বৃহস্পতিবার দার্জিলিংয়ের চকবাজারে দলীয় প্রার্থী অমর সিং রাই-এর হয়ে ভোটপ্রচারে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এবার যদি দার্জিলিং আসনে তৃণমূলের প্রার্থী জেতেন, তাহলে কথা দিচ্ছি, আগামী জিটিএ নির্বাচনের আগে গোর্খাদের আত্মপরিচয় ফিরিয়ে দেব।’ আর তৃণমূল নেত্রী যে তাঁর দেওয়া প্রতিটা প্রতিশ্রুতিই রাখেন তা ভাল মতোই জানে পাহাড়বাসী। ফলে মমতার ঘোষণায় আশায় বুক বাঁধছেন গোর্খারা। আসলে এবারের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে পাহাড়ে এবার গোর্খা জাতিসত্তার অধিকারই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে।
ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা ডিস্ট্রিক্ট ইমপ্রুভমেন্ট (ডিআই) ফান্ড পুনরায় চালু করার দাবির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে গোর্খা জাতিসত্তার প্রসঙ্গটি। পাহাড়ের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাজার ও হাটের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ হতো এই অর্থ। মূলত পাহাড়ের বাসিন্দা গোর্খারাই উপকৃত হতেন এই বরাদ্দে। একইসঙ্গে গুরুং, ভূজেল, নেওয়ার, খস, তামি সহ আরও বেশ কিছু পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর তফসিলি উপজাতি (এসটি) হওয়ার দাবিও নির্বাচনী প্রচারে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। প্রচারে প্রাধান্য পাচ্ছে গুরুং বাহিনীর আন্দোলনের সময় চা-বাগান শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ মেলার বিষয়টিও।
নির্বাচনী প্রচারের ফাঁকে পাহাড়বাসীর এহেন সব দাবি, সনদ আকারে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পৌঁছেও দিয়েছিলেন জিটিএ প্রধান বিনয় তামাং। বৃহস্পতিবার দার্জিলিং সেন্ট্রাল মোটর স্ট্যান্ডের উদ্বেল জনস্রোতকে এই দাবিগুলি নিয়ে আশ্বস্ত করলেন মমতা। দাবির প্রসঙ্গ তুলে যখনই তা নিয়ে সদর্থক পদক্ষেপ করার কথা শুনিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো, ততবারই সোল্লাসে ফেটে পড়েছে জনতা। জবাবে মমতা শুনিয়েছেন জয় গোর্খা আর জয় বাংলা স্লোগান।
মমতা বলেন, চা-বাগান শ্রমিকদের এই বিষয়টি মানবিকভাবে দেখব। যা করার ভোটের পরই করব। এখন নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি চালু রয়েছে। এমন কোনও কথা বলা যায় না, যা ভোটারকে প্রভাবিত করতে পারে। তার মাঝেই বলি, চা-বাগানের প্রজাপাট্টা দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য একটি রিভিউ কমিটি করা হয়েছে। ওই কমিটি রিপোর্ট দেবে। সেই রিপোর্ট দেখেই দীর্ঘদিনের এই বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে। জনতার উচ্ছ্বাস আর করতালির মধ্যেই তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের বিষয়টিও মাথায় রয়েছে। আদর্শ আচরণবিধির জন্য বলতে পারছি না, কিন্তু এটা অবশ্যই দেখব।
তিনি এ-ও জানান, ডিআই ফান্ডের বিষয়টি অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে। জনতার উচ্ছ্বাস থামতেই চাইছিল না। তারই মাঝে পানীয় জল সরবরাহ এবং গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সমস্যা মেটানোর জন্য প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে অনুরোধ করেন তিনি। দার্জিলিং সমস্যার স্থায়ী সমাধানকে নিজেদের নির্বাচনী ইস্তাহারে গুরুত্ব সহকারে রেখেছে তৃণমূল। কয়েকদিন আগে নকশালবাড়ির নির্বাচনী সভায় মমতার আর্জি ছিল, ভোটে জেতান। পাহাড় সমস্যার স্থায়ী সমাধান করব আমরাই।
গতকাল দার্জিলিংয়ের সভায় একধাপ এগিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, গোর্খা জাতিসত্তা যাতে আরও গুরুত্ব পায়, সেটা দেখাই আমাদের কাজ। সেই লক্ষ্যেই জিটিএ’র আগামী নির্বাচনের আগে দার্জিলিং নিয়ে চূড়ান্ত ফয়সালা করতে চাই। কী সেই ফয়সালা? জিটিএ চুক্তির পুনর্মূল্যায়নের ইঙ্গিত ঠারেঠোরে জমায়েতকে বুঝিয়ে দেন মমতা। অন্যদিকে, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহও গতকাল নির্বাচনী প্রচার করেছেন পাহাড়ের আরেক প্রান্ত কালিম্পংয়ে। পাহাড়বাসীর কথায়, ধারে-ভারে সেই সভা পৌঁছতে পারেনি দার্জিলিং শহরের জমায়েতের কাছে।
নাম না করে এদিন বিজেপি’র সর্বভারতীয় সভাপতিকে মমতার কটাক্ষ, বাগডোগরা থেকে উড়ে এসে সভা করবেন, আবার চলেও যাবেন। পাহাড় চেনেন, চেনেন এখানকার মানুষকে? বোঝেন মানুষের মান-অভিমান আর অনুভূতিকে? তাহলে কেন মানুষ ভোট দিতে যাবে বিজেপি’কে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে? মমতার আহ্বান— বদলে দিন, বদলে দিন, বিজেপিকে বদলে দিন। দার্জিলিং আসন তৃণমূলকে দিন। পাহাড় আর সমতলের প্রকৃত মেলবন্ধন ঘটাব আমরাই। তিনি এ-ও জানিয়ে দেন, এবার যদি দার্জিলিং আসনে তৃণমূলের প্রার্থী জেতেন, তাহলে কথা দিচ্ছি, আগামী জিটিএ নির্বাচনের আগে গোর্খাদের আত্মপরিচয় ফিরিয়ে দেব।