একেবারে দোরগোড়ায় লোকসভা নির্বাচন। এই মুহূর্তে প্রায় গোটা দেশই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেশের প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে দেখতে চান। এরই মধ্যে এবার ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন) এ রাজ্যে তাদের ভক্তদের আগামী লোকসভা নির্বাচনে মমতার পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাল। এক ভিডিও বার্তায় ইসকনের পক্ষ থেকে ভক্তদের কাছে আর্জি জানান হয়েছে, সংগঠনের সঙ্কটের সময় যিনি আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, সাহায্য করেছিলেন, এবারের ভোটে সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভোট দিন।
প্রসঙ্গত, ২ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিও বার্তায় ইসকন এবং তার সদর দপ্তর মায়াপুরের নির্মীয়মাণ ‘মহামন্দির’ এবং প্রস্তাবিত ‘আন্তর্জাতিক শহর’ যাকে ভবিষ্যতের রিলিজিয়াস হাব হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, তার বিবরণ রয়েছে। যে সব বাধা পার করে ইসকনের এই দুই স্থাপত্য তৈরি হচ্ছে, তা অতিক্রম করার ক্ষেত্রে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কী ভূমিকা ছিল, তাও ব্যাখ্যা করা হয়েছে ভিডিও বার্তায়। বার্তায় বলা হয়েছে, বছরের পর বছর ধরে ইসকন ভক্তরা স্বপ্ন দেখছিলেন শ্রীধাম মায়াপুরে একটি ‘মহামন্দির’ স্থাপনের।
কিন্তু এর আগে একাধিকবার দরবার করেও সেই বিষয়ে কোনও সদর্থক পদক্ষেপ মিলছিল না রাজ্য সরকারের তরফে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এই বিষয়ে দরবার করায় তিনি পাশে এসে দাঁড়ান। ওই মহামন্দির নির্মাণের জন্য ল্যান্ড সিলিং তুলে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যার ফলে এখন ২০০ একর জমিতে তৈরি হচ্ছে গ্র্যান্ড টেম্পল। একইভাবে মায়াপুরেই ৭৫০ একর জমিতে গড়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক মানের এক শহর। মুখ্যমন্ত্রীর সাহায্য ছাড়া তা অসম্ভব ছিল। এই শহর ভবিষ্যতে গোটা বিশ্বে রিলিজিয়াস হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।
২০১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি নদিয়া সফরের সময় মায়াপুর গিয়েছিলেন মমতা। কৃষ্ণভক্তদের অন্যতম আকর্ষণ মায়াপুরে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিলেন অম্বরীশ প্রভু-সহ গভর্নিং বডির অন্য সদস্যরা। সেখানেই ইসকনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়। এরপর মুখ্যমন্ত্রী দর্শন করেন পঞ্চতত্ত্ব, শ্রীরাধামাধব এবং প্রভু নরসিমাদেবের মন্দির। পুজোও দেন। এরপর ওইদিনই নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে মায়াপুর দর্শন নিয়ে একটি টুইট করে তিনি লেখেন, ইসকনে আসাটা এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা। দেশ-বিদেশের ভক্তদের অন্যতম গন্তব্য এই মায়াপুর। তার উন্নতি সাধনে ইসকন কর্তৃপক্ষ সাহায্য চেয়েছে। তাদের সাহায্য করলে আমরা খুশি হব।
উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রীর ওই সফরের কিছুদিনের মধ্যেই ল্যান্ড সিলিং প্রক্রিয়ার জট কাটিয়ে দ্রুতগতিতে শুরু হয়ে যায় ইসকনের মহামন্দির নির্মাণের কাজ। মুখ্যমন্ত্রীর এ হেন সাহায্যের কথা যে ভোলেনি ইসকন, তার প্রমাণই মিলল তাদের ওই ভিডিওবার্তায়। নির্বাচনের প্রাক্কালে ইসকনের তরফে মমতাকে সমর্থন করার আহ্বান জানান এই ভিডিওবার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তারা বলছে, তাদের পাশে যেভাবে দাঁড়িয়েছেন মমতা, তাতে আপ্লুত ও কৃতজ্ঞ ইসকন। নিজেদের সেই কৃতজ্ঞতাই লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে মমতাকে ভোট দেওয়ার আহ্বানের মধ্যে দিয়ে জানিয়েছে তারা।
তবে শুধু ইসকনই নয়, ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম তীর্থস্থান রাজস্থানের আজমির শরিফের খাজা মইনুদ্দিন চিস্তির দরগা ট্রাস্টের তরফেও আগামী লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল সুপ্রিমোর সাফল্য কামনা করে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে যে বার্তা দরগা ট্রাস্ট দিয়েছে, তাও এই রাজনৈতিক আবর্তে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।