চলচ্চিত্রের পর্দায় শুভাশিস মুখোপাধ্যায় মানেই অফুরন্ত হাসি-মজা৷ নিঁখুত কমিক টাইমিং-এ তিনি চরিত্রকে করে তোলেন প্রাণবন্ত৷ তবে হাসির চরিত্রের বাইরে গিয়ে তিনি যে জাত অভিনেতা তার প্রমাণ দিয়েছিল ‘হারবার্ট’৷ হারবার্ট-এ তাঁর অভিনয়ে মজেছিল সিনেমাপ্রেমীরা৷ এবার তিনি পর্দায় আসতে চলেছেন সম্পূর্ণ নতুন ভাবে৷ কিছুদিন পরেই মুক্তি পাচ্ছে ‘মহালয়া’। যে ছবিতে তাঁকে দেখা যাবে প্রবাদপ্রতিম বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের ভূমিকায়।
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ মানেই বাঙালির সাবেক বাঙালিয়ানাকে স্মরণ করিয়ে দেয়৷ তাই এই চরিত্রে অভিনয় বেশ কঠিন ছিল বলেই জানিয়েছেন তিনি৷ তিনি বলেছেন, পুরোটাই রিসার্চ ওয়ার্ক। ১৯৭৬ সালে আকাশবাণী ঠিক করে, মহালয়ায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণর বদলে উত্তমকুমারের স্তোস্ত্রপাঠ সম্প্রচার করবে। কিন্তু বাঙালি শ্রোতা সেটা নাকচ করেন। একেবারে হুলস্থুল পড়ে যায়। সেই প্রেক্ষাপটেই ছবিটা। সুতরাং রিসার্চ ছাড়া উপায় নেই। ওঁকে যারা দেখেছেন, তেমন একজন জগন্নাথদা৷ উনি তো বীরেন্দ্রকৃষ্ণ কীভাবে হাঁটতেন, সেটা হেঁটে দেখালেন! সঙ্গে আকাশবাণীর বর্তমান নাট্যপ্রযোজক সিদ্ধার্থ মাইতির সাহায্যে আকাশবাণীর আর্কাইভে গিয়ে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের করা নাটক, কথাবার্তার রেকর্ডিং শুনলাম। এরপর আমার মনে তিনি যেভাবে আছেন, সেটার রূপ দিলাম। দুটো মিলিয়ে নিজের মতো করে ওঁকে রূপায়ণের চেষ্টা করেছি। তবে আসল রিসার্চটা পরিচালক সৌমিক সেনের। ওঁর স্ক্রিপ্ট এবং বিশ্লেষণই আমাকে এই চরিত্রটা করতে অনেকটা সাহায্য করেছে। আর ছবিটা দিনের আলোই দেখত না যদি প্রযোজক প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় না থাকতেন”৷
টলিউড তাঁকে অনেক কিছু দিয়েছে, তবে আজও থেকে গেছে কিছু আক্ষেপ৷ শুভাশিস বলেছেন,”শিল্পান্তর’ বা ‘হারবার্ট’–এর পরেও কেন পরিচালক এবং প্রযোজকরা আমাকে মূল চরিত্রের জন্য ভাবলেন না, সেটা আমার কাছেও একটা রহস্য। এটাও মনে হয়,‘হারবার্ট’ ছবিটা সময়ের থেকে এগিয়ে ছিল। সেই সময়ে হাতেগোনা তিন–চারজন পরিচালক এই ধরণের ছবি করতেন। তাছাড়া সবই তো ছিল প্রেম, সাংসারিক বা পৌরাণিক গল্প। সুতরাং ওই সময়ে ‘হারবার্ট’–এর মতো ছবি প্রায় হতই না। হতে পারে এই ধরণের ছবির ভাবনা ছিল না বলে আমার ডাক পড়েনি। ‘হারবার্ট’–এর পর ‘মহালয়া’ আমার অন্যতম ব্রেক। যদি অবশ্য আমার অভিনয় দর্শকের ভাল লাগে। তবে ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘গোরস্থানে সাবধান’, ‘মিসেস সেন’, ‘দত্ত ভার্সেস দত্ত’–তে অন্যরকম অভিনয় করেছি”।
তবে পুরস্কারের ঝুলি কিন্তু শুভাশিসের ভর্তি৷ বাংলার যত পুরস্কার, তার প্রায় সবই তাঁর আছে। ভিনরাজ্যের পুরস্কারও পেয়েছি। তাছাড়া একজন অভিনেতার সবথেকে বড় যে পুরস্কার, দর্শকের ভালবাসা, সেটাই আজীবন পেয়েছেন তিনি৷