বহু টালবাহানার পর অবশেষে বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে প্রথম দফার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিজেপি। যার মধ্যে রয়েছে বাংলার ৪২টির মধ্যে ২৮টি আসনের প্রার্থীদের নাম। তবে প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগে রাজ্যের গেরুয়া শিবিরের অন্দরে যে গোষ্ঠীকোন্দল চলছিল, প্রার্থী ঘোষণার পর তা বাড়ল বই কমল না। গতকাল সকালেই এবিএন শীল কলেজের সামনে একটি ফেস্টুন দেখা গিয়েছিল। সেখানে লেখা ছিল, ‘দিনহাটার স্মাগলার নিশীথ প্রামাণিক বিজেপির প্রার্থী হলে একটিও ভোট নয়’। নোটা-য় ভোট দেওয়ার জন্যও আবেদন জানানো হয়েছিল। সন্ধ্যায় দিল্লী থেকে বিজেপির কোচবিহারের প্রার্থী হিসেবে সেই নিশীথের নাম ঘোষণা করতেই সেই ফেস্টুন নিয়ে শুরু হয়ে গেল বিজেপি কর্মীদের একাংশের বিক্ষোভ।
দিনকয়েক ধরেই অপেক্ষায় বসেছিলেন বিজেপি কর্মীরা। দোলের দিন সকাল থেকে দলের দফতরে ভিড় জমছিল। সন্ধ্যায় দিল্লীতে বিজেপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণার সময়ে বিজেপির কোচবিহার জেলা সভানেত্রী মালতী রাভা দলীয় দফতরেই ছিলেন। তাঁকে ঘিরেই বিক্ষোভ দেখান দলের নেতা-কর্মীরা। শুধু তাই নয়। দফতরের ভিতরে চলে ভাঙচুরও। অন্যদিকে, যাঁকে নিয়ে ক্ষোভ, সেই সেই নিশীথ প্রামাণিক এখন দিল্লীতে। আজ, শুক্রবার তাঁর কোচবিহারে পৌঁছনোর কথা। বিক্ষোভের খবর পেয়ে ড্যামেজ কন্ট্রোলে দিল্লী থেকেই তিনি বলেন, ‘ঠিক কী হয়েছে, জানি না। তবে এটা সাময়িক ব্যাপার। সবাই একসঙ্গে মিলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত শক্ত করাই আমাদের লক্ষ্য।’
গোটা ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ জেলা বিজেপি সভানেত্রী মালতী রাভা। জানান, তিনি বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন। অন্যদিকে, দলের কোচবিহার জেলার প্রাক্তন সভাপতি হেমচন্দ্র বর্মণ এড়িয়ে যেতে বলেন, তিনি এই বিষয়ে মন্তব্য করতে চান না। প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাস ধরেই নিশীথকে নিয়ে দলের অন্দরে ক্ষোভ চরমে। আসলে এর আগে যুব তৃণমূলের কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর তাঁকে বহিষ্কার করে তৃণমূল। তাঁর বিরুদ্ধে তখন তলায় তলায় বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ ছিল। বাড়ির কাছে গণেশ পুজোয় কোটি টাকা খরচ, ব্যক্তিগত দেহরক্ষী ও কুড়িটির বেশি গাড়ির ‘কনভয়’ নিয়ে জেলায় ঘুরে বেড়ানো ইত্যাদি নিয়েও চর্চায় ছিলেন তিনি।
তাঁর এই বৈভবের কারণে যাতে জনমানসে যাতে তৃণমূলের সম্পর্কে খারাপ বার্তা না যায়, তাই নিজেদের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে তাঁকে বহিষ্কৃত করেছিল ঘাসফুল শিবির। এবং তারপরই তৃণমূল থেকে ঘাড় ধাক্কা খাওয়া নিশীথকে দলে টানে গেরুয়া শিবির। তখনই জেলার নেতৃত্বের একাংশের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছিল। আর গতকাল প্রার্থী হিসেবে নিশীথের নাম ঘোষণা হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে তাঁরা।
অন্যদিকে, দলীয় কার্যালয়ে বিজেপির কর্মীদের ব্যাপক ভাঙচুরের পর বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বৈঠকে বসে জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। জেলার সভানেত্রী, সহ সভাপতি, জেলা সম্পাদক ছাড়াও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরাও। বৈঠকে প্রার্থী পদের জন্য দীপক বর্মনের নাম প্রস্তাব করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। শুক্রবারই প্রার্থী পদের জন্য মনোনয়নপত্র তুলবেন দীপক বর্মন। বিষয়টি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতাদের জানানো হবে বলেও জেলা কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।