সকাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখছিলাম থেকে থেকে মোদির ঘোষণা দেশবাসীর জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ খবর আসছে। আমাদের সবাইকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় রেখে অবশেষে দুপুরে মোদি ঘোষণা করলেন ভারত অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিশন মিসাইল দিয়ে একটা অব্যবহৃত স্যাটেলাইটকে গুলি করে নামিয়েছে। এ যেন পর্বতের মূষিক প্রসব! বিশ্ব নাট্যদিবসে আমাদের একটা আকাশনাট্য উপহার দিলেন তিনি। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা মিলিয়ে দেশের সব সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হওয়া মোদি এখন নাটকীয় শক্তি প্রদর্শনেই ভোট বৈতরণী পার হতে চাইছেন। আমার মতে, নাটকীয়তা ছাড়া মোদির হাতে আর কোন অস্ত্র নেই।
![নাটুকে মোদি... অশোক মজুমদার 2 55593282 836977799984102 5905723831800037376 n](https://ekhonkhobor.com/wp-content/uploads/2019/03/55593282_836977799984102_5905723831800037376_n.jpg)
ব্যাপারটা একটু খুলে বলি। লো অরবিটে ঘোরা একটি অব্যবহৃত লাইভ স্যাটেলাইট, এ-স্যাটকে অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিশন মিসাইল দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। এই ঘটনাটাকেই চরম নাটকীয়তার রঙ চড়িয়ে মোদি বর্ণনা করেছেন এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে ভারত মহাকাশ শক্তিতে বিশ্বে চতুর্থ স্থান অর্জন করল। ইন্ডিয়া হ্যাড জয়েনড দ্য এলিট ক্লাব অব স্পেস পাওয়ার। অন্যান্য শক্তিগুলি হল, আমেরিকা, রাশিয়া ও চিন। এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে মিশন – শক্তি। বোঝো ব্যাপারখানা! আমার মনে হয়, দেশের প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীদের একটা পরীক্ষাকে নাটকীয়তার রঙ চড়িয়ে নিজের ব্র্যান্ড নির্মাণ করার চেষ্টা করলেন তিনি। ব্যাপারটাকে আরও সিরিয়াস করে তোলার জন্য তিনি ডিফেন্স রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
বাংলার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, এই ঘোষণার মধ্যে দিয়ে নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করেছেন মোদি। হাস্যকর এই অতি নাটকীয়তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে দেশের অন্যান্য বিরোধী দলগুলিও। তাদের মতে বিজ্ঞানীদের একটি পরীক্ষাকে এভাবে নিজের প্রচারে ব্যবহার করা যায়না। ব্যাপারটা তারা নির্বাচন কমিশনকে জানাবেন। মোদি বলেছেন, দেশের আজ গর্বের দিন। দেশকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করতে চাইছি আমরা। ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের মানুষের গর্ব করার মত কোন কাজ কী তার সরকার করেছে? ফসলের উপযুক্ত দাম না পেয়ে কৃষকদের আত্মহত্যা, বিমুদ্রাকরণের ফলে গরীব মানুষদের সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়া এবং আর্থিক ও মানসিক আঘাত সামলাতে না পেরে মৃত্যুর ঘটনা, ধর্মের ভিত্তিতে দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি ছাড়া মোদি সরকার আমাদের আর কিই বা দিতে পেরেছে? ক্ষমতায় থাকার জন্য ইতিহাস, ভূগোল সবকিছুকেই বিকৃত করেছে এই সরকার। এখন তারা প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানের সাফল্যকেও নিজেদের মত করে ব্যাখ্যা করে ভাবমূর্তি নির্মাণ করতে চাইছেন।
এ ঘোষণাটা এমনি এমনি হয়নি। পুলওয়ামা, বালাকোটের পর থেকেই গোটা দেশজুড়ে একটা যুদ্ধোন্মাদনা তৈরি করতে চাইছে বিজেপি। প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীদের পরীক্ষাকেও সে কাজে ব্যবহার করা হল। কেউ এ ঘটনার প্রতিবাদ করলেই তাকে দেশদ্রোহী হিসেবে দেগে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশের ভবিষ্যৎ মানে যুদ্ধ নয়, বরং তা তৈরি হয় শিক্ষায়, স্বাস্থ্যে, অর্থনৈতিক সংস্কারে। তিনটি ক্ষেত্রেই ব্যাপক ব্যর্থতার পর তা ঢাকতে দেশপ্রেমের নামে একটা যুদ্ধোন্মাদনা তৈরি করতে চাওয়া হচ্ছে।
তবে মোদির এই নাটকটা কিন্তু শুধুই লোক হাসানো খোরাক হয়েই রইলো। আমার মনে পড়লো, আগেকার দিনে রাজা মহারাজারা নিজেদের বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য নিজেদের বেতনভূক পেশাদার শিকারীদের মারা বাঘের গায়ের ওপর পা চাপিয়ে ছবি তুলতেন। হয়তো ভবিষ্যতে আমরা দেখবো মিসাইল দিয়ে ধ্বংস করা স্যাটেলাইটটির ধ্বংসাবশেষের ওপর মোদির পা চাপিয়ে তোলা ছবি।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত