সময় কখনো থেমে থাকেনা। জীবন যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি কিছু যদি আঘাত করে তা হল একাকীত্ব। বৃদ্ধ বয়েসে তাই সবচেয়ে বেশি দরকার হয়ে পরে একটা হাত। কিন্তু সন্তানেরা বিদেশে, তাই বৃদ্ধ বাবা-মাকে একাই থাকতে হয়। শরীর অচল হয়ে পড়তে থাকলে কাউকেই কাছে পান না তাঁরা। শীত পড়তেই হাঁটাচলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয় বছর পঁয়ষট্টির মহিলার। হাঁটুর যন্ত্রণায় পাশের ঘরেও যেতে পারেন না। অস্থি চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খেয়ে সাময়িক আরাম পেলেও কয়েক দিনের মধ্যেই ফের কাবু হয়ে যান।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ৬০ বছরের পরে সব অঙ্গে ক্ষয় শুরু হয়। ফলে একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। কোনও একটি বিশেষ শাখার চিকিৎসকের পক্ষে যা চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। অথচ প্রবীণদের এই সামগ্রিক চিকিৎসা যে শাখায় হয়, সেই জেরেন্টোলজি বিভাগের পরিষেবা চালু করছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ উদ্যোগে ওই হাসপাতালের ভিতরে নতুন বহুতল তৈরি হয়েছে। সেখানেই চালু হবে ৩০ শয্যার জেরেন্টোলজি বিভাগ। হাসপাতাল সূত্রের খবর, প্রতি শনিবার জেরেন্টোলজির বহির্বিভাগ চালু হয়েছে সেখানে।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘সব পক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রশিক্ষিত কর্মীর বিষয় স্বাস্থ্য ভবনকে জানানো হয়েছে। পুরসভা ও সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমতি পাওয়া গেলে পরিষেবা চালু হবে। আশা করি, চলতি বছরেই এই পরিষেবা শুরু হবে।’’
জেরেন্টোলজি বহির্বিভাগের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক রাজা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “প্রবীণদের জন্য আলাদা বিভাগ হলে সামগ্রিক পরিষেবা দেওয়া যাবে। ওঁদের ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। আলাদা বিভাগ হলে গুরুত্ব দেওয়া যাবে”। হাসপাতালের এক কর্তা জানান, “ভর্তি থাকা রোগীকে প্রয়োজনে একাধিক শাখার চিকিৎসকেরা দেখতে পারবেন। বয়স্কদের মধ্যে অনেক সময়ে মানসিক অবসাদ তৈরি হয়। সে কারণেও নানা শারীরিক সমস্যা হয়। যার ধারাবাহিক চিকিৎসা প্রয়োজন। তাই রোগীদের ভর্তি করিয়ে তাঁদের পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা করা হবে। তাছাড়া বয়স্কদের নানা ধরনের থেরাপি ও প্যালিয়েটিভ কেয়ারের প্রয়োজন হয়। এ জন্য প্রশিক্ষিত কর্মী রাখারও পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য ভবনে জানানো হয়েছে”।