এনআরএসে জুনিয়ার ডাক্তারের ওপর হামলার প্রতিবাদে গত ছয়দিন ধরে অচলাবস্থা রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার। জুনিয়ার ডাক্তারদের কর্মবিরতির ফলে হাসপাতালগুলির সব পরিষেবা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বিপাকে পড়েছেন চিকিৎসা করতে আসা একাধিক রোগী ও তাঁদের পরিজনরা। এইকয়দিনে চাপান-উতর চলছেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ব্যাপার নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন প্রকাশ করেছেন। বারংবার আলোচনার মাধ্যমে এই অবস্থা কিভাবে কাটানো যায় তার উপায় খোঁজা চলছে। সিনিয়র ডাক্তাদের পাশাপাশি জুনিয়র ডাক্তারদেরও তিনি নবান্নে আহ্বান জানান। কিন্তু তাঁরা আসতে রাজি নন। কেন? জুনিয়র ডাক্তারদের এই আন্দোলনে কি ঢুকে গেছে রাজনীতি?
এইসব প্ৰশ্নই এখন চলছে আনাচে-কানাচ। এই আন্দোলনে বহিরাগতের পাশাপাশি, একটি পক্ষ রাজনৈতিক ইন্ধন যোগাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রশ্ন উঠছে জুনিয়র ডাক্তারদের ভূমিকা নিয়েও। কারণ সিনিয়র ডাক্তাররা যেখানে এই বৈঠকের মধ্যস্থতা করতে হাত বাড়িয়েছেন তা নাচক করে জুনিয়র ডাক্তাররা কোন পথে নিয়ে যেতে চাইছে এই আন্দোলনকে। এরইমাঝে এই আন্দোলনে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের গতিপথ ঠিক করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি ভারতী ঘোষের কণ্ঠস্বর বলে অনুমান করা যে অডিও টেপ সংবাদমাধ্যমের সামনে উঠে এসেছে তাতে স্পষ্ট শোনা গিয়েছে জুনিয়র ডাক্তারদের আগামী পদক্ষেপ কী হবে তা নির্ণয় করে দিচ্ছেন ওই বিজেপি নেত্রী। তাঁর কথায়, ‘আচ্ছা শোন। আজকের প্রেস কনফারেন্সে যা যা বলেছে। কোনওটাই তো ঠিক বলেনি। তবে এটা তো প্রেস কনফারেন্স সুতরাং অনেকেই সেটা সবাই শুনবে এবং অবশ্যই সেটা বিশ্বাস করবে। এবার তোদের পক্ষে অবস্থাটা কিন্তু গণ্ডগোলের হয়ে যেতে পারে যদি পাবলিক সিম্প্যাথি চলে যায়। তোরা যে কাজ করছিস সেটা কেউ বলবে না, তোদের কথাটা বাইরে যাওয়াটা কঠিন।’
এরপরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে প্রস্তাব ছাত্রদের দিয়েছেন দরকার হলে রাজ্যপাল ও মুখ্যসচিবের সঙ্গে যেন তারা কথা বলেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রস্তাবটা নিয়ে ওই মহিলা কণ্ঠস্বর পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘একটা এখানে উপায় আছে, দরকার হলে রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বোলার অফারটা তোরা নে। তোরা নিজেদের বক্তব্য রাখ। তোরা বল, আমরা রাজ্যপালের কাছে যেতে চাই কথা বলতে চাই। সেই আলোচনা ক্যামেরাতে লাইভ হবে।’ নিজের পরামর্শে তিনি আরও বলেন, ‘তোদের আরও যে সব কলেজের ছাত্ররা আছে তাঁদের পারলে নিয়ে যা। সমস্ত দাবি দাওয়া তাঁর কাছে পেশ কর। তোরা যা চাইছিস সেটা প্রয়োজনীয়। আমরা শুধুমাত্র তোদের সমর্থন যোগাতে পারি।’ অডিওতে শোনা ওই কণ্ঠস্বর বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষের বলেই দাবি করেছে তৃণমূল। তবে এই অডিও টেপের সত্যতা এখন খবর যাচাই করনি।
এদিকে যত দিন যাচ্ছে ততই লাগাম ছাড়া হচ্ছে পরিস্থিতি। এরই মাঝে এই আন্দোলনে রাজনৈতিক যোগের অভিযোগ যদি সত্যি হয়। তবে তা নিশ্চিত ভাবেই চরম ভয়াবহ। তবে এই সব কিছুর মাঝে এই অডিও জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন নিয়ে তুলে দিচ্ছে একাধিক প্রশ্ন। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের ফলে বিপাকে পড়েছে বহু সাধারণ মানুষ। আর তার মধ্যে যদি রাজনীতি ঢুকে যায় তবে সহজে তা মিটবে বলে মনে করছেন না বিশেষজ্ঞগণ। সাধারণ মানুষের ভোগান্তিও আরও হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।