গত ১১ এপ্রিল থেকে দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে লোকসভা নির্বাচন। কিন্তু এই মুহূর্তে গোটা দেশেই বইছে প্রবল বিজেপি বিরোধী হাওয়া। অবস্থা এমনই যে, নিজেদের রাজ্যেই কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। হ্যাঁ, আশঙ্কার মেঘ এখন উঁকি মারছে গুজরাতের পদ্মবনের আকাশে। নোটবন্দী ও জিএসটির কারণে ২০১৭ সালে গুজরাতে শহরাঞ্চলের ভোটব্যাঙ্কে ধাক্কা লেগেছিল বিজেপির। কিন্তু এবার তার থেকেও গ্রাম নিয়ে অনেক বেশি উদ্বেগ গেরুয়া শিবির।
এবার যে বিজেপির পক্ষে গুজরাতে আর ভাল ফল করা সম্ভব নয়—এটা নিয়ে অন্তত কোনও সন্দেহ নেই। কেন? কারণ খুব সহজ। ২০১৪ সালে গুজরাতের ২৬টি আসনের সবকটিতেই বিজেপি জিতেছিল। অর্থাৎ বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে লড়াইয়ের ফলাফল ছিল ২৬ বনাম শূন্য। সুতরাং এর থেকে ভালো ফল করার তো আর উপায় নেই! অতএব আর যাই হোক, গুজরাতে বিজেপি ভালো ফল করবে—এই ভবিষ্যৎবাণীর আর বিশেষ মূল্য নেই। কোটি টাকার প্রশ্নটা হল, গুজরাতে বিজেপি কি নিজেদের এই আসন ধরে রাখতে পারবে? এবং এটাই সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ ও টেনশন।
বিগত পাঁচ বছরে গোটা দেশের ভোটের প্যাটার্নের মধ্যে সর্বপ্রথম নরেন্দ্র মোদীর জন্য অশনি সংকেতের বার্তা এনেছিল তাঁর নিজের দুর্গ। ২০১৭ সালে বিধানসভা ভোটে বিজেপি চরম ধাক্কা খায়। এতদিন গোটা দেশ জেনে এসেছে, গুজরাতে কংগ্রেস বলে কিছু নেই। এক ও একচ্ছত্র মোদী। কিন্তু সেই ‘কিছু নেই’ কংগ্রেস ৮০ আসন দখল করে সরকার গড়ার ক্ষেত্রে বিজেপিকে রীতিমতো নার্ভাস করে দেবে, এটা কল্পনাই করা যায়নি। অথচ তাই হয়েছিল। এবং তার থেকেই যেটা মোদীর পক্ষে বেশ অস্বস্তিকর ছিল সেটি হল, বিজেপি বিগত ১৫ বছরের মধ্যে এই প্রথম ১০০ আসন পেরতে পারেনি। কোনওমতে গরিষ্ঠতা পেয়েছে।
অন্যদিকে, বিধানসভা ভোটে উত্তর আমেদাবাদ কেন্দ্রটি কংগ্রেস ছিনিয়ে নিয়ে যথেষ্ট উজ্জীবিতও তারা। মিথ ভেঙে গিয়েছে যে, শহর শুধুই বিজেপির। এবার আরও বড় ধাক্কা দেওয়ার আশা করছে কংগ্রেস। গুজরাত কংগ্রেসের তরফে সি জে চাদভা বললেন, ‘মোদী বলেছেন তো তিনি নাকি এবার বেঙ্গলে সারপ্রাইজ দেখাবেন? উনি বুঝতে পারছেন না যে, তার থেকে বশি বিস্ময় অপেক্ষা করছে তাঁর নিজের রাজ্যে। মিলিয়ে নেবেন।’ কেন? একটা কম্পিউটার প্রিন্ট আউট সামনে রেখে চাদভা বোঝালেন বিজেপির আত্মবিশ্বাসের ফাঁকফোকর আর গুজরাতের দুর্গের ফাটলের মানচিত্র।
২০১৪ সালের মহাজয়ের পর এই রাজ্যে তিনটি ফ্যাক্টর সবথেকে বড় মাথাব্যথা হয়েছে বিজেপির জন্য। প্রথমত, হার্দিক প্যাটেল ও পাতিদার আন্দোলন। দ্বিতীয়ত, কৃষকদের প্রবল ক্ষোভ এবং আরেকটি হল জিএসটি। এবং একটি ক্ষুদ্র হলেও চার নম্বর কারণ আছে। আদিবাসী ক্ষোভ। এই এতগুলো ফ্যাক্টরকে মেরামত করা অসম্ভব। হার্দিক সরাসরি কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। সুতরাং তাঁর প্যাটেল সংরক্ষণের আন্দোলনকারীরা এবার কংগ্রেসের পাশে। আর রাহুল গান্ধীও লাগাতার মাটি কামড়ে পড়ে থেকে গুজরাতের বিধানসভা ভোটে গ্রাম ও কৃষকদের কংগ্রেসের কাছে টেনে আনতে সক্ষম হয়েছেন। সেটা প্রমাণিত ওই ভোটে। আর সেই কারণেই গ্রামীণ কেন্দ্রে কংগ্রেস এগিয়ে। যার ফলস্বরূপ শহুরে কেন্দ্রে থাবা বসাচ্ছে কংগ্রেস।
উত্তর গান্ধীনগর ও কালোল কেন্দ্র দু’টি আমেদাবাদের লাগোয়া। এই দু’টি আসনে ২০১৭ সালে কংগ্রেস জয়ী হয়েছে। এবং তার থেকেও বড় সিঁদুরে মেঘ হল সানন্দ। যেখানে ন্যানো কারখানা। সেই কেন্দ্রে বিজেপি মাত্র দেড় বছর আগে বিধানসভা ভোটে জয়ী হয়েছিল মাত্র ৭ হাজার ভোটে। সুতরাং গ্রামীণ ও কৃষক ভোটের পাশাপাশি জিএসটি কিংবা নোট বাতিলের কারণে শহুরে ভোটব্যাঙ্কও বিজেপির হাতছাড়া হয়েছে। তবে গ্রাম, কৃষক, প্যাটেল! এরাই কিন্তু বিজেপির ভাগ্যনিয়ন্তা হতে চলেছে গুজরাতে! আর এক্ষেত্রে এই ভবিষ্যৎ বাণী করাই যায় যে, ভাল ফল তো দূরের কথা, এবার গুজরাত থেকে বিজেপি অন্তত ছয় থেকে সাতটি আসন হাতছাড়া করার আশঙ্কা করছেই। যদিও কংগ্রেস নেতা চাদভা দাবি করছেন, বিজেপি এবার ১২টির বেশি আসন পাবে না।