বিষ্ণুপুর লোকসভার অন্তর্গত খণ্ডঘোষের উখরিদ রাসবিহারী ঘোষ কলেজে জনসভা করলেন যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আজকের এই মাত্রাছাড়া গরমের মধ্যেও বিপুল সংখ্যক মানুষ সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন। সকলের কথা ভেবেই এই সভায় তাঁর বক্তব্য দীর্ঘায়িত করেননি। অন্যান্য সভার মত এই খানেও মোদীর ব্যর্থতার বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তিনি। এবং এখানেও উপস্থিত সকলকে বক্তব্যের শুরুতেই আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি। রমজানের শুভেচ্ছাও জানান তিনি। আজকের সভা প্রার্থী শ্যামল সাঁতরার সমর্থনে হয়।
বাম আমলের নির্বাচনের সময়ে মানুষকে যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দেওয়া হত না, সবাইকে ভয় দেখিয়ে ধমকে চমকে যে ঘরে আটকে রাখা হত, সেই কথা উল্লেখ করেন তিনি। কিন্তু মমতার আমলে এসব হয় না তাই আগামী ১২ তারিখ যাতে সকলে নির্ভয়ে ভোট দিতে যান সেই আবেদন জানান অভিষেক। অভিষেক ক্ষমাও চান কারণ আজ ২৫ বৈশাখ, কিন্তু যেহেতু নির্বাচনের প্রচার চলছে তাই গোটা দিন ধরে রবীন্দ্রনাথের জন্মদিবস উদযাপন করা সম্ভব হয় নি। বাংলার কৃষ্টি সংস্কৃতি ইত্যাদি সবকিছুকেই যে একমাত্র তৃনমূলই সম্মান করে সেই কথাও বলেন অভিষেক। অথচ যে বাংলা নিয়ে মোদীর এত আস্ফালন সেই বাংলার অহংকার রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে যে আজ মোদী একটি শব্দও খরচ করেননি তাই নিয়েও তোপ দাগেন তিনি।
বাঁকুড়াতে মোদীর সভা যে পুরোপুরি ব্যর্থ তাও জানিয়ে দেন তিনি। মোদী আমলে মানুষের ঠিক কতটা দুর্দশা হয়েছে সেই চিত্র এই সভা মঞ্চ থেকে তুলে ধরেন তিনি। নোটবন্দী ইস্যুতে মোদীকে তোপ দাগেন অভিষেক। মোদীর আমলে যে কোনও কর্মসংস্থান হয়নি উলটে অনেকের চাকরি গেছে তাও উল্লেখ করেন। এরপরে সবকিছুর দাম বৃদ্ধি নিয়েও কটাক্ষ করেন অভিষেক। সংসারের কাজ সামলে আজ প্রচুর মহিলা উপস্থিত ছিলেন এই সভায়। অভিষেক অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানান সকলকে। তিনি আবার বলেন, নারী শক্তি যাদের সঙ্গে থাকে তাঁদের কেউ রুখতে পারে না।
মোদীর সেনা ও ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করাকেও তিনি তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। এছাড়া সরাসরি মোদী সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন তিনি। মোদীর প্রচার খরচ নিয়েও প্রশ্ন রেখে গেলেন এইদিন সভামঞ্চ থেকে। এছাড়া মমতা সরকারের সঙ্গে মোদী সরকারের তুলনাও টেনে এনেছেন। উদাহরণ হিসেবে রাজ্য ও কেন্দ্রের প্রকল্পগুলোকেও তুলে ধরেছেন। খতিয়ান দেখিয়ে মোদী সরকারের প্রকল্পগুলোর ব্যর্থতা তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাফল্যেরও খতিয়ান দিয়েছেন তিনি।
মোদীর ‘স্টিকার দিদি’ মন্তব্যকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন তিনি। তারপর তিনি মোদীকে ‘টুকলি দাদা’ হিসেবে আখ্যা দেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যাশ্রী, কৃষক বন্ধু-এর মতো প্রকল্প ধাঁচে মোদীর প্রকল্পগুলো। সেটাও মনে করিয়ে দিলেন তিনি।
বিজেপির হিন্দুদের নিয়ে এই বিভাজনকে তোপ দেগে তিনি বলেন, “ রামনামেও ওরা আর বাঁচতে পারবে না। ওরা বলছে জয় শ্রী রাম, মানুষ বলছে দাঙ্গা করাই ওদের একমাত্র কাম। ওরা বলছে জয় শ্রী রাম, মানুষ বলছে রান্নার গ্যাসের কেন এত দাম? আর আমি বলছি জয় শ্রী রাম, ২৩ মে-র পর ভারতীয় জনতা পার্টির থাকবে না কোনও নাম। ওরা সেন্ট্রাল ফোর্স দিয়ে লড়ে আর আমরা মানুষের ভালোবাসা, দোয়া, আশীর্বাদ সততা উন্নয়ন দিয়ে লড়ি”।
মোদী যে গত পাঁচ বছরে কাজের কাজ কিছুই করেননি সেই কথা প্রতি ছত্রে ছত্রে তুলে ধরেন তিনি। উল্টোদিকে মমতার আমলে যে মানুষ প্রতিদিন সমৃদ্ধ হচ্ছেন তাও বলেন অভিষেক। মমতার জন্যেই মানুষ স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট, হাসপাতাল ইত্যাদি সব কিছু পেয়েছেন তাও উঠে আসে আজকের বক্তব্যে। অভিষেক স্পষ্ট জানান, মমতার উন্নয়নের সামনে মুখ থুবড়ে পড়বেন মোদী।
বক্তব্যের শেষে বলেন, “এখন রাম আর বাম এক হয়েছে। তোমার রাম আর তোমার বাম অস্ত্র হাতে মিছিল করে আর আমার দুর্গা উন্নয়নের ডালি নিয়ে বাংলার মানুষকে চাঙ্গা করে। তোমার রামের যাবার পালা, ব্যাগবস্তা গোছাও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসছে তেড়ে ঢপবাজরা পালাও।মনে রাখবেন আপনারা ভোটটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দিচ্ছেন। তাই আসুন, ভোটবাক্সে জবাব দিন ওদের যাবতীয় মিথ্যে কথার। জয় হোক বাংলার”। আজকের সভার এই উচ্ছ্বাস আবারও প্রমাণ করল মানুষ আছে মমতার পাশেই।