বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন ভোটে জিততে নীতি-আদর্শের তোয়াক্কাই করবে না তাঁর দল। সেই পথ ধরেই রাজ্যে আসন বাড়াতে দল ভাঙানোর খেলায় নেমেছে গেরুয়া শিবির। এমনকি বিভিন্ন দল থেকে বহিষ্কৃত নেতানেত্রী এবং গুন্ডাদেরও দলে ঠাঁই দিচ্ছে তারা। তবে বিজেপির এই ঘৃণ্য রাজনীতিকে রুখে দিতে বদ্ধপরিকর তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৪২-এ ৪২টি আসন পাওয়াই যে তাঁর মূল লক্ষ্য, সেকথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। দলনেত্রীর লক্ষ্যপূরণের উদ্দেশ্যে এবার পুরদলের নেতা তথা কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম সাফ জানিয়ে দিলেন, তৃণমূলের প্রার্থীকে জয়ী করতেই হবে। সেই কাজে যে ওয়ার্ডের কাউন্সিলারই ব্যর্থ হবেন, সেখানে ভবিষ্যতে তাঁকে আর টিকিট দেওয়া হবে না।
ফিরহাদের এই ঘোষণা দলের কাউন্সিলররা আরও তৎপর হয়ে উঠেছে। কিছু কাউন্সিলার ইতিমধ্যেই, তাঁদের ওয়ার্ডের ভোট পরিচালনার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে চেয়েছেন। সেই বার্তা তাঁরা মেয়রের কাছে পৌঁছেও দিয়েছেন। দলের এই ঘোষণায় একটা বিষয় পরিষ্কার, আগামী দিনে টিকিট পাওয়ার জন্য কাউন্সিলরদের প্রত্যেককেই দলনেত্রীর লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রাণপাত করতে হবে। দলীয় প্রার্থীকে জেতাতে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এই মুহূর্তে বহু কাউন্সিলারই দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে দেওয়াল লিখন, প্রার্থীকে নিয়ে প্রচারে নেমে পড়েছেন। শুরু হয়ে গেছে বুথ কমিটি গঠন। একই সঙ্গে বুথ অনুযায়ী এজেন্ট তৈরির কাজ। যাঁদের ভালো করে স্ক্রুটিনি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শুধু তাই নয়। দলীয় সূত্রে খবর, ভোটের জন্য গোটা মেশিনারি সাজাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তৃণমূল স্তরে। সব বিরোধী যখন প্রার্থী ঘোষণা করতে পারেনি, তৃণমূল তখন প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচারে নেমে পড়েছে। রাজ্যে ১২৬টি পুরসভার মোট কাউন্সিলারের সংখ্যা ৩৬০০। তার মধ্যে প্রায় ৩৫০০ কাউন্সিলার তৃণমূলের। এই কাউন্সিলাররাই দলের স্থানীয় স্তরে প্রধান মুখ। তাঁরাই মূলত দলের সংগঠন করেন। তাই দল একটা বিষয় বুঝতে পারছে, কাউন্সিলারদের ব্যবহার, আচার-আচরণ, দৈনন্দিন জীবনযাপনের স্টাইল, সাংগঠনিক ক্ষমতা মানুষের মধ্যে বিরাট প্রভাব ফেলে। কিছু কাউন্সিলারের জনসংযোগ ক্ষমতাই দলকে শক্তিশালী করেছে, ভোট বেড়েছে। সেই কথা মাথায় রেখেই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাউন্সিলারদের আরও চাঙ্গা করতে চাইছেন বলে ধারণা।
অন্যদিকে, লোকসভা ভোট মিটলেই দু’-এক মাসের মধ্যে হাওড়া, চন্দননগর, পানিহাটি, হাবড়া, ডায়মন্ডহারবার, বর্ধমান, বহরমপুর সহ ১৮টি পুরসভার ভোট হবে। আর আগামী বছর মে-জুন মাসে কলকাতা, সল্টলেক, দক্ষিণ দমদম, দমদম, বরানগর, কামারহাটি, মধ্যমগ্রাম, বারাসত, খড়দহ, টিটাগড়, বারাকপুর, উত্তর বারাকপুর, ভাটপাড়া, নৈহাটির মতো বড় পুরসভা সহ ৮২টি পুরসভার ভোট রয়েছে। তাই লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল কাউন্সিলারদের পারফরম্যান্সের ক্ষেত্রে বড় মাপকাঠি হিসেবে চিহ্নিত হবে। সেই কারণে আগামী পুরভোটের কথা মাথায় রেখে কাউন্সিলারদের এখন থেকেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনসংযোগ বৃদ্ধির উপরে জোর দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর পাশাপাশি, রাজ্য সরকারের যেসব জনমুখী প্রকল্প রয়েছে, তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেও কাউন্সিলারদের বলা হয়েছে। তবে শুধু কাউন্সিলারদেরই নয়, তাঁদের মতো পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদেরও তাঁদের নিজেদের আসনে লিড দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের উপর নিচুতলার নেতাদের যে ভাগ্য নির্ভর করছে, সেটাই পরিষ্কার করে দিয়েছে দল।