বিশ্বকাপে আজ এমন দুটো দলের খেলা, যারা সম্প্রতি যা খেলছিল, তার থেকে এই বিশ্বকাপে অনেক ভাল খেলছে। আবার পরক্ষণেই নিজেদের আগের ধারা বজায় রেখেই অনিশ্চয়তায় মোড়া ক্রিকেটও উপহার দিচ্ছে। এই অবস্থায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর বাংলাদেশ টনটনে সোমবার মুখোমুখি। ওশেন থমাস, শেল্ডন কটরেল, আন্দ্রে রাসেলদের বাউন্সার-বৃষ্টি সামলাতে প্রস্তুত বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবাল। রবিবার টনটনে ম্যাচের আগের দিন তিনি জানিয়ে দিলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তাঁর দলই এগিয়ে এবং জেতার দাবিদার।
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ার পরে বাংলাদেশের কাছে সোমবারের ম্যাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পয়েন্ট টেবলে এই মুহূর্তে আট নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ। ফলে পরিস্থিতি সামাল দিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে জিততে মরিয়া শাকিব আল হাসানদের দল। সেই জয়ে বড় ভূমিকা নিতে চান তিনি। বাংলাদেশ ওপেনার বলেছেন, ‘‘প্রতিপক্ষের বোলিং আক্রমণ দেখে আমরা নেটে সে ভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে থাকি। জানি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম দিকে শর্ট বল করে আমাদের চাপে ফেলতে চাইবে। তবে সেটা শুধু আমরা বলেই নয়, ওরা সমস্ত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেই সেই কৌশল নিয়েই খেলতে নামে। তাই আমরাও তৈরি থাকছি।’’ তামিম আরও বলেছেন, ‘‘ওরা শর্ট বল করলেও রান তোলার জায়গাও থাকে। আমাদের সেই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। সেই প্রস্তুতিই নিয়েছি। শর্ট বল ঠিক মতো সামলাতে পারলেই কিন্তু ম্যাচ আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।’’
প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে জেতা ছাড়া দু’টি ম্যাচে বাংলাদেশকে সাকিব নির্ভরতায় ভুগতে দেখা গিয়েছে। ব্যাটিং বা বোলিং— কোনওটাই তাদের প্রত্যাশিত মানে পৌঁছতে পারেনি। ইংল্যান্ডের ঠান্ডা ও আর্দ্র আবহাওয়ায় উইকেটে তুলনামূলকভাবে সতেজ থাকে। বাংলাদেশ যে ধরনের ক্রিকেট খেলে, এই ধরনের পিচের সঙ্গে তা মানানসই নয়। ওদের দলে এমন কোনও সিমার নেই যে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। বরং, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাররা কিন্তু এই ধরনের উইকেটে আগুন ঝরাতে সক্ষম। যা কিনা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের পক্ষে খুবই চিন্তার বিষয়।
অন্যদিকে এই মুহূর্তে বেশ ফুরফুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবির। সাকিব ছাড়া বিপক্ষের আরও কোনও ক্রিকেটারকে তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের টপ অর্ডারকেও কিন্তু টনটনে দায়িত্ব নিয়ে বড় ইনিংস খেলতে হবে। বড় পার্টনারশিপ গড়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে। ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং কিন্তু এখনও দলের জয়ের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেনি। অথচ, দলে ক্রিস গেইলের মতো তারকা খেলোয়াড় রয়েছে। গেইল যদি স্বাভাবিক ছন্দে ব্যাট করে, তাহলে কিন্তু বাংলাদেশের কপালে অনেক দুঃখ আছে। সাকিব ছাড়া আর কেউ সেই রানের ফোয়ারা বন্ধ করতে পারে বলে মনে হয় না।
গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পরামর্শ দিয়েছেন কিংবদন্তি ক্লাইভ লয়েডও। শুক্রবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আট উইকেটে হারার পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বেশ চাপে। পয়েন্ট চার ম্যাচে তিন। ছ’নম্বরে আছে তারা। ১৯৭৫ এবং ১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপ জয়ী ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক বলেছেন, ‘‘সেমিফাইনালে যাওয়ার আশা ধরে রাখতে হলে, প্রত্যেকটা গ্রুপ ম্যাচ জিততে হবে।’’ আইসিসির কলামে লয়েড লিখেছেন, চলতি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ম্যাচে সবচেয়ে খারাপ ব্যাটিং দেখা গিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। এক সময় তো ৫৫ রানে তিন উইকেট চলে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। নিকোলাস পুরান (৬৩) এবং শিমরন হেটমায়ার (৩৯) চতুর্থ উইকেটে ৮৯ রান যোগ না করলে আরও আগে শেষ হয়ে যেত তাদের ইনিংস।
পুরানের প্রশংসা করে লয়েড বলেছেন, ‘‘এই বিশ্বকাপে পুরানের খেলায় আমি খুব খুশি। কিন্তু দু’জন তরুণ ক্রিকেটারের কাঁধে দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। দলের বাকি ব্যাটসমানদেরও এগিয়ে আসতে হবে।’’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের টপ অর্ডার ব্যাটিং নিয়েও তাঁর প্রশ্ন, ‘‘হয়তো টপ অর্ডারে এমন এক জনকে চাই, যে উইকেটে টিকে থাকবে। আমাদের সময়ে ল্যারি গোমস এই দায়িত্ব নিত।’