আজ জলপাইগুড়ি লোকসভার অন্তর্গত রাজগঞ্জের বেলাকোবা পাবলিক ক্লাব গ্রাউন্ডে জনসভা করলেন যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সভার প্রথমেই উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান। আজ সভামঞ্চ থেকে বিজেপির ব্যর্থতার বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন অভিষেক। তিনি বলেন, তিনি আপ্লুত এই তীব্র রোদকে উপেক্ষা করে যারা এই সভায় এসেছেন তাঁদের দেখে। তিনি আরও জানান, আজ যারা এসেছেন তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েই এসেছেন যে আগামী ২৩ মে বিজেপিকে উৎখাত করবেনই।
এরপরে অভিষেক বলেন, “ আসছে ২৩ মে-র পরে ভারতীয় জনতা পার্টিকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। যারা মানুষকে ঠকায়, যাদের জন্যে সাধারণ মানুষের অবস্থা খারাপ হয়, তাঁদের আপনারা ফিরতে দেবেন না এটা আমার বিশ্বাস। তাই জলপাইগুড়ির তৃণমূল প্রার্থী বিজয়চন্দ্র বর্মণকে বিপুল ভোটে জেতাবেন এটা আমি জানি। ২০১৪ সালে আমরা যখন ভোটে লড়েছিলাম আমরা বলেছিলাম সাম্প্রদায়িক বিজেপি, আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত কংগ্রেস, হার্মাদ সিপিএম-এর সঙ্গে লড়াই ছিল ।এবার লড়াইটা মূলত দুটো আদর্শের, দুটো মানুষের। এক হল দুর্নীতিগ্রস্ত মোদী এবং সততার প্রতীক বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সবাই বিজেপির বশ্যতা মানলেও মমতা মাথা নোয়ায়নি। তাঁকে ধমকে, সিবিআই-এর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। কারণ মোদী যত এরকম করেছেন বাংলায় তত বেড়েছে উন্নয়নের খতিয়ান। মমতার সমর্থনে তত মানুষ রাস্তায় নেমেছে”।
তিনি আরও বলেন, “ বাংলার মাটি, দুর্জয় ঘাঁটি তা প্রমাণ করার জন্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লড়াই করে গেছেন। বিজেপি যেভাবে সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি করে চলেছে তা অত্যন্ত খারাপ। তৃণমূল এই ভেদাভেদের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না তাই আমরা সবাইকে নিয়ে চলি। কিন্তু বিজেপি শুধুমাত্র হিন্দুত্ববাদ নিয়েই চলে। কারণ ওরা কোনও কাজ করে না। যারা রাজনীতির লড়াই করতে করতে পারে না তারাই ধর্ম নিয়ে লড়াই করে। আর তা না করলেই ওদের চোখে সকলে অপরাধী হয়ে যায়। কিন্তু আমি, আমরা সব ধর্মের মানুষকে নিয়েই চলি। আমার ধর্ম পালন বাড়িতে করব। কিন্তু মানুষের কাজ করতে গিয়ে ধর্ম মানুষের সামনে করব না। আমার ধর্ম, তৃণমূলের ধর্ম একটাই তা হল মানব ধর্ম। তাই জন্যেই ধর্ম নির্বিশেষে বাংলাতে কেউ কন্যাশ্রী পেয়েছে, কেউ রূপশ্রী পেয়েছে। এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা, মমতার তৃণমূল”।
মোদীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন আজ সভামঞ্চ থেকে। তিনি বলেন, “বিজেপি, বাম, কংগ্রেস কাউকেই মানুষের পাশে দেখা যায়না। ওরা না পারে রাস্তায় একটা আলো লাগাতে, একটা টিউবওয়েল বসাতে, উৎসবের সময় মানুষকে একটা বস্ত্র দেয় না। ওরা শুধু প্রতিশ্রুতি দেয়, আর ভোট মিটলে সব ভুলে যায়। কিন্তু বাংলার জনগণমন অধিনায়ক নেত্রী যা যা বলেছিলেন তার সবটা করে দেখিয়েছেন। মানুষের পাশে যদি কেউ থাকেন তা হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর বিজেপি শুধু ধর্মীয় বিভাজন করতে পারে। তাই ২০১৪ সালে বিবেকানন্দের ছবি সামনে রেখে ভোট চেয়েছিল আর জেতার পরে বেলুড় মঠকে সামান্য সম্মানও দেয়নি”।
এরপরে তিনি বলেন, “বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিল আচ্ছে দিন আসবে, ২ কোটি বেকারের চাকরি হবে,রাস্তা হবে স্কুল হবে, কলেজ হবে, বাংলাকে লক্ষ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে, এই হবে তাই হবে। কিন্তু হল কী? আচ্ছে দিনের নামে নোটবন্দী করে মানুষকে হয়রানি করা হল, আর নীরব মোদী টাকা নিয়ে পালাল আর নিজে বিশ্ব ভ্রমণ করছে। গ্যাসের দাম বাড়ল আর দিল্লীতে বিজেপির নেতারা সেভেন স্টার পার্টি অফিস তৈরি করল। ভোটব্যাঙ্ক বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই আচমকা ভোটের আগেই গ্যাসের দাম কমে গেল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন বলে বাংলাকে নষ্ট করতে পারেনি। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি ক্ষমতা থাকলে আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর কেশাগ্র স্পর্শ করে দেখাও। আমাদের জননেত্রী বুঝিয়ে দেবেন তৃণমূল কি জিনিস!”
বিজেপির দুর্দশা তুলে ধরে অভিষেক বলেন, “আমরা যাদের ডাস্টবিনে ফেলে দিই বিজেপি তাঁদের কুড়িয়ে নেয়। ওদের এমন অবস্থা যে ফ্ল্যাগ লাগানোর লোক অব্ধি নেই। বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ করছি একটা আসনও পেতে দেব না। বাংলা ছাড়া করব ওদের”।
এরপর তিনি বলেন, “বিজেপির ফ্ল্যাগ লাগানোর লোক পর্যন্ত নেই, খালি মুখেই মারিতং জগত। অন্যদিকে আমাদের নেত্রী যা যা বলেছেন তার সব করে দিয়েছেন। ভোট মিটলে ওদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। থেকে যাবেন শুধু মমতাই। তাই বন্যা দুর্গত অঞ্চলে একমাত্র মমতাই এক হাঁটু জলে নেম পরিদর্শন করতে গেছেন। আর মোদীর তো এমন অবস্থা যে শেষে সেনার নামে ভোট চাইছেন।২০১৯, বিজেপি ফিনিশ। ২৩মে ওরা বুঝবে তৃণমূল কি জিনিস! লড়ছে মমতা দেখছে দেশ আগামী দু মাসে মোদী শেষ। ওরা বলে ভারতমাতা কি জয়, আমি বলব ভারতীয় জনতা পার্টির মনে ঢুকে গেছে ভয়, ভারতমাতা কি জয়, দাঙ্গার রাজনীতি আর নয়। এখন রাম আর বাম এক হয়েছে। তোমার রাম আর তোমার বাম অস্ত্র হাতে মিছিল করে আর আমার দুর্গা উন্নয়নের ডালি নিয়ে বাংলার মানুষকে চাঙ্গা করে।মনে রাখেবন আপনারা ভোটটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দিচ্ছেন। জয় হোক বাংলার”। আজকের সভার এই বিপুল উচ্ছ্বাস বুঝিয়ে দিল মানুষ রয়েছে মমতার পাশেই।