গত শনিবার উত্তরপ্রদেশের ভাদোহীর রোটাহা গ্রামে কার্পেট কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের জেরে মারা গেছিলেন মালদার ৯ শ্রমিক। নিজের বাড়ি, পরিবার-পরিজন ছেড়ে যারা জীবিকার সন্ধানে পাড়ি দেন ভিনরাজ্যে, তাঁদের এই অকাল মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ সকলে। জেলার কার্পেট শিল্পীদের যাতে আর উত্তরপ্রদেশে কাজ করতে যেতে না হয়, তার ব্যবস্থা করছে রাজ্য সরকার। মালদায় তৈরি হবে কার্পেট শিল্পের ক্লাস্টার।
বুধবার টানা বৃষ্টির মধ্যে মেডিক্যাল কলেজের মর্গ থেকে বেলা ১২টা নাগাদ মৃতদেহগুলি এনায়েৎপুরে পৌঁছয়। জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল মৃতদের পরিবারকে সরকারি সহায়তায় বাড়ি তৈরি করে দেওয়া-সহ বেশ কিছু আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করলেন। মাঠ উপচে পড়া ভিড়ের মাঝে এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র জেলাশাসকের কাছে অনুরোধ করেন, এই এলাকায় যদি সরকারি উদ্যোগে একটা কার্পেট কারখানা তৈরি করা যায়, তা দেখতে। প্রয়োজনীয় জমি জোগাড় করে দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। মৃতদেহ গ্রামে পৌঁছনোর পর শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের সময় কার্পেট ক্লাস্টারের কথা ঘোষণা করেন জেলাশাসক।
এ দিন জেলাশাসকের ঘোষণা শুনে এনায়েৎপুর মোমিনপাড়ায় তাই শোকের মাঝেও স্বস্তি । প্রৌঢ় মতিউল মোমিন প্রায় ৪০ বছর ধরে কার্পেটের কাজ করছেন। আগে ভাদোহীতে কাজ করতেন। এখন বাড়িতেই চারটা মেশিন বসিয়েছেন। বললেন, “এখানে আমরা শুধু কার্পেট বুনি। কিন্তু এর বাইরেও কার্পেটের প্রচুর কাজ। সেগুলি সবটাই যদি জেলাতেই করা যায়, তাহলে তো বিরাট ব্যাপার হবে। কত মানুষের কাজের ব্যবস্থা হবে”। সেনাউল মোমিন বছর ১৫ ধরে ভাদোহীতে কার্পেটের কাজ করেন। শনিবারের বিস্ফোরণে দুই ভাইপো ও এক খুড়তুতো ভাইকে হারিয়েছেন।
জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, “মালদার কার্পেট শিল্প গড়ে তোলার বিষয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী খুব আগ্রহী। ইংরেজবাজার ব্লকের সাট্টারি গ্রামপঞ্চায়েতে এলাকার রামচন্দ্রপুরে জমিও চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে। জেলা পরিষদ টেন্ডার করে ফেলেছে। এক কোটি টাকা খরচ করে সীমানা ঘেরা হবে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে ১৪ কোটি টাকা খরচ করা হবে কারখানার জন্য। যেখানে এক ছাতার তলায় কার্পেট শিল্পের নানা পর্যায়ের কাজ হবে”।
মালদা জেলায় কেবল মাত্র এনায়েৎপুরেই কয়েক হাজার কার্পেট শিল্পী রয়েছেন। মূলত, উত্তরপ্রদেশের ভাদোহিতে গিয়ে কাজ শিখে এখন তাঁরা দক্ষ শিল্পী। বেশ কিছু বাড়িতে কার্পেট তৈরিও হয়। কিন্তু তৈরির পর বাজারজাত করার আগে আরও কিছু কাজ থাকে। এছাড়াও মূল সমস্যা পুঁজি। তাই এখানে যাঁরা কার্পেট তৈরি করেন, তাঁদের কাঁচা মাল থেকে শুরু করে বিক্রির ব্যবস্থা— সবটাই শেষ পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশের মহাজনদের উপরই নির্ভর করতে হয়। মালদায় কার্পেট ক্লাস্টার তৈরি হলে তাই শুধু কয়েক হাজার মানুষের ভিন্রাজ্যে শ্রমিক হওয়া থেকে রেহাই মিলবে তাই নয়, জেলার অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়ও গঠনমূলক প্রভাব পড়বে।