মাত্র চার মাস আগেই অনিল অম্বানীর দ্য রিলায়েন্স গ্রুপ-এর বাজারমূল্য ছিল আট হাজার কোটি টাকা। কিন্তু পাওনাদারদের টাকা না মেটাতে পারায়, একের পর এক শেয়ার হাতছাড়া হয়ে যায়। তার জেরে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে তাঁর দুই সংস্থা রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস এবং রিলায়েন্স নাভাল। এ বার বিলিয়নেয়ার ক্লাব থেকে ছিটকে গেলেন অনিল অম্বানী।
২০০৮ সালে বিশ্বের ষষ্ঠ ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন তিনি। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ২ লক্ষ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরে তা এসে ঠেকেছে মাত্র ৩ হাজার ৬৫১ কোটি টাকায়। তবে এর মধ্যেও পরিশোধ না করা ঋণের টাকা রয়েছে। শুধুমাত্র নিজের মালিকানায় রয়েছে, অনিল অম্বানীর এমন সম্পত্তির পরিমাণ ৭৬৫ কোটি টাকা, যা তাঁর প্রিয় বম্বার্ডিয়ার গ্লোবাল এক্সপ্রেস বিমানের মূল্যের দ্বিগুণ।
২০০৮ সালের মার্চ মাসে বাজারে এক কোটি ৭০ লক্ষ কোটি দেনা ছিল রিলায়েন্স গ্রুপ অব কোম্পানিজের। সম্পত্তি এবং ব্যবসা বিক্রি করে দেনা শোধ করতে উদ্যত হয়েছিলেন অনিল অম্বানী। কিন্তু তা করতে গিয়ে ধস নেমেছে তাঁর সাম্রাজ্যে। গত সপ্তাহে তিনি নিজেই জানান, গত ১৪ মাসে মোট ৩৫ হাজার কোটি টাকার দেনা শুধেছেন তিনি, যার মধ্যে সুদ বাবদই মিটিয়েছেন ১০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। যত শীঘ্র সম্ভব বাকি টাকাও শোধ করে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
২০১৩ সালে ৫২০ কোটি ডলার থেকে ২০১৬-য় অনিল অম্বানীর মোট সম্পত্তির পরিমাণ কমে ২৫০ কোটি ডলারে এসে পৌঁছয়। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে ২০১৮ সালে মুম্বইয়ে রিলায়েন্স ইনফ্র্যাস্ট্রাকচারের বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবসা গুজরাতের আদানি গ্রুপকে বেচে দেন তিনি। বিক্রি করে দেন তিলাইয়া বিদ্যুৎ প্রকল্পও। যার পর ঋণদাতাদের চাপে দেউলিয়া ঘোষিত হয় রিলায়েন্স নাভাল। তবে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা আসে এ বছর। দেউলিয়া হয়ে যায় তাঁর রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস। সেই সঙ্গে সুইডেনের এরিকসন সংস্থার পাওনা ৪৫০ কোটি টাকা মেটানোর নির্দেশ দেয় আদালত।
তবে সম্প্রতি অনিলের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছেন বিভিন্ন চিনা ব্যাঙ্ক। দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার আগে রিলায়েন্স কমিউনিকেশন্স তাদের কাছ থেকে ২১০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছিল বলে দাবি ব্যাঙ্কগুলির। এইভাবে নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে অনিল আম্বানির সাম্রাজ্য। পতন ঘটতে চলেছে অনিলের দুর্গের।