‘কন্যাশ্রী’ পর ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্প দিয়ে আবারও বিশ্বজয় করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিন কয়েক আগেই রাষ্ট্রসংঘের ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি বিভাগে পুরস্কার জিতেছে এই প্রকল্প। আর এবার দেখা গেল ভোট প্রচারের কাজে মমতার দেওয়া ওই সাইকেলের ওপরই ভরসা রাখতে হচ্ছে বিজেপিকে! গত রবিবারই ভোটের প্রচারে গাজোল রানিগঞ্জ-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা সবুজসাথীর সাইকেল নিয়ে মিছিল করেন। যা নিয়ে তৃণমূলের কটাক্ষের মুখে পড়েছে গেরুয়া শিবির।
[Total_Soft_Poll id=”5″]
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রীর অন্যতম স্বপ্নের প্রকল্প সবুজ সাথী। তবে সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল নিয়ে বারবারই রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেছে গেরুয়া শিবির। এমনকি বিঁধেছে এই প্রকল্পের রূপকার মমতাকেও। কিন্তু রবিবার গাজোলে রানিগঞ্জ ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় উত্তর মালদা লােকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী খগেন মুর্মুর সমর্থনে যে ভোট প্রচারে সাইকেল মিছিল হয়, সেখানে বেশ কিছু সবুজ সাথী সাইকেলের দেখা মিলেছে। এছাড়াও গ্রামে-গঞ্জে ঘুরলেই বিজেপির মিছিলে দেখা মিলছে সবুজ সাথীর। দেখা যাচ্ছে, বিজেপি মুখে সমালোচনা বা বিরোধিতা করলেও লোকসভা ভোট প্রচারে কিন্তু বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা অনেক ক্ষেত্রেই মুখ্যমন্ত্রীর তরফে ছাত্র-ছাত্রীদের দেওয়া সবুজ সাথী সাইকেল ব্যবহার করছেন! অর্থাৎ মুখে উন্নয়নের কথা অস্বীকার করলেও মমতার উন্নয়নেরই সুফল ভোগ করছেন তাঁরা।
এ বিষয়ে গাজোলের তৃণমূল বিধায়ক দিপালী বিশ্বাস বলেন, রাজ্য সরকারের সুবিধা যে ইতিমধ্যেই বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে তার প্রমাণ খোদ বিজেপির কর্মী-সমর্থকরাই দিয়ে দিচ্ছেন। আবার উত্তর মালদা লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী মৌসম বেনজির নুর বলেন, যখন মুখ্যমন্ত্রী সবুজ সাথী প্রকল্প নিয়ে এসেছিলেন, তখন বিজেপি তির্যকভাবে এ প্রকল্প নিয়ে মন্তব্য করত। আজ আমাদের খুশি হচ্ছে যে বিজেপির বড় নেতারা যত সমালোচনা করুক কর্মীরা ভুল বােঝেননি। এ কথা এখন প্রমাণিত মুখ্যমন্ত্রী যে প্রকল্প নিয়েছিলেন সেটি সঠিক ছিল।
সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল নিয়ে যেখানে বিজেপির তাবড় নেতারা শাসকদলকে বাপান্ত করছেন, তখন তাদের দলেই নিচতলা কর্মী-সমর্থকরা প্রচারে সবুজ সাথী সাইকেল ব্যবহার করে দলীয় নেতৃত্বকে বিড়ম্বনায় ফেলে দিয়েছেন। সাফাই দিতে গিয়ে মালদা বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি শ্যামচাঁদ ঘােষ বলেন, ছাত্রছাত্রীরা নিজের অধিকারে সাইকেল পেয়েছে। এখানে তৃণমূলের কোনও কৃতিত্ব নেই! সে সাইকেল নিয়ে অভিভাবকরা আসতেই পারেন। এখানে ভুল কিছু দেখছি না। প্রশ্ন উঠছে, তৃণমূল সরকার যে প্রকল্পটি সূচনা করেছে, তাতে তাদেরই কৃতিত্ব নেই?
[Total_Soft_Poll id=”6″]
অন্যদিকে, এ বিষয়ে উত্তর মালদা লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রচার কনভেনার সুজয় চন্দ্র রায়ের ব্যখ্যা, সবুজ সাথী সাইকেল নিয়ে বিজেপির র্যালিতে বেশ কয়েকজন এসেছেন এটা অস্বীকার করব না। এটা তৃণমূলের কোনও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয় যে সাইকেল নিয়ে অন্যরা আসতে পারবে না। নিজের অধিকার বলে ছেলে মেয়েরা এই সাইকেল পেয়েছে। অভিভাবকরা সেগুলো ব্যবহার করছেন। এতে অন্যায় কী? আমি নিজেও সবুজ সাথী সাইকেল অন্যের কাছ থেকে নিয়ে মিছিলে হেঁটেছি! এর মধ্যে বিতর্কের কিছু দেখছি না! কথা হল, বিজেপি যদি এ কথা স্বীকার করে নেয় যে সব ছেলে-মেয়েরাই সাইকেল পেয়েছে, তাহলে তো সমালোচনা করার জায়গাই থাকছে না কোনও!
সাইকেল নিয়ে বিজেপির তাবড় নেতারা যখন সমালোচনার ঝড় তুলছেন সেখানে মালদায় ভোট প্রচারে খোদ বিজেপি সবুজ সাথী সাইকেল ব্যবহার করায় স্বাভাবিকভাবেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। মিটিং মিছিলে যাওয়ার সময় অনেক বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা সাইকেল ব্যবহার করে বিতর্কের মুখে পড়ার ভয়ে সবুজ সাথীর সাইকেল সামনে বিজেপির দলীয় পতাকা লাগাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ অতি উৎসাহিত হয়ে সবুজ সাথী সাইকেলে দলীয় পতাকা বেঁধে নিয়ে গর্বের সঙ্গে ভোট প্রচার করছেন। এছাড়াও গ্রামীণ এলাকায় বিজেপির কর্মীরা পরিবারের কোনো পড়ুয়ার পাওয়া সবুজ সাথীর সাইকেল ব্যবহার করছেন। এর থেকেই প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে যে, কোনও দল বা রঙ না দেখেই সব পরিবারের পড়ুয়াদেরই এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। যার ফলে বিজেপির কর্মী-সমর্থকরাও এভাবে মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের সুফল ভোগ করছেন।
[Total_Soft_Poll id=”7″]