গত মাসে শেষ দফার ভোটের আগে অমিত শাহের রোড শো কে ঘিরে অশান্তির জেরে উত্তাল হয়েছিল বিদ্যাসাগর কলেজ চত্বর। বিজেপির গুণ্ডাবাহিনীর তান্ডবের শিকার হয়েছিল বিদ্যাসাগরের মূর্তি। তারপরেই ভেঙে যাওয়া বিদ্যাসাগরের মূর্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কথা মতোই কাজ। আগামী মঙ্গলবার, ১১ জুন কলেজ স্ট্রিট থেকে বিধান সরণি ধরে পদযাত্রা করে বিদ্যাসাগরের দু’টি মূর্তি প্রতিষ্ঠা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। একটি আবক্ষ, এবং অন্যটি পূর্ণাবয়ব। শনিবার এই কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ মে কলকাতায় বিজেপির সভাপতি অমিত শাহের রোড শো যে-পথ ধরে গিয়েছিল, পুরোটা না-হলেও সেই পথে পদযাত্রা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। তার আগে কলেজ স্ট্রিটে হেয়ার স্কুলের মাঠে একটি অনুষ্ঠান করা হবে। সেখান থেকেই বিদ্যাসাগর কলেজ পর্যন্ত পদযাত্রা করার কথা মমতার। এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে রাজ্যের শিল্পী-সাহিত্যিক, লেখক, নাট্য ব্যক্তিত্ব-সহ বিশিষ্ট নাগরিকদের। থাকছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। ছাত্র-শিক্ষকদের পাশাপাশি বিদ্যাসাগরপ্রেমী সাধারণ মানুষকেও অনুষ্ঠানে হাজির থাকার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
শেষ দফার ভোটের আগে অমিত শাহের রোড শো ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কলেজ স্ট্রিট-বিধান সরণি চত্বর। তৃণমূল-বিজেপির সংঘর্ষের পরিস্থিতির মধ্যেই জানা যায়, একদল উন্মত্ত জনতা বিদ্যাসাগর কলেজে ঢুকে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে দিয়েছে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে সরাসরি অভিযোগ ওঠে অমিত শাহের মিছিলে যাঁরা ছিলেন তাঁরাই মূর্তি ভেঙেছেন। মুখ্যমন্ত্রী সেই রাতেই ছুটে যান বিদ্যাসাগর কলেজে। এই ইস্যুতে রাজ্য রাজনীতি গরম হয়ে উঠে। তবে এরপরই ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছিলেন, পঞ্চধাতুর বিদ্যাসাগরের মূর্তি বসাবেন।
কিন্তু যারা বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে ঈশ্বরচন্দ্রের মূর্তি ভেঙে বাংলার মানুষ কে অপমান করেন তাঁদের দেওয়া মূর্তি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী কোনো দিনই গ্রহণ করবেন না। আর তাছাড়াও বাংলা পারে ঈশ্বরচন্দ্রের মূর্তি বানাতে। তাই তখনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, ভোট মিটলেই সসম্মানে বিদ্যাসাগরের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হবে। সেই অনুষ্ঠানেরই আয়োজন করা হয়েছে আগামী মঙ্গলবার। আয়োজক রাজ্য সরকারের শিক্ষা দফতর এবং বিদ্যাসাগরের দ্বিশতবর্ষ জন্মবার্ষিকী উদযাপন কমিটি। এ নিয়ে শনিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, মূর্তি উন্মোচনের আগে হেয়ার স্কুলের মাঠে বেলা একটায় সভার আয়োজন করা হয়েছে। শিক্ষা দফতর এবং বিদ্যাসাগরের দ্বিশততম জন্মবার্ষিকী উদযাপন কমিটির উদ্যোগে ওই সভায় উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলার সমস্ত লেখক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী এবং বিদ্যাসাগর মশাইয়ের বংশধরেরা আমন্ত্রিত হচ্ছেন। সভা শেষে ওই মাঠ থেকে বিদ্যাসাগরের ব্রোঞ্জের আবক্ষ মূর্তি নিয়ে পদযাত্রা করে বিধান সরণিতে বিদ্যাসাগর কলেজে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে উন্মোচন করবেন নতুন দুই বিদ্যাসাগর মূর্তির। আবক্ষ মূর্তিটি বসানো হবে কলেজের ভিতরে। আবক্ষ মূর্তিটি ছাড়াও বিদ্যাসাগরের পূর্ণাবয়ব আরও একটি মূর্তি কলেজের বাইরে প্রতিষ্ঠিত হবে। এই দু’টি মূর্তিই ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরি।