বরাবরই বিজেপিকে সাম্প্রদায়িক দল বলে তুলোধনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই অভিযোগ দেশের অন্যান্য বিরোধীদের। এবং তা যে মোটেও ভ্রান্ত নয়, সেটা গেরুয়া শিবিরের ভেদাভেদের রাজনীতি থেকেই পরিস্কার। এবার ফের বাংলায় সাম্প্রদায়িক তাস খেলতে রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে চলা গোলমালের ঘটনাকে সরাসরি ‘সাম্প্রদায়িক’ তকমা দিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ! তাঁর দাবি, হামলাকারীরা সেই সম্প্রদায়ভুক্ত, রাজ্যে যাদের ২৭ শতাংশ ভোট রয়েছে। হাসপাতাল-সহ রাজ্যে যে কোনও গোলমালের নেপথ্যেই ওই বিশেষ সম্প্রদায় রয়েছে বলেই মনে করেন দিলীপ।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বিজেপি নেতা মুকুল রায়ও ডাক্তার নিগ্রহের পিছনে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের হাত রয়েছে বলে মন্তব্য করেন। আরও এক ধাপ এগিয়ে বুধবার দিলীপ বলেন, ‘তৃণমূল সরকার ওই সম্প্রদায়কে দিয়ে অপরাধ করাচ্ছে। ওদের কাছে অনুরোধ, তৃণমূলের পাতা ফাঁদে পা দেবেন না।’ শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে তিনি এ কথাও বলেন যে, ‘সমাজের সেই বিশেষ সম্প্রদায়ের লোকেরা আক্রমণ করেছে, যারা দুধেল গরু। যাদের লাথি খেতে উনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) পছন্দ করেন!’ দিলীপ যে এক্ষেত্রে নাম না করে মুসলিম সম্প্রদায়ের দিকেই আঙুল তুলছেন, তা বলাই বাহুল্য। এবং বিজেপি নেতৃত্বের এ হেন মুসলিম বিদ্বেষও নতুন নয়।
দিলীপের ওই মন্তব্যের জবাবে রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘অপরাধীর কোনও জাত-ধর্ম থাকে না। অপরাধী সমাজের শত্রু। ভাটপাড়ায় যে দু’জন খুন হয়েছেন তাঁদের তো কোনও সম্প্রদায়ের লোক বলছি না আমরা। এই যে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের চেষ্টা হচ্ছে, তা না করে তৃণমূলের নামে দোষ না দিয়ে বাংলার কৃষ্টির পরিপন্থী কথা বলা বন্ধ করুন বিজেপি নেতারা।’ বিজেপির এই ধরনের সংকীর্ণ, সাম্প্রদায়িক বক্তব্যের বিরোধীতা করছেন খোদ চিকিৎসকরাও। গতকাল রাতেই জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বিজেপির অবস্থানকে ‘ধিক্কার’ জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘যারা আক্রমণ করে তারা সমাজের দুষ্কৃতী। এখানে কোনও জাতি-ধর্মের বিচার নয়।’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি অবশ্য আরও দাবি করেন, যে বিশেষ সম্প্রদায়ের কথা তিনি বলছেন, তাদের ৪৭ শতাংশ সমাজবিরোধী। তাঁর মন্তব্য, ‘ওই বিশেষ সম্প্রদায়কে দিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করানো হচ্ছে। কারণ ওরা জানে ওদের গায়ে হাত পড়বে না। পুলিশি নিরাপত্তায় ওরা অন্যায় করতে পারে। ওদের সাজা হয় না।’ তবে দিলীপের এ হেন অভিযোগকে একেবারেই উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। বুধবার সাংসদ তথা যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘যারা চিকিৎসকদের ওপর হামলা করেছে, তাদের তো গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তা সত্ত্বেও দূর দূরান্ত থেকে আসা লক্ষ লক্ষ রোগী চিকিৎসা না পেয়ে যে ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তার দায় কার? চিকিৎসকদের দাবি দাওয়াকে মান্যতা দিচ্ছে প্রশাসন। তার উপর আস্থা রাখুন।’