একইসঙ্গে দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে এই রেকর্ড গড়লেন মহঃ শামি। মরণ বাঁচন এই ম্যাচে একদম শেষ ওভারে এসে পরপর তিন বলে মহম্মদ নবি, আফতাব আলম ও মুজিব উর রহমানকে আউট করে হ্যাটট্রিক করেন এবং একইসঙ্গে ভারতকে ম্যাচও জেতান শামি।
পুরো বিষয়টা লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, বিশ্বকাপের ১০ হ্যাট্রিকের মধ্যে সবথেকে বেশি হ্যাট্রিক রয়েছে ভারতের প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কার দখলে (৩)। দ্বিতীয়স্থানেই রয়েছে ভারত (২)। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানের দখলে রয়েছে একটি করে হ্যাটট্রিক।