‘পথ চলাতেই আনন্দ’ তা সে জীবনের পথ হোক কিংবা কাশবনে মোড়া সত্যজিতের দুর্গা আর অপুর রেলগাড়ি দেখতে যাওয়ার পথ। আবার সে পথ হতেই পারে, নিশ্চিন্দিপুরের গ্রাম থেকে অপুর বেনারস চলে যাবার পথ। সব পথ আদতে জীবনের স্রোতে বয়ে যাওয়ার জন্য। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসের উপর নির্মিত সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ছবি ‘পথের পাঁচালী’-র নায়ক তাই পথ-ই। কিন্তু তা বলে চিনের অন্যতম বিখ্যাত বেজিং আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল (বিআইএফএফ)-এ ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ শ্রেণিতে স্থান হবে সত্যজিৎ রায়ের অপু ট্রিলজির? খুব স্বাভাবিক ভাবেই ভুরু কোঁচকাচ্ছেন সত্যজিতপ্রেমী থেকে সিনেমা বিশেষজ্ঞ অনেকেই। তাঁদের ক্ষোভ, সাহিত্যের গুণবিচারে কিংবা নন্দনতত্ত্বের নিরিখে ‘পথের পাঁচালী’র নায়ক ‘পথ’ হলেও কোনও ভাবেই এই ছবির বিআরআই-এর মতো একটি বিতর্কিত আর্থ-রাজনৈতিক বিষয়ে অন্তর্ভুক্তিকরণ মানা যায় না।
১৯৫৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘পথের পাঁচালী’ সে অর্থে ভারতীয় ছবির জগতে প্রথম আন্তর্জাতিক ছোঁয়া নিয়ে আসে। ১৯৫৬ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘বেস্ট হিউম্যান ডকুমেন্ট’ উপাধি পায় সেটি। ‘অপরাজিত’ কিংবা ‘অপুর সংসার’ সেই ঐতিহ্যের ধারা বহন করছে। এ হেন আন্তর্জাতিক মানের ছবি কী ভাবে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ শ্রেণিভুক্ত হয়, বিষয়টি ভুল নাকি ইচ্ছাকৃত ভাবে করা তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে। তবে বেজিং-এর তথ্য দফতর এবিষয়ে মুখ খোলেনি।
চিনের প্রকল্প বেল্ট অ্যান্ড রোড। এর মাধ্যমে নানা দেশে রাস্তা তৈরি করে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নততর করতে চায় চিন। কিন্তু ভারত সার্বভৌমত্ব বিঘ্নিত হতে পারে এই যুক্তিতে প্রকল্পে যোগ দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে। আগামী ১৩ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত চলা ওই চলচ্চিত্র উৎসবে ওই নামেই একটি বিশেষ শ্রেণিতে অপু ট্রিলজি-সহ আরও কিছু ভারতীয় ছবি দেখানোর বন্দোবস্ত করেছেন উৎসব কর্তৃপক্ষ। ‘পথের পাঁচালী’, ‘অপরাজিত’, ‘অপুর সংসার’ দেখানো হবে। উৎসব শেষ হবে শাহরুখ খানের ছবি ‘জিরো’ দিয়ে। কিন্তু বিতর্কের মূল কেন্দ্রে রয়েছে অপু ট্রিলজি। তবে অনেক মানুষের বক্তব্য, বিআইএফএফ-এর মতো উৎসবে কেন সত্যজিৎ রায়ের ওই কালজয়ী ছবি নিয়ে এমন একটা ‘ছেলেখেলা’ হবে।