অপারেশনের পর এই একমাস হল রানা স্টিক দুটো ছাড়া হাঁটতে শুরু করেছে।প্রচন্ড কষ্ট হয় নতুন হাঁটু দুটোর উপর ভর করে হাঁটতে। বিশেষ করে সিড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে প্রাণটা যেন বেড়িয়ে যায় অসহ্য ব্যাথায়।কিন্তু বরাবরের মতো মুখে তার ছাপটা পড়তে দেয়না রানা।যেকোন যন্ত্রণাকে চেপে রেখে ভাবলেশ হীন থাকার ক্ষমতাটা ওর জন্মগত।সেই কোন ছোটবেলায় ক্লাস টু তে পড়ার সময় ফুটবল খেলতে গিয়ে ডান হাতের কব্জিটা ভেঙে ছিল,ভাঙা হাতেই অঙ্ক পরীক্ষা দিয়ে তারপর মা’র সঙ্গে ইডিএফ হাতে প্লাস্টার করতে গেছিল রানা। জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই ফুটবল নামক গোলাকার বস্তুটির প্রতি ওর ছিল আদম্য আকর্ষণ,প্রাণের থেকেও বেশি ভালোবাসত খেলাটাকে। স্কুল কলেজ এমনকি চাকরি জীবনের মধ্যভাগ পর্যন্ত ফুটবল খেলাটা ছিল নেশার মতো।
“বাবি,এই ব্যাথা নিয়ে তুই আজ আবার নিচে নামছিস?ডাক্তার তোকে হাঁটাচলা করতে বলেছে মানে এই নয় যে তুই রোজরোজ নিচে নেমে এতটা পথ হেঁটে মাঠে যাবি।”মায়ের গলার আওয়াজে চিন্তায় ছেদ পড়ে রানার।নিজের অভিব্যক্তি গুলোকে যতই লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করুক না কেন,ভালোবাসার মানুষগুলোর চোখকে ফাঁকি দেওয়া খুব কঠিন।আর সত্যি কথা বলতে ওর কাছে এই পথটা এখন অনেক টাই,প্রায় পনেরো কুড়ি মিনিট লেগে যায়।অথচ একটা সময়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ফুল স্পীডে টিটোদের পাঁচিলটা টপকে দেবালয়ের গলিটা দিয়ে পাঁচ মিনিটের রাস্তা তিন মিনিটে পৌঁছে যেত ও।আর আজ?রাস্তায় নেমে হাঁটতে হাঁটতে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস পড়ে রানার মুখ থেকে।
মাঠে পৌঁছে ধীরে ধীরে তারকেশ্বর সেনের মূর্তিটা ক্রস করে প্রিয় রাইট ব্যাকের পজিশনটাতে এসে দাঁড়ালো ও।প্রতি বারের মতো একটা ঠাণ্ডা হাওয়া এসে ঝাপটা এসে মারল মুখে,সঙ্গে একরাশ ধূলো।অভ্যাস মতো মাথার চুলটা ঝাকিয়ে ধূলোটা ঝেড়ে নেয় রানা।কবে থেকে এই খেলাটা চলছে ওদের মধ্যে?সেই প্রথম যেদিন ও দাদুর হাত ধরে মাঠে এসেছিল,সেদিন থেকেই বোধহয়।ঝাকড়া চুল ওয়ালা বছর চারেকের একটা ছেলে প্লাস্টিকের বল নিয়ে সারা মাঠময় দৌড়ে বেড়াচ্ছে, ঝটাঝট ডিগবাজি খাচ্ছে মাঠের মধ্যে,সারা গায়ে মাথায় ধূলোবালি মেখে মাঝে মাঝে লম্বা চুলগুলোকে ঝাকিয়ে নিচ্ছে,ছবিটা এখনও স্পষ্ট ভেসে ওঠে চোখের সামনে। তারপর কত দিন,কত বছর,কত শীত গ্রীষ্ম বর্ষা সেই ছেলেটা এই মাঠটার বুকে বল পায় দাপিয়ে বেড়িয়েছে। হিসাব করে দেখলে প্রায় তিন দশক। ওর খেলোয়াড় জীবনের কত যুদ্ধ জয়ের উল্লাস,পরাজয়ের বেদনা,কত সুখ দুঃখের স্মৃতি বহন করে বেড়াচ্ছে এই মাঠটা।কত ভালো ম্যাচ,কত ভালো গোল আছে ওর মাঠটাতে।মনে আছে একবার ক্লাব লিগে দুজন প্ল্যায়ার কম নিয়ে সেমিফাইনালে জিতে ছিল ওরা।একবার সিনিয়র জুনিয়র খেলায় সেন্টার লাইন থেকে সাইড ভলি করে দুর্ধর্ষ একটা গোল করে ছিল ও,আজও খেলা নিয়ে কথা উঠলে বাবুসোনাদা ওর ঔ গোলটার কথা বলে।নাইনটি ওয়ান বা টু হবে,সেবার পুরো টুর্নামেন্টে ভালো খেলে ফাইনালে ওর পেনাল্টি মিসের জন্য টিম হেরে যায়,খেলার শেষে সে দিন প্রচন্ড কান্না পেয়েছিল কিন্তু একফোটা চোখের জল ফেলেনি রানা। জেতার আনন্দের পাশাপাশি পরাজয় এর কষ্টটাকে সহ্য করার মত স্পোর্টসম্যান স্পিরিট বরাবর ছিল ওর মধ্যে।তবে হারের বদলা মাঠেই নিয়ে ছিল পরের বছর, সঙ্গে ম্যাচ অফ দি টুর্নামেন্টের ট্রফিটা। সিরিয়াস খেলার ফাঁকে হঠাৎ ঘটে যওয়া কছু মজার ঘটনার কথাও মনে পড়ে যায়।যেমন লালুদার স্বভাব ছিল মাঠে কর্নার,থ্রো,ফ্রী কিক যাই হোক না সেটা করার জন্য এগিয়ে যাওয়া,তা থেকে ওনার নামই হয়ে গিয়েছিল “দে ভাই দে”।একবার গোলকিপার বাবুল দা থ্রো করতে গিয়ে নিজের গোলেই বল ঢুকিয়ে দিয়ে ছিলেন।দৃশ্যটা ভেবেই হাসি পেল রানার।
আজকাল অনেকক্ষণ একটানা দাড়িয়ে থাকতে পারে না ও।তাই তারকেশ্বর সেনের মূর্তির বেদীটাতে এসে বসে রানা।উদাস দৃষ্টিতে তাকায় মাঠটার দিকে,যার প্রতিটি ধূলি কণা,প্রতিটা ঘাস ওর বড়ো চেনা,এক মধুর ভালোবাসার সম্পর্ক ওদের সাথে।ছোট থেকেই ফুটবলের প্রতি তীব্র আকর্ষণের জন্যই বোধ হয় ভালো করে খেলাটা শেখার, ভালো খেলার প্রচন্ড একটা তাগিদ কাজ করত ওর মধ্যে।ভালো খেলার জন্য অল্প দিনের মধ্যেই কোচ ভানু হালদারের প্রিয় পাত্র হয়ে উঠেছিল রানা,তখন ওর বয়স ছয় বা সাত।ফুটবল খেলাটাকে একদম হাতে ধরে শিখিয়ে ছিলেন স্যার,বল রিসিভ করা আর চিপ তোলা শিখতে গিয়ে কম বকা আর মার খেতে হয়েছে স্যারের কাছে?
খেলাটাকে ঘিরে প্রচন্ড একটা প্যাশন কাজ করত ওর ভিতর,একদিন মাঠে খেলতে যেতে না পারলে ভিতরটা কেমন হাকপাক করত।তাই যে বার ডানপায়ে চোট লাগলো,খোঁড়াতে খোঁড়াতে বা পায়ে খেলাটা শিখে নিয়েছিল ও।স্কুল থেকে এসেই কোনক্রমে গোগ্রাসে গিলে ছুটত মাঠের দিকে,শনি-রবি ছুটির দিনগুলোতে তাড়াতাড়ি খেলতে যাওয়ার জন্য প্রায়শই ঘড়ির কাটা সকলের নজর এড়িয়ে সাড়ে তিনটে থেকে চারটে করে দিত, সাড়ে চারটের ভিতর মাঠে হাজিরা না পড়লেই নিচ থেকে বন্ধুদের ডাক পড়ে যেত “রাণা,এই রাণা,আজ খেলতে আসবি না?” পাশ শুয়ে শুয়ে মা রাগত স্বরে বলতেন “নাও,তোমার ডাক পড়ে গেছে,ছোট এবার,তোরা পারিস ও বটে, এই চাঁদি ফাটা গরমে ফুটবল”।কিন্তু মা কোনও দিন ওকে খেলতে যেতে মানা করেন নি বরঞ্চ মার প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছিল রানার খেলাধুলোর প্রতি।স্কুল লাইফ পর্যন্ত মা ই সংসারের খরচ বাচিয়ে ছেলের ক্লাবের মাইনে, ফুটবল, বুট, খেলার জার্সি ইত্যাদি সরঞ্জাম কেনার টাকা জুগিয়ে গেছেন।মোহনবাগানের কট্টর সামর্থক হয়েও বাবা ছিলেন অনিমেষের ফুটবল খেলার তীব্র বিরোধী।খেলা নিয়ে বাপ-ছেলের ঝামেলায় মা বরাবর ছেলের পক্ষেই কথা বলেছেন।
মাঠে আসলে মনটা খারাপ হয়ে যায় রানার।এক সময়ে যে কালচার মাঠটা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানান বয়সী ক্রীড়াপ্রেমী মানুষের কোলাহলে মুখরিত হত,ফুটবলের দুমদাম পাঞ্চ আর ক্রিকেটের ছক্কা হাকানো সটের দৌলতে মাঠের গা ঘেষা বাড়িগুলোর দরজা জানালার কাঁচ বদলাতে হত নিয়মিত,সারা বছর জুড়ে ফুটবল-ক্রিকেটের বড়ো বড়ো টুর্ণামেন্ট লেগেই থাকত যে মাঠটাতে,সেই মাঠ এখন দুর্গাপুজোর জমজমাট সাত দিন আর কিছু ছোটখাট অনুষ্ঠান,লোকাল স্কুলগুলির স্পোর্টস, আর শীতকালে বড়োজোর একটা আন্ডার আর্ম ক্রিকেট টুর্ণামেন্ট বাদ দিলে বছরের অধিকাংশ সময়ই ফাঁকা নিঃসঙ্গ অবস্থায় পড়ে থাকে,যেটা বড়ো ব্যথা দেয় ওকে।
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, কানের পাশে কয়েকটা মশা গুনগুন অনেকক্ষণ করছে ধরে। মাথার ওপরটা মশার ঝাঁকে কালো হয়ে আছে।বৃত্তাকারে ক্রমাগত পাঁক খেয়ে চলেছে মশা গুলো।খুব পরিচিত দৃশ্য। এরকম অনেক পরিচিত দৃশ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মাঠটার চারপাশে,এখনও পুরোনো দিন গুলোর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে।রবিদাদের পাঁচ ইঞ্চি পাঁচিলট আজও সদর্পে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, অগুন্তি ফুটবলের শট,ডিউজ বলের আঘাত ওর গা থেকে একটা ইঁটের টুকরোও খসাতে পারে নি। স্লিপের পাশে কদম গাছটা ডালপালা মেলে কতো বড়ো হয়ে গেছে এখন, বর্ষাকালে ফুলের ভারে নুয়ে পড়ে গাছটা।মাঠে আসলেই কিছু কিছু পুরোনো মুখ চোখের সামনে ভেসে ওঠে।কেডি দাদু,বুড়ির বাগানের সেই বুড়ি, বাপ্পার বাবা,এদের কথা ভীষণ মনে পড়ে রানার।
বাড়িতে বল পড়া নিয়ে,ভোর বেলা মাঠে খেলা নিয়ে কম ঝামেলা হয়েছে কেডি দাদুর সঙ্গে, আবার টুর্ণামেন্টের আগে নিজে থেকেই বড়ো অঙ্কের চাঁদা গুজে দিয়ে যেতেন ওদের হাতে, সঙ্গে ভালোবাসার শাষানি “ট্রফি যেন পাড়ার বাইরে না যায়।”বাপ্পার বাবা ছিলেন ওর খেলার ডাইহার্ট সাপোর্টার। এঁরা সকলেই আজ নক্ষত্রলোকে।বুজাদাদের বাড়ির রকটা ছিল খেলার শেষে হাত পা ধুয়ে এসে ওদের আড্ডার জায়গা,গরমকালে রানাদের ঠান্ডা জলের আবদার মেটাতে মেটাতে হাঁপিয়ে উঠতেন বুজাদার বৌ কিন্তু কোনও দিন রাগ করেন নি। আজ সেই রকটা আর নেই,পুরোনো বাড়িটা ভেঙে নতুন ফ্ল্যাট উঠে গেছে।বুজাদারা নতুন বাড়ি করেছেন পাড়াতেই। দাদা বৌদির সঙ্গে মাঝে মাঝেই দেখা হয়,কথায় কথায় ঠিক মাঠটার কথা ফিরে আসে।
প্রকৃতির নিয়ম মেনে শীত গ্রীষ্ম বর্ষা বছর বছর ফিরে আসে কিন্তু সেই খেলা পাগল ছেলের দল আর ফিরে আসে না।পড়াশোনার চাপে,বইয়ের ব্যাগের ভারে ক্লান্ত,বোকাবাক্স আর মুঠোফোনে মগ্ন ভবিষ্যত প্রজন্মকে রানারা এই মাঠমুখী করতে পারেনি, এই আক্ষেপটা ওদের মধ্যে ভীষণ ভাবে কাজ করে।কিন্তু আজও এই মাঠ রানা ও তার বন্ধুদের কাছে বড়ো ভালোবাসার স্থান,ওদের শৈশব-কৈশোরের অনেক সোনালী স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই মাঠকে ঘিরে।ফোনে বা হয়াটস্যাপে যখন সবার সঙ্গে কথা হয় ঘুরে ফিরে ঠিক চলে আসে এই মাঠটার কথা আর ওদের ফুটবল খেলার কথা। ফেলে আসা সুখের দিনগুলো আর ফিরে আসে না কিন্তু বর্তমানে দাড়িয়ে অতীতের স্মৃতিচারণে মনটা ভালো হয়ে যায়।প্রতি বছর পূজোর ছুটিতে সবাই যখন কোলকাতায় আসে,একদিন জমজমাট আড্ডা বসে মাঠটাতে।স্মৃতির হাত ধরে ফিরে আসে ফুটবল মাঠে রানা বুচাই জুটির গল্প,সূর্যের দুর্দান্ত গোলকিপিং আর দিব্যেন্দুর বার কাঁপানো পাঞ্চের গল্প,বর্ষার মাঠে রাজুর সেই ঘাস ধরানো ড্রিবলিং এর কথা। পাকুর কোলে মাথা রেখে গুনগুন করে গান ধরে সৌরভ
“বন্ধু চল বোদ্দুরে,
মন কেমন মাঠ জুড়ে
খেলব আজ ঐ ঘাসে,
তোর টিমে তোর পাশে।
বন্ধু চল,বলটা দে
রাখবো হাত,তোর কাঁধে
গল্পেরা ঐ ঘাসে
তোর টিমে,তোর পাশে।”
কলেজ লাইফে ওদের দলটা মোটামুটি মাঠের হোলটাইমার হয়ে গিয়েছিল।আর ছেলেরা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে যাবার সুবাদে বাবা মায়েরাও শাসন টা অনেকটা শিথিল করে দিয়েছিলেন।সারাদিন চলত শুধু খেলা আর খেলা।রানা,বুচাই,রাজু সূর্য্যরা ছিল ফুটবল অন্তপ্রাণ।শীতের মরসুমে সবাই যখন ক্রিকেটে মগ্ন,মাঠের এক কোণায় ফুটবল পায়ে কঠোর অনুশীলন চলত এই চার পাঁচ জনের।এইভাবে হেসে খেলে পার হয়ে যায় নব্বইয়ের দশকটা,শেষ হয়ে যায় কালচার মাঠের স্বর্ণযুগ।কারণ দু হাজার সালের শুরুর থেকে ছবিটা বদলাতে থাকে।বন্ধুদের সবাই তখন কলেজের গন্ডি পার করে গেছে।
বরাবরই যারা পড়াশোনায় ভালো ছিল তারা যাদবপুর, রাজাবাজার, প্রেসিডেন্সীতে উচ্চ শিক্ষার পাঠ নিতে আর গবেষণার কাজে মগ্ন হয়ে পড়ে,অনেক কে সংসারের চাপে ঢুকে পড়তে হয় চাকরীতে,কেউ কেউ আবার প্রেমিকার হাত ধরে ঢাকুরিয়া লেক আর ভিক্টোরিয়াতে সময় কাটাতে ব্যস্ত হয়ে যায়।
মাঠে ওদের সময় ও লোকবল দুটোই কমতে শুরু করে।কমতে থাকে খেলার হৈ হট্টগোল, কমতে থাকে বলের দুমদাম আওয়াজ।খেলাধুলা য় জমজমাট যে কালচার মাঠকে দেখে ওরা ছোট থেকে বড়ো হয়েছে সেটা বদলাতে শুরু করে আস্তে আস্তে।
তাও দু’হাজার সাত-আট সাল পর্যন্ত মোটামুটি প্রতি শনি রোববার করে ও,পাকু,বুবাই ছোটো আর বড়দের গ্রপের কজন কে জোগাড় করে মাঠে নামত।ততদিনে অবশ্য ওদের খেলার গ্রুপটা অনেকটাই ছোট করেছে।চাকরী সূত্রে বুচাই,রন,টুঙ্কারা কোলকাতার বাইরে চলে গেছে।সৌরভ,মিঠুন পারি দিয়েছে বিদেশে হায়ার স্টাডির উদ্দেশে।তবুও রানা আর কোলকাতা বাসী কজন মিলে ফুটবলের চর্চাটা চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু দু হাজার দশের পর সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। এনসিআর এর চাকরী সূত্রে বছর খানেকের জন্য বোম্বে চলে যেতে হয় রানাকে,অধিকাংশই বন্ধুও কর্মসূত্রে সংসার নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বা বিদেশে সেটেল্ড হয়ে পড়ে।কালচার মাঠে ওদের ফুটবল খেলার যবনিকা পতন হয়ে যায়।যে ফুটবল খেলতে ও এত ভালোবাসত,সেই খেলাটাই একদম মুছে যায় জীবন থেকে। প্রথম প্রথম খুব খারাপ লাগত,কষ্ট হত,মনে হত কি যেন বাদ চলে গেছে জীবনটা থেকে,কোথায় যেন একটা শূন্যতা।তারপর ধীরে ধীরে সময় যত এগিয়েছে মানিয়ে নিয়েছে রানা,যে ভাবে বাকী সবাই মানিয়ে নেয়।এটাই নিয়ম,এটাই জগতের রীতি। সময় বড় নিষ্ঠুর ,নিঃশব্দে কেড়ে নেই অনেক কিছু।বিশেষ করে জীবনের সুন্দর সোনালী বর্তমান কখন যে সময়ের হাত ধরে অতীতের খাতায় জমা পড়েছে মানুষ তা বুঝতেও পারে না।যখন বুঝতে পারে ততদিনে সে তার সেই সব দিনকে অতীতের খাতায় জমা দিয়ে এসেছে।