একরত্তি শিশু দুটোর বোঝার ক্ষমতা নেই যে তাদের মায়ের দেহে প্রাণের স্পন্দন নেই। খিদে মেটাতে মায়ের স্তনবৃন্তে মুখ রেখেছিল এক শিশু। কিন্তু সন্তানকে স্তন্যদানের ক্ষমতাই ছিল না মায়ের। বাচ্চা দু’টোর হাজার কান্নাতেও সাড়া দিচ্ছিল না মা। এই শিশুদের কান্না শুনে বুধবার সকালে ঘুম ভেঙেছে পুরুলিয়ার বলরামপুরের জুরাডি গ্রাম। জঙ্গলমহলের এই গ্রামের এক প্রান্তে, রাস্তার ধারে পড়েছিল স্থানীয় বাসিন্দা টুম্পা সিং সর্দারের মৃতদেহ।
কান্নার আওয়াজে সেখানে গ্রামবাসীদের ভিড় জমে যায়। সকলে দেখেন, দুই বছরের মেয়েটি মায়ের দুধ না পেয়ে কাঁদছে। তার পাশে চার বছরের আর একটি শিশু। কাপড়ে মোড়া দেহটি নাড়াচাড়া করে স্থানীয় মানুষজন বুঝতে পারেন, টুম্পা বেঁচে নেই। কয়েক মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন তিনি। মৃতা এই গ্রামেরই বাসিন্দা। সম্ভবত মাথায় আঘাত করে খুন করা হয়েছে তাঁকে। পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠায়। বার বার কন্যার জন্ম দেওয়ার জন্য পারিবারিক অশান্তি না দারিদ্র, কী কারণে এই পরিণতি, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
শিশু দু’টিকে খাবার দিয়েছেন গ্রামবাসীরা। তাতে কান্না থেমে গিয়েছে। কিন্তু তারা জানে না, মা আর নেই। আর মায়ের দুধ খাওয়া হবে না। চাইল্ড লাইনের হাতে তাদের তুলে দিয়েছে পুলিশ। দু’টি শিশুকে কে মৃতদেহের পাশে আনল, না কি তাদের সামনেই টুম্পাকে খুন করা হয়েছে, এ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সন্দেহ, মাথার পিছনে ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে খুন করা হয়েছে মহিলাকে। মৃতদেহের পাশে পড়েছিল একটি রক্তমাখা ইঁট। ৩৪ বছরের টুম্পার দেহ যেখানে মিলেছে, সেখান থেকে তাঁর বাড়ি দেড়শো মিটার দূরে। বলরামপুরে আমরু গ্রামে তাঁর বাপের বাড়ি। জুরাডি গ্রামের শ্রাবণ সিং সর্দারের সঙ্গে টুম্পা ঘাসির বিয়ে হয়। হতদরিদ্র দিনমজুর শ্রাবণ বিভিন্ন গ্রামে কাজে যেতেন। কোনও রকমে সংসার চলত। পর পর দু’টি কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়ার পর ফের অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিলেন ওই মহিলা। টুম্পার হত্যার সঙ্গে এর কোনও যোগ আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।