লোকসভা নির্বাচন শুরু হতে বাকি আর মাত্র ১৭ দিন। আগামী ১১ এপ্রিল হবে প্রথম দফার ভোট গ্রহণ। তবে ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই দেশজুড়ে বাড়ছে ভুয়োর রমরমা! কখনও ভাইরাল ভুয়ো খবর, কখনও বা ছবি। সম্প্রতি বাংলার বিজেপি সমর্থকদের একটি পেজ থেকে গঙ্গার দু’রকম ছবি দিয়ে একটি কোলাজ শেয়ার করা হয়। ওপরের ছবিটি ছিল জঞ্জালে ভরা। তাতে লেখা, কংগ্রেস আমলে গঙ্গা। দ্বিতীয় ছবিটি ছিল পরিচ্ছন্ন গঙ্গার। সেই ছবিতে জুম করে বসানো প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরার ছবি। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, প্রিয়াঙ্কা আঁজলা ভরে জল খাচ্ছেন। ছবিতে লেখা, মোদীর আমলে গঙ্গা। এই দুই ছবির কোলাজই ওই পেজ থেকে ফেসবুকে অজস্র শেয়ার হয়েছে, ছড়িয়েছে হোয়াটসঅ্যাপেও।
কিন্তু শুক্রবার ভুয়ো খবর যাচাই করার একটি সংস্থা পরীক্ষা করে জানায়, গঙ্গায় নৌকাযাত্রায় গিয়ে প্রিয়াঙ্কার সাম্প্রতিক একটি ছবির সঙ্গে ২০১২ সালে গঙ্গার ছবি মিশিয়ে দ্বিতীয় ছবিটি তৈরি হয়েছে। সেটাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়েছে বিজেপি-সমর্থকদের ওই পেজ। তবে কেবল সমর্থকরাই নন, ভুয়ো খবর ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে বিশিষ্টজন মধু কিশ্বরের বিরুদ্ধেও। ২১ মার্চ মধু একটি টুইটে ডিএমকের সাম্প্রতিক ইস্তাহারের ৮৫ এবং ১১২ পৃষ্ঠা উদ্ধৃত করে দাবি করেন, যাঁরা মন্দিরের দখলে থাকা জমি ভোগ করছেন সেগুলি নথিভুক্ত করে মালিকানা হস্তান্তর করা হবে।
একই টুইটে মধু দাবি করেন, ওই ইস্তাহারেই নাকি রয়েছে, ওয়াকফের দখল করা সম্পত্তি উদ্ধার করে ওয়াকফকে হস্তান্তর করা হবে। মধু টুইটটি শেয়ার করার পর থেকেই বিজেপি সমর্থকেরা সেটি শেয়ার করতে থাকেন। যদিও টুইটারেই একজন জানিয়ে দেন, মধুর উদ্ধৃত করা অংশটি ডিএমকের ২০১৬-র বিধানসভার ইস্তাহারের অংশ। এবারের ইস্তাহার ৮০ পাতারও কম। ডিএমকের তরফেও দাবি করা হয়, মধু টুইটে ভুল তথ্য দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন। মধুর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনেও অভিযোগ জানানো হয়।
বিতর্ক বেধেছে ‘চৌকিদার’দের ভিডিও ঘিরেও। টুইটারে নামের আগে চৌকিদার জুড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এক বিজেপি নেতার আপলোড করা ২০ মার্চের ওই ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে একদল বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী স্লোগান দিচ্ছেন, ‘মোদীজির সঙ্গে আছি, আমরাও চৌকিদার!’ ভিডিওটি নিজে শেয়ার করে নরেন্দ্র মোদী টুইটারে লেখেন, ‘রকস্টার চৌকিদার। এটা দেখে খুব খুশি হয়েছি।’ কেবল ওই ভিডিওই নয়, বিজেপি-সমর্থক আরও একাধিক পেজ থেকে এমন নিরাপত্তারক্ষীদের ভিডিও আপলোড করা হয়। তবে এমন সব ভিডিওর স্বতঃস্ফূর্ততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে একটি ওয়েবসাইট।
তাদের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর শেয়ার করা ভিডিওয় যে সংস্থার রক্ষীদের দেখা গিয়েছে, সেই সংস্থার মালিক একসময় বিজেপিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। যদিও সংবাদমাধ্যমে তিনি দাবি করেছেন, সক্রিয় রাজনীতি ছেড়ে দিলেও তিনি মোদীর সমর্থক। ভাইরাল হওয়া এমন আরও ভিডিওয় যে সব সংস্থার রক্ষীদের দেখা যাচ্ছে, সেই সব সংস্থার কর্ণধারদের মধ্যে বিজেপির এক বিধায়ক ও এক রাজ্যসভার সাংসদও রয়েছেন বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। বিধায়কের দাবি, তাঁর সংস্থার রক্ষীরা যে এমন ভিডিও করেছেন তা তিনি জানতেন না। সাংসদের দাবি, সংস্থার কর্মচারীরা স্বেচ্ছায় ওই ভিডিওর জন্য স্লোগান দিয়েছেন। অর্থাৎ, এবার আর ভুয়ো প্রতিশ্রুতিতে থেমে না থেকে, ভুয়ো ছবি, ভুয়ো খবর, আর নিজেদের গুণগান করা ভিডিওর আশ্রয় নিচ্ছে ভোটে জিততে মরিয়া বিজেপি।