‘আচ্ছে দিন’-এ বসে গেছে জেট এয়ারওয়েজের ৭৮টি বিমান। কারণ বহুদিন ধরেই আর্থিক সমস্যায় ভুগতে ভুগতে এখন ঋণে জর্জরিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিমান পরিবহণ সংস্থাটি। পরিস্থিতি এমনই যে তিন মাস বেতন পাননি পাইলট ও ইঞ্জিনিয়াররা। তাই আর কোনও উপায় না দেখে বাধ্য হয়েই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে চিঠি লিখে নিজেদের অবস্থার কথা জানালেন জেটের বিমানচালক ও ইঞ্জিনিয়াররা। ক্ষোভ উগড়ে দেওয়ার পাশাপাশি তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন, তিনি যেন এবার অন্তত এই বিষয়ে নজর দেন।
জেটের বিমানচালকদের ট্রেড ইউনিয়ন ন্যাশনাল অ্যাভিয়েটরস গিল্ড (ন্যাগ)–এর তরফে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা আশঙ্কা করছি যে কোনও মুহূর্তে এই সংস্থা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এরকম হলে হাজার হাজার লোক কর্মহীন হয়ে পড়বে। জেট এয়ারওয়েজ বন্ধ হয়ে গেলে বিমানের সংখ্যা কমে যাবে। ফলে ভাড়া বাড়বে। যাত্রীদেরও সমস্যার মুখে পড়তে হবে। আপনি ব্যবস্থা নিন।’ উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগেই জেট এয়ারওয়েজ পাইলটরা হুমকি দিয়েছিলেন, ৩১ মার্চ পর্যন্ত বকেয়া বেতন না দেওয়া হলে ১ এপ্রিল থেকে আর কাজ করবেন না তাঁরা।
প্রধানমন্ত্রী ও অসামরিক বিমানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে এও লেখা রয়েছে, ‘বিমানসংস্থার পাইলট ও ইঞ্জিনিয়াররা প্রায় তিনমাস ধরে বেতন পাননি। বাকি সবাই বেতন পেয়েছেন। আমরা বারবার সংস্থাকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। এই অবস্থার ফলে পাইলট ও ইঞ্জিনিয়ারদের আর্থিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পাইলটরা নিজেদের কর্তব্য করছেন। বিমান ওড়াচ্ছেন তাঁরা। ফলে এখনও বিমানসংস্থা চলছে। কিন্তু এ ভাবে আর কতদিন? পাইলটরা মানসিকভাবেও বিধ্বস্ত। এই অবস্থায় যাত্রীদের সুরক্ষা নিয়ে কোনও সমস্যা হোক, সেটা কোনও ভাবেই আমরা চাই না।’
নরেশ গোয়েলের এই সংস্থা গত ২৫ বছরে সবথেকে খারাপ আর্থিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। প্রায় সাত হাজার কোটি টাকার দেনায় চলছে এই সংস্থা। ইতিমধ্যেই ব্যাঙ্ক, সাপ্লায়ারদের কাছে অনেক টাকা দেনা হয়ে গিয়েছে। এর ফলে ১১৯ থেকে কমে বিমানসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪১-এ। অসামরিক বিমানমন্ত্রকের তরফে ইতিমধ্যেই জেট এয়ারওয়েজকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে যাত্রীদের সুবিধার জন্য বিমানের সংখ্যা বাড়ানো হয়। না বাড়াতে পারলে যাত্রীদের টাকা ফেরতের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের অধীনে থাকা বিভিন্ন ব্যাঙ্কও জেট এয়ারওয়েজের এই দেনা মেটাতে সাহায্য করছে। এছাড়াও জেট-এর অন্যতম পার্টনার আবু ধাবির এতিহাদ এয়ারলাইন্সের কাছেও সাহায্যের আবেদন জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ বেড়েছে কেন্দ্রীয় সরকারেরও। নির্বাচনের আগে জেট কর্তৃপক্ষ নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাবমূর্তি যে নষ্ট হবে, তা বলাই বাহুল্য। কারণ তাতে যেমন একধাক্কায় বিমান যাত্রার খরচ অনেকটাই বেড়ে যাবে। তেমনি জেটের প্রায় ২৩ হাজার কর্মী কর্মহারা হবেন। যা দেশে বেকারত্বের হার আরও খানিকটা বাড়িয়ে দেবে। তাই মোদী এখন কী ব্যবস্থা নেন সেটাই দেখার।