পুলওয়ামা জঙ্গী হামলার মূল চক্রী তথা জঙ্গী সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজহার কি আদৌ মৃত? নাকি এখনও জীবিত? রবিবার বিকেলে যখন এই নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে, দাবি ও পাল্টা দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়া ছয়লাপ, ঠিক তখনই জইশ-ই-মহম্মদ-এর তরফে জানানো হয়, তাদের শীর্ষ নেতা জীবিত এবং সুস্থই রয়েছে। নতুন একটি খবরে, সেই সম্ভাবনা আরও জোরদার হল। জানা গেছে, রাওয়ালপিন্ডির সেনা হাসপাতাল থেকে তড়িঘড়ি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মাসুদকে। গোয়েন্দা সূত্র উদ্ধৃত করে এই দাবি করেছে একাধিক সংবাদ মাধ্যমও। ওই সূত্রের দাবি, রবিবার রাতেই মাসুদকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে গোঠ ঘানি এলাকায় জইশের একটি জঙ্গী ঘাঁটিতে।
প্রসঙ্গত, পুলওয়ামায় জঙ্গী হামলার পরই ঘটনার দায় স্বীকার করে নেয় জইশ। তাদের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, সিআরপি কনভয়ে আত্মঘাতী জঙ্গী হানার মাস্টারমাইন্ড জইশ-ই-মহম্মদের শীর্ষনেতা মাসুদ আজহারই। আর তারপরই জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরে রাওয়ালপিন্ডিতে পাক সেনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ওই জঙ্গী নেতা। কিন্তু গতকাল হঠাতই জল্পনা ছড়ায় মাসুদের মৃত্যু হয়েছে। কীভাবে মৃত্যু, তা নিয়েও একাধিক সম্ভাবনা উঠে আসে। কারও দাবি, কিডনি বিকল হয়েই মৃত্যু হয়েছে জইশ প্রধানের। কোনও সংবাদ মাধ্যম আবার দাবি করে, ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারতের বিমান হামলায় মৃত্যু হয়েছে তার। এরপরই জইশ জানিয়ে দেয়, ‘ভারতীয় বায়ুসেনার হামলায় জইশ জঙ্গিদের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।’
তারপরই রাতের দিকে সেই জল্পনা অন্য দিকে মোড় নেয়। গোয়েন্দা সূত্র উদ্ধৃত করে একাধিক সংবাদ মাধ্যম দাবি করে, রবিবার রাত ৭.৩০ নাগাদ রাওয়ালপিন্ডির সেনা হাসপাতাল থেকে জইশ জঙ্গি নেতাকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাকে রাখা হয়েছে গোঠ ঘানি এলাকার একটি জইশ জঙ্গীদের ঘাঁটিতে। সংবাদ মাধ্যমে উদ্ধৃত ওই গোয়েন্দা সূত্রের আরও দাবি, পুলওয়ামায় জঙ্গি হানার পর পাকিস্তানের স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (এসপিজি)-র অন্তত দশ জন কমান্ডো দিয়ে জইশ প্রধানের নিরাপত্তা সুরক্ষিত করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, পুলওয়ামা হামলার পর আন্তর্জার্তিক মহলে ব্যাপক চাপে পড়েছে পাকিস্তান। সেনা হাসপাতালে জঙ্গী নেতার চিকিৎসা বা আশ্রয় দেওয়ার অর্থ যে সরাসরি সন্ত্রাসে মদত দেওয়া, সেটা বোঝার জন্য কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই। আবার মাসুদ আজহার যে পাকিস্তানেই আছে, তাতে সিলমোহর দিয়েছেন খোদ পাক বিদেশমন্ত্রী। ফলে আন্তর্জাতিক মহলে চাপ বাড়ছিল, এবং সেই চাপেই পাক সরকার শেষ পর্যন্ত মাসুদ আজহারকে সেনা হাসপাতাল থেকে সরানোর নির্দেশ দিতে পারে। এই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না কূটনৈতিকরা।
উল্লেখ্য, মাসুদকে সরানোর পর জইশ জঙ্গীদের তরফে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, আমেরিকায় ৯/১১ হামলার পর মুশারফ যে ভাবে আন্তর্জাতিক চাপের কাছে মাথা নত করেছিল, ইমরান খানও সেই নীতি অনুসরণ করছেন। জইশের বক্তব্য, ‘ভারতীয় বায়ু সেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে মুক্তি দিয়েছেন ইমরান। এখন মাদ্রাসা, মসজিদের মতো প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করছে সরকার। তারা শত্রুর বিরুদ্ধে নমনীয়, কিন্তু নিজেদের নাগরিকদের(জইশ) প্রতি কঠোর অবস্থান নিয়েছে।’ পাশাপাশি যে কোনও সময় স্থানান্তরের জন্য জঙ্গী সদস্যদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে ওই বিবৃতিতে। ফলে জইশের বিবৃতি মাসুদকে হাসপাতাল থেকে সরানোর দিকেই ইঙ্গিত করছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।