মঙ্গলবার অমিত শাহের রোড শো চলাকালীন বিদ্যাসাগর কলেজে বিজেপির গুণ্ডাবাহিনীই যে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে, এবার একটি ভিডিও প্রকাশ্যে এনে তা প্রমাণ করে দিল তৃণমূল। হ্যাঁ, শুধু অভিযোগ করেই থেমে থাকেনি তারা, উপযুক্ত প্রমাণ দিল। বুধবার দিল্লীতে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিদ্যাসাগর কলেজের গেট টপকে ভেতরে ঢুকে গেরুয়া বাহিনীর বেপরোয়া ভাঙচুরের ছবি দেখালেন তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা তথা প্রধান জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন। পাশাপাশি বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে মিথ্যেবাদী বলেও কটাক্ষ করেন তিনি।
গতকাল দিল্লীতে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেখানো হয় মঙ্গলবার সন্ধের সেই ভয়াবহ তাণ্ডবের ৩টি খণ্ডচিত্র। তৃণমূলের প্রকাশ করা ভিডিও ৪৪টি। দলের দাবি, প্রতিটি ফুটেজই খাঁটি। যার থেকে সংবাদমাধ্যমের সামনে দেখানো হয়েছে মাত্র ৩টি। অমিত শাহর মিছিল থেকে বিদ্যাসাগরের মূর্তি-সহ কলেজে ভাঙচুরের প্রকৃত দোষীদের চিনিয়ে দিতেই। ৪০ সেকেন্ডের প্রথম ভিডিওতে গেরুয়া পোশাক পরা, মাথায় গেরুয়া ফেট্টি বাঁধা উন্মত্ত যুবকদের কলেজ গেটের বাইরে থেকে লাঠি ও ইট হাতে আক্রমণের ছবি দেখা গেছে।
দ্বিতীয়টিতে কলেজের গেট টপকে ভেতরে ঢুকে বেপরোয়া ভাঙচুরের ছবি স্পষ্ট। আর তৃতীয় ভিডিওটি গত সোমবারের। তাতে খিদিরপুরের এক বিজেপি নেতাকে তাঁর ‘ফাটাফাটি’ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সদস্যদের মঙ্গলবার অমিত শাহর র্যালিতে হাজির হয়ে অশান্তি পাকানোর কথা বলতে শোনা গেছে। দিল্লীর কনস্টিটিউশন ক্লাবে তৃণমূলের তরফে সাংবাদিক সম্মেলনে ডেরেক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সুখেন্দুশেখর রায়, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও রাজ্যসভার সদস্য মণীশ গুপ্ত এবং সাংসদ নাদিমুল হক।
তাঁরা প্রত্যেকেই হাতে বর্ণপরিচয় ও বুকে বিদ্যাসাগরের ছবি নিয়ে স্পষ্ট ভাষায় শাহকে ‘মিথ্যাবাদী’ ও ‘ধোঁকাবাজ’ আখ্যা দেন। শুধু তাই নয়। বিকেলে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরার সঙ্গে দেখা করে ৪৪টি ভিডিও ফুটেজ জমা দিয়ে বিহিত চেয়েছেন তৃণমূল নেতারা। ডেরেকের বক্তব্য, ‘বিহার, ঝাড়খণ্ড ও উত্তরপ্রদেশ থেকে বহিরাগতদের এনে পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয়েছে। কলকাতায় তাজিন্দর বাগ্গা ছিলেন। ইনিই প্রবীণ আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণকে থাপ্পড় মেরেছিলেন। এঁদের মতো লোকেদেরই সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়ান শাহ।’
তৃণমূলের দাবি, তাণ্ডব চালানোর পর বিজেপি সমর্থকদের স্লোগান ছিল, ‘হাউ ইজ দ্য জোশ? বিদ্যাসাগর ফিনিশ।’ কেন্দ্রীয় বাহিনীর অপব্যবহার নিয়েও বিস্তর অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। দলের অভিযোগ, ‘বাংলায় বিজেপি ও কেন্দ্রীয় বাহিনী জোট বেঁধে ভোট করছে।’ উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে এর আগে ৩ বার কমিশনে নালিশ জানিয়েছে তৃণমূল। গতকাল চতুর্থবার অভিযোগ জানানো হল।
অন্যদিকে, মণীশ গুপ্ত বলেছেন, ‘বাংলার দায়িত্বে থাকা ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন আচরণবিধি ভেঙে পুলিশের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন। অমিত শাহর সভায় পুলিশকে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে নির্দেশ দিয়েছেন।’ তাঁর অভিযোগ, কলকাতার বিভিন্ন হোটেল ও বাড়িতে ভিন রাজ্যের গুন্ডাদের রেখেছে বিজেপি। গতকাল যারা তাণ্ডব চালিয়েছে তাদের বেশিরভাগই মত্ত ছিল।