‘বর্তমান প্রজন্মের কাছে সময় কোথায় খবর নেওয়ার’ এই কথাটা সবচেয়ে বেশি শোনা যায় প্রবীণ মানুষদের কাছে। কিন্তু একথা সত্যিও প্রবাসী সন্তানদের কাছে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের কাছে থাকা হয়ে ওঠে না। তার ফলে তাঁরা ভোগেন একাকীত্বে আর নিরাপত্তাহীনতায়। এবার কলকাতা পুলিশের তরফে প্রবীণদের জন্য দেওয়া হল এক গুচ্ছ সতর্কবার্তা বা পরামর্শ। বেশ কয়েক বছর আগে দক্ষিণ কলকাতার এক বহুতল আবাসনে দীর্ঘদিনের পরিচারক বাড়ির বৃদ্ধা গৃহকর্ত্রীকে একা পেয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করে আলমারি থেকে সোনাদানা, টাকা এবং দামি জিনিসপত্র নিয়ে চম্পট দিয়েছিল। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে কলকাতা গোয়েন্দা পুলিশের হোমিসাইড শাখা গ্রেপ্তার করে বাড়ির পরিচারককে। এই শহরে এমন ঘটনার উদাহরণ অনেক। সংবাদপত্রের পাতায় নিত্যই এই খবর মেলে।
শহরের প্রবীণ নাগরিকদের সতর্ক করতে কলকাতা পুলিশ একটি প্রচার পুস্তিকার ব্যবস্থা করেছে। তাদের প্রচার পুস্তিকায় এই নিয়ে একগুচ্ছ সুপরামর্শও দিয়েছে। সেখানে পুলিশের তরফে প্রবীণ নাগরিকদের প্রস্তাব— (১) সদর দরজায় ম্যাজিক আই, নিরাপত্তা চেন এবং স্বয়ংক্রিয় তালা যেন লাগানো হয়। সম্ভব হলে যেন বাড়িতে একটি কুকুর রাখা হয়। (২) দরজা খোলার আগে যেন ম্যাজিক আই দিয়ে অবশ্যই দেখে নেওয়া হয়। (৩) সকাল ও সন্ধ্যায় ভ্রমণের সময় বৃদ্ধ বৃদ্ধারা যেন কয়েকজন মিলে একত্রে চলাফেরা করেন। (৪) টেলিফোনে যেন ‘সিএলআই’ ব্যবস্থা রাখা হয়। (৫) গুরুত্বপূর্ণ ফোন নম্বরগুলি যেন হাতের কাছে রাখা হয়। (৬) বাড়ির আশপাশে যদি কোনও সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে দেখা যায়, তাহলে যেন অতি অবশ্যই স্থানীয় থানা ও প্রতিবেশীদের নজরে আনা হয়। (৭) ঘুমনোর সময় দরজা যেন ভিতর থেকে বন্ধ রাখা হয়। (৮) যথাযথ পুলিসি পরীক্ষার পর যেন বাড়ির পরিচারক, ড্রাইভার, নিরাপত্তারক্ষী এবং ভাড়াটিয়াকে রাখা হয়। (৯) পরিচিত অথবা আবাসন সমিতির অনুমোদিত কলের মিস্ত্রি, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি, ছুতোর সহ অন্যান্য শ্রমিকদেরই যেন কাজে লাগানো হয়। এ বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ডঃ নীরদরঞ্জন ঘোষের মন্তব্য, “কলকাতা পুলিসের তরফে যে সর্তকবার্তা দেওয়া হয়েছে, তা যদি প্রবীণ নাগরিকরা মেনে চলেন, তাহলে তাঁরা অনেকাংশেই উপকৃত হবেন”।
এছাড়াও বাড়িতে মূল্যবান সামগ্রী যেন বেশি রাখা না হয়। অপরিচিত ব্যক্তি, ক্যুরিয়ারের লোক, হকার প্রমুখদের বাড়ির ভিতরে যেন প্রবেশ করতে না দেওয়া হয়। কোনও অপরিচিতের কাছ থেকে কোনও খাবার গ্রহণ না করা হয় সেবিষ্যে সতর্ক থাকার কথা এই সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে।