পুলওয়ামার জঙ্গী হামলা ও তার পরবর্তী সময়ে যখন গোটা দেশজুড়েই উঠছে যুদ্ধের জিগিড়, ঠিক সেই সময়ই ভোটযুদ্ধের কথা ঘোষণা করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। রবিবারই ভোটের বাদ্যি বাজিয়ে দেশের লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘন্ট প্রকাশ করেছে তারা। আর কমিশনের ঘোষণা শেষ হতেই প্রচারের ঢাকেও কাঠি ফেলে দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলিও।
বরাবরই প্রচারে কালবিলম্বের পক্ষপাতী তৃণমূল। তাই এবারও থেমে নেই দলের নেতা-কর্মীরা। প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়নি এখনও। তাই দেওয়ালে দেওয়ালে প্রার্থীর নামের অংশ ফাঁকা রেখে দলীয় প্রতীক এঁকেই শুরু হয়েছে ভোট প্রচার। এক্ষেত্রে অবশ্য সংগঠনিকস্তরেই সীমাবদ্ধ রয়েছে বিরোধী হাত-হাতুড়ি-পদ্ম শিবিরের যাবতীয় প্রচার কৌশল। প্রায় সব রাজনৈতিক দলের লড়াই এবার কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধেই।
নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ১২ মে ষষ্ঠ দফায় কাঁথি ও তমলুক লোকসভা আসনে ভোট গ্রহণ হবে। স্বাভাবিকভাবে কাঁথি-তমলুকেও বিজেপিকেই মূল প্রতিপক্ষ ধরে এগোচ্ছে তৃণমূল। লড়াই শুরু প্রচার থেকেই৷ কত সহজে মানুষের কাছে, নিজেদের কথা পৌঁছবে, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা৷
প্রসঙ্গত, নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনে ভর করেই বাংলার মাটিতে ভীত রচনা হয়েছিল তৃণমূল সরকারের। পরিবর্তনের ধাত্রীভূমি সেই নন্দীগ্রামের মাটি স্পর্শ করেই কাঁথি ও তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে চাইছে শাসক দল তৃণমূল। ২০০৭-এর ১৪ মার্চ জমি আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত শেখ ইমদাদুল, সুপ্রিয়া জানা-সহ ১৪ জনের রক্তে লেখা হয়েছিল নন্দীগ্রামের দিনলিপি।
সামনেই ১৪ মার্চ। আর ওই দিনই নন্দীগ্রাম থেকে প্রচারে ঝাঁপাবে তৃণমূল। বিরোধীরা যাতে তাল ঠুকতে না পারে সেজন্য সোনাচুড়ার ভাঙাবেড়ায় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে ওইদিন সকালে ভূমিরক্ষা কমিটির ব্যানারে অনুষ্ঠিত হবে শহীদ স্মরণের অনুষ্ঠান। আর বিকেলে নন্দীগ্রাম কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে তৃণমূলের রাজনৈতিক সমাবেশ।
নন্দীগ্রাম ১ ও ২ ব্লক তৃণমূল আয়োজিত এই সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন জমি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা। এই সভায় ৩০ হাজার মানুষকে জমায়েত করার টার্গেট নিয়েছে শাসক দল। সভাকে ঘিরে ইতিমধ্যে জোরদার প্রচারও শুরু হয়ে গেছে। জেলার নেতারা বলছেন, ‘আমরা বছরভরই কাজের মধ্য দিয়ে মানুষের পাশে আছি। তবু তাঁদের কাছে আরও একবার পৌঁছতে হবে। স্বাভাবিকভাবে প্রচারে কোনও খামতি নেই আমাদের। দেওয়াল লেখার কাজও শুরু হয়ে গেছে। বুথে বুথে কর্মীরা নেমে পড়েছেন জনসংযোগে।’
কয়েক মাস আগে থেকেই পূর্ব মেদিনীপুরে লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই প্রতিটি ব্লকে একটি করে সভা করে প্রচার শুরু হয়েছিল। পরীক্ষার জন্যই প্রকাশ্য জনসভা করা হয়নি। ঘেরা জায়গায় বুথ ভিত্তিক কর্মিসম্মেলন করে নিজেদের সংগঠনকে আরও মজবুত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তাই এবার জনসভায় ঝাঁপাচ্ছে তৃণমূল।
রাজনৈতিক দলগুলির পাশাপাশি প্রশাসনের তরফেও জেলার দুই আসনে সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন করতে কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী সমস্ত রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সোমবার সাংবাদিক সম্মেলন করে এই কথা বলেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পার্থ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘ভোট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে জেলাতে আদর্শ আচরণবিধি চালু হয়েছে। ভোটে প্রচার, খরচ সংক্রান্ত বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনা করে কমিশনের সুস্পষ্ট নির্দেশিকা জানিয়ে দেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন যে, ‘ভোট পূর্ববর্তী সময় বা ভোট চলাকালীন যে কোনও বিষয়ে জানার পাশাপাশি অভিযোগ জানানো বা সাজেশন দেওয়ার জন্য ১৯৫০ টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করতে পারবেন জেলাবাসী। এছাড়া সি-ভিজিল অ্যাপেও যে কোনও অভিযোগ জমা করা যাবে। এছাড়া ন্যাশানাল গ্রিভেন্স সার্ভিস পোর্টালে অভিযোগ করার পাশাপাশি কেউ চিঠির মাধ্যমেও অভিযোগ জানাতে পারেন।’
প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ১৬ এপ্রিল থেকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কাজ শুরু হবে। ২৩ এপ্রিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। জমা পড়া মনোনয়নপত্রের স্ক্রুটিনি হবে ২৪ এপ্রিল। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৬ এপ্রিল। এবার জেলায় মোট ভোটার রয়েছে ৩৮ লক্ষ ৮৮ হাজার ৯৬০ জন। পুরুষ ভোটার ২০ লক্ষ ৮ হাজার ৯০২ জন, মহিলা ভোটার ১৮ লক্ষ ৭৩ হাজার ৯৭৯ জন, তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৬৭ জন। এছাড়া সার্ভিস ভোটার রয়েছেন ৬০১২ জন।