স্বাধীনতার পরে তো বটেই, এমনকী ৩৪ বছরের বাম শাসনকালে নন্দীগ্রামকে বারবার ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করা হলেও, পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহের বিষয়ে কোনও সদর্থক পদক্ষেপ করা হয়নি। এ রাজ্যে মা-মাটি-মানুষের সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই নোনা জলবেষ্টিত এই ভূখণ্ডে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করার বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ জল প্রকল্প সংশ্লিষ্ট পাম্পিং স্টেশনের জমি মেলা নিয়ে প্রথমে কিছুটা জটিলতা থাকলেও, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে ও প্রচেষ্টায় স্থানীয় বাসিন্দারাই স্বেচ্ছায় জমি দান করে মিটিয়ে দিয়েছেন সেই সমস্যা। পাইপবাহিত পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের জন্য মমতার সেই প্রতিশ্রুতি গত ৮ ফেব্রুয়ারি হওয়া টেন্ডারের মধ্যে দিয়ে এখন বাস্তবায়নের পথে। মমতা ফের স্পষ্ট করে দিলেন নন্দীগ্রামের প্রতি তাঁর আবেগ ভালবাসার দিকটাও। বুধবার হাওড়া থেকে নন্দীগ্রাম ১ ও ২ এবং নন্দকুমার ও চণ্ডীপুর ব্লকের নলবাহিত পানীয় জলসরবারহ প্রকল্পের শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার সঙ্গে খুশি নন্দীগ্রামও।
জলপ্রকল্প চালু হলে এই পদ্ধতিতে ১৩ লক্ষ মানুষের জলসঙ্কট মিটবে। প্রকল্প নির্মাণে ব্যয় হবে ১৪৮৮.৫ কোটি টাকা। ৩ বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করবে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। পানীয় জলের জন্য নন্দীগ্রাম–সহ সংলগ্ন ৪ ব্লকের বহু বাসিন্দাকে অগভীর টিউবয়েলের জলের ওপর নির্ভর করতে হয়। গ্রীষ্মে ভূগর্ভস্থ জলে টান পড়লে বাসিন্দাদের পানীয় জল সংগ্রহ করতে নাজেহাল হতে হয়। গ্রীষ্মকালে প্রায় প্রতিদিনই এমন সমস্যায় পড়তে হয় এই অঞ্চলের মানুষকে। পূর্বতন বাম সরকারেরও এই সমস্যার কথা অজানা ছিল না। ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকলেও বাম সরকার এ ব্যাপারে তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করেনি বলে স্থানীয়দের অনেকেই বলছেন। এ ছাড়া উন্নয়নের জন্যই এলাকায় দিনদিন বহুতলের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ঘনবসতি ও বহুতল এলাকায় ভূগর্ভস্থ জলের সমস্যা প্রকট হচ্ছিল। এ ক্ষেত্রে নলবাহিত জলপ্রকল্প চালু হলে সেই সমস্যাও চিরতরে মিটে যাবে বলে মনে করেন এলাকার মানুষ।
বাংলার সার্বিক উন্নতি চান মুখ্যমন্ত্রী। তাই রাজ্যের তরফে উন্নয়নমূলক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে সাধারণ মানুষের উপকারের কথা ভেবেই। রাজ্যের মানুষও তা জানেন। মমতার সরকার সাধারণ মানুষের সুবিধা–অসুবিধাকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেয়। খুব তাড়াতাড়িই নন্দীগ্রাম–সহ বাকি ৩ ব্লক এলাকার বাসিন্দাদের জল কষ্ট লাঘব হবে। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে জলপ্রকল্প তৈরি হলেই এলাকাবাসীকে সেই কষ্ট থেকে রেহাই দিতে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাবে পানীয় জল। গেঁওখালির রূপনারায়ণ নদী থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল এনে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের সাহায্যে পরিশুদ্ধ করা হবে। তারপর সেই জল প্রতিটি ব্লকের জলাধার থেকে পাইপলাইনের সাহায্যে পৌঁছে দেওয়া হবে বাড়ি বাড়ি।
অধিকার রক্ষা আন্দোলনের পীঠস্থান নন্দীগ্রামের মানুষ দু’হাত তুলে সমর্থন জুগিয়েছিল জোড়াফুল শিবিরকে। চারদিকে নোনা জল বেষ্টিত নন্দীগ্রামের বাসিন্দাদের জন্য পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কৃতজ্ঞ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। কথা রেখেছিল নন্দীগ্রাম, কথা রাখছেন মমতা৷