একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফের ক্ষমতায় আসার পর গত ৩০ মে, বৃহস্পতিবার ছিল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান। ও’দিন দেশের রাজনৈতিক মহল, বাণিজ্য এবং অভিনয় জগতের পাশাপাশি আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টদেরও৷ কিন্তু তাতে বাদ পড়েছিলেন নির্বাসিত তিব্বতি সরকারের সুপ্রিম নেতা চতুর্দশ দলাই লামা৷ অথচ তাঁকেই প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর সাদরে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল৷ কেন এই তিব্বতি ধর্মগুরুকে এবারের অনুষ্ঠানে ডাকা হল না তা নিয়েই চলছে জোর আলোচনা৷ একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে উঠে আসছে বিশ্লেষণ৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনকে সুমধুর কূটনৈতিক বার্তা দিতেই মোদীর দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অনুষ্ঠানে ডাকা হয়নি একদা তিব্বতের শাসককে৷
বিশ্লেষণে উঠে আসছ, ভারতে নির্বাসিত তিব্বতি সরকারকে নিয়ে তেমন আর গুরুত্ব দিতে চাইছে না এনডিএ সরকার৷ ফলে কূটনৈতিক লড়াইয়ে নয়াদিল্লী-বেজিংয়ের মধ্যে পড়ে গিয়ে অনেকটাই দুর্বল অবস্থানে চতুর্দশ দলাই লামা৷ চীন সরকার তাঁকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আগেই৷ আর বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা তিব্বতি ও বৌদ্ধদের কাছে তিনি ‘ভগবান’৷ হিমাচল প্রদেশের ধরমশালায় দলাই লামার নেতৃত্বে চলছে নির্বাসিত তিব্বতি সরকার৷ চিনের তরফে লাসা অধিকার করে নেওয়ার পর গোপনে ১৯৫৯ সালে ভারতে চলে এসেছিলেন দলাই লামা৷ সেই থেকে ধরমশালাকে ঘিরেই তাঁর অবস্থান৷
দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু তুলে ধরে সাউথ এশিয়ান মনিটর৷ তাদের ওয়েবসাইটে দলাই লামার কূটনৈতিক অবস্থান ও নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকা নিয়ে বিশ্লেষণ প্রকাশ করা হয়েছে৷ সেই প্রতিবেদনর শিরোনাম- ‘চীনকে কাছে পেতে দালাই লামাকে দূরে ঠেলে দিলো ভারত৷’ এতে লেখা হয়েছে, ‘একসময় তিব্বতিদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা দালাই লামা ছিলেন সাদরে গৃহীত ব্যক্তিত্ব ও চিনের মোকাবিলায় ভারতের হাতে থাকা ট্রাম্প কার্ড। এখন তিনি উভয় অবস্থানই হারিয়ে ফেলেছেন।… মোদীর শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানে প্রবাসী তিব্বতি সরকারের কাউকেই আমন্ত্রণ জানান হয়নি।’
অন্যদিকে, বিভিন্ন ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমেও দলাই লামাকে আমন্ত্রণ না জানানোর বিষয়টি তুলে ধরা হয়৷ বিশ্লেষণে উঠে এসেছে- ধরমশালা ভিত্তিক নির্বাসিত (প্রবাসী) তিব্বতি সরকারকে আর তেমন গুরুত্ব দিতে নারাজ নয়াদিল্লী৷ এর থেকে মোদীর কাছে অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে চীন৷ যারা কিনা বরাবরই ভারতকে নানাভাবে বিপদে ফেলার চেষ্টা করে গেছে। তবে এখানেই প্রশ্ন- ভারতে থাকা তিব্বতিরা কি সরকারের কাছে ‘গলার কাঁটা’ হয়ে উঠেছেন? কেন মোদীর শপথ অনুষ্ঠানে প্রবীণ তিব্বতি ধর্মগুরুকে আমন্ত্রণ জানানো হল না? তবে মিলছে না উত্তর। মুখে কুলুপ এঁটেছে দ্বিতীয় মোদী সরকার।